পোস্টাল ব্যালটে ভোট দিতে পারবেন না বেসরকারি চাকরিজীবীরা

চাকরির জন্য নিজ এলাকার বাইরে থাকা ভোটারদের বড় একটি অংশ আগামী ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন না। ইসির ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপের সীমাবদ্ধতার কারণে তারা এ সুযোগ বঞ্চিত হবেন। এর মধ্যে রয়েছেন—সাংবাদিক, বেসরকারি চাকরিজীবী ও কাজের প্রয়োজনে নিজ এলাকার বাইরে থাকা ভোটার। অপরদিকে, দেশের তিন শ্রেণির নাগরিকরা পোস্টাল ব্যালটে ভোট দিতে পারবেন। তারা হলেন—ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা, বন্দি এবং সমন্বিত বাজেট এবং হিসাবরক্ষণ পদ্ধতি (আইবাস) বেতনভুক্ত সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবী। আর পোস্টাল ব্যালটে ৬৯টি দেশে থাকা বাংলাদেশি নাগরিকরা এবার প্রথমবারের মতো ভোট দিতে পারবেন।

নির্বাচন কমিশন ও ডাক বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপ ১৮ নভেম্বর উদ্বোধন করা হবে। এর মাধ্যমে যারা ভোট দিতে চান তাদের নিবন্ধন করতে হবে। ইতোমধ্যে অ্যাপের ট্রায়াল সম্পন্ন হয়েছে। শতাধিক মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করে পরীক্ষামূলক যাচাই চালায় ইসি। এতে ইতিবাচক ফল পেয়েছে সংস্থাটি।

ইসি সংশ্লিষ্টরা জানান, অ্যাপ উন্মুক্ত হলেও সবাই একসঙ্গে নিবন্ধন করতে পারবেন না। মিশনগুলোকে কয়েক ধাপে ভাগ করে নিবন্ধন করার সুযোগ তৈরি করে দেবে ইসি। নিবন্ধনের জন্য সময় রাখা হতে পারে সর্বমোট ২১ দিন। এ সময়ের মধ্যে নিবন্ধন সম্পন্ন না হলে পরবর্তী সময়ে সময় বাড়িয়ে বাদ পড়াদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে। দূরত্ব ও যোগাযোগ বিবেচনায় পোস্টাল ব্যালট আনা-নেওয়ায় সর্বোচ্চ ২৮ দিন সময় রাখা হয়েছে।

অ্যাপে নিবন্ধন প্রক্রিয়া

ভোটারদের প্রথমে নিবন্ধন করতে হবে। এরপর যে ঠিকানায় ব্যালট পেতে চান তার তথ্য দিতে হবে। নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজ করার পাশাপাশি সঠিক ভোটার নিশ্চিতে ভোটার অবস্থান, প্রাণবন্ততা (লাইভনেস) যাচাই, মোবাইল নম্বরে ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড (ওটিপি) যাচাই করা হবে। এর বাইরে নিবন্ধন প্রক্রিয়া থেকে ভোটদান পর্যন্ত কোনো বিষয়ে পরামর্শ প্রয়োজন হলে সরাসরি কল সেন্টারে যোগাযোগ করে তাৎক্ষণিক সমাধান নিতে পারবেন নিবন্ধিত ব্যক্তি। ইসির হটলাইন নম্বর-১০৫।

কারা ভোট দিতে পারবেন

পোস্টাল ব্যালটে ভোট দিতে পারবেন—প্রবাসী বাংলাদেশি, দেশের অভ্যন্তরে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, নির্বাচনি দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারী ও কারাবন্দিরা।

৬৯ দেশে ধাপে ধাপে নিবন্ধন

প্রবাসী বাংলাদেশিদের মোট ২১ থেকে ২৫ দিনের মধ্যে নিবন্ধনের আওতায় আনতে চায় ইসি। এজন্য চার থেকে পাঁচ ধাপে নিবন্ধন হবে। তবে, নিবন্ধন অসম্পূর্ণ থাকলে আরো তিন থেকে চারদিন সময় বাড়িয়ে আগ্রহী সব প্রবাসী ভোটারকে ভোট দেওয়ার সুযোগ দেবে ইসি।

অন্তত ৫০ লাখ ভোট সংগ্রহের লক্ষ্য

পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে আগামী সংসদ নির্বাচনে অন্তত ৫০ লাখ ভোট সংগ্রহ করতে চায় ইসি। তবে কমিশনের ধারণা, পোস্টাল ব্যালটে ১০ লাখের বেশি ভোট পড়বে না।

জানা যায়, ব্যালটে রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর নাম ছাড়া প্রতীক থাকবে। পোস্টাল ব্যালট ভোটে কাউকে পছন্দ না করলে ‘না’ ভোট দিতে পারবে ভোটার।

নিবন্ধিতদের কাছে যাবে তিন ধরনের খাম

অ্যাপে নিবন্ধিতদের কাছে তিনটি করে খাম পাঠানো হবে। এর মধ্যে রয়েছে— বহির্গামী খাম, রিটার্নিং অফিসারের ঠিকানাসংবলিত ফেরত খাম ও পোস্টাল ব্যালট পেপার রাখার জন্য ছোট খাম। তবে, ফেরত খাম পৌঁছাতে বিলম্ব হলে তা গণনাযোগ্য হবে না।

ভোটার তালিকানুযায়ী নিবন্ধন

জাতীয় পরিচয়পত্রধারী ১৮ বছরের নিচে কেউ পোস্টাল ভোট বিডি অ্যাপে নিবন্ধন করতে পারবেন না। শুধু যাদের নাম ভোটার তালিকায় রয়েছে তারাই নিবন্ধন ও ভোট দিতে পারবেন।

ইসির চ্যালেঞ্জ সাইবার হামলা ঠেকানো

নিবন্ধন অ্যাপ চালু হলে তা হ্যাকারদের হামলার মুখে পড়তে পারে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ইসি সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেবে। অ্যাপের সুরক্ষায় অ্যান্টিডিডস ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। যাকে সর্বোচ্চ সুরক্ষাসংবলিত নিরাপত্তা ব্যবস্থা বলছে ইসি।

যা বলছে কর্তৃপক্ষ

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এনআইডি উইংয়ের ডিজি এ এস এম হুমায়ুন কবীর আমার দেশকে বলেন, নিবন্ধন অ্যাপ পরীক্ষা করা হচ্ছে, সেখানে ত্রুটি পাওয়া যায়নি। বলা যায়, এটা সফল।

এই অ্যাপের চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে তিনি বলেন, এখন অ্যাপটি নিয়ে আমাদের চ্যালেঞ্জ একটি, সেটি হচ্ছে হ্যাকিং থেকে একে রক্ষা করা। এটিকে সুরক্ষিত করার সম্ভাব্য সব চেষ্টা করা হচ্ছে।

ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ আমার দেশকে বলেন, প্রবাসী ভোটার অ্যাপ ১৮ নভেম্বর উদ্বোধন করা হবে। আমরা আগে বলেছিলাম ১৬ নভেম্বর ‘আউট অব কন্ট্রিবিউটিং’ এবং ‘আইসি অ্যাপ’ লঞ্চ করা হবে। কিন্তু সেদিন অধিকাংশ দেশেই সাপ্তাহিক ছুটি থাকে। তাই এখন ১৮ নভেম্বর অ্যাপ উদ্বোধনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।