
ওয়াসিম সিদ্দিকী

বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী বা কেরানি হিসেবে কর্মজীবন শুরু, শেষ হয় দেশের অন্যতম ক্ষমতাধর পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে পলায়নের মধ্য দিয়ে। ২০১৩ সাল থেকে আওয়ামীবিরোধীদের দমনে তিনি ছিলেন অগ্রগামীদের একজন।
এরই ধারাবিহকতায় জুলাই বিপ্লবেও আন্দোলন দমনে গণহত্যার গুরুত্বপূর্ণ ‘নির্দেশদাতা’ ছিলেন তিনি। তীব্র জনরোষে আওয়ামী লীগের পতনের পর এই পুলিশ কর্মকর্তা ভারতে পালিয়ে যান। সেখানে অবস্থান করে পলাতক আওয়ামী নেতাদের সঙ্গে সমন্বয় করে দেশবিরোধী অপতৎপরতায় লিপ্ত রয়েছেন বলে ইতোমধ্যে খবর বেরিয়েছে।
এই পুলিশ কর্মকর্তা হলেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান। তার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা হয়েছে। ঝুলছে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও। এছাড়া তার বিরুদ্ধে রয়েছে হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ গড়ে তোলার অভিযোগ।
নিরাপত্তাসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার রাজনৈতিক ছত্রছায়া এবং তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের প্রত্যক্ষ মদতে হাবিবুর আওয়ামী লীগ সরকারের নিরাপত্তা কৌশলের প্রধান ‘ভরসার মুখ’ হয়ে উঠেছিলেন। ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনি পুলিশে সীমাহীন দুর্নীতি, পোস্টিংবাণিজ্য ও নারী কেলেঙ্কারির সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছিলেন। বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি বিএনপি, জামায়াত এবং সর্বশেষ ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী ছাত্র-জনতার ওপর রাষ্ট্রীয় দমনপীড়নের নামে নির্বিচার হত্যাকাণ্ডে নেতৃত্ব দেন তিনি।
গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ
জুলাই বিপ্লবে ঢাকায় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের পেছনে হাবিবুরের সরাসরি ভূমিকা থাকার অভিযোগে আইসিটিতে একাধিক মামলা হয়। তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে ট্রাইব্যুনাল-১। ফরমাল চার্জে বলা হয়, হাসিনার নির্দেশে হাবিবুর রহমান ঢাকায় আন্দোলন দমন অভিযানে নেতৃত্ব দেন।
২০২৪ সালের ১৯ জুলাই রাজধানীর রামপুরায় পুলিশের গুলিতে নিহত হন অন্তত ২৩ জন। অভিযোগপত্রে বলা হয়, সেদিন হাবিব নিজে উপস্থিত থেকে অধীনস্থ কর্মকর্তাদের গুলি চালানোর নির্দেশ দেন। সে সময় রামপুরায় নির্মাণাধীন ভবনের ছাদ থেকে আমির হোসেন নামে এক তরুণকে লাফ দিতে বাধ্য করা হয়, যা ওই সময়ে বেশ আলোচিত একটি ঘটনা ছিল।
এছাড়া ওই বছরের ৫ আগস্ট চানখাঁরপুলে নিরস্ত্র আন্দোলনকারীদের ওপরও গুলি চালানোর নির্দেশ দেন এই হাবিব। ট্রাইব্যুনালের তদন্তে উদ্ধার হওয়া অডিও ক্লিপে শোনা যায়, তিনি অধীনস্থদের বলেনÑ‘প্রয়োজনে সর্বোচ্চ ক্ষমতা ব্যবহার করো, গুলি করো।’ তার নির্দেশেই সেদিন ছয়জনকে হত্যা করা হয়।
ট্রাইব্যুনালের বিচারক গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বেঞ্চ হত্যাকাণ্ডগুলোকে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। বর্তমানে হাবিবুর রহমান, সাবেক এডিসি রাশেদুল ইসলাম, ওসি মশিউর রহমান, এসআই তারিকুল ইসলাম এবং এএসআই চঞ্চল চন্দ্র সরকারের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি রয়েছে।
রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় অভাবনীয় উত্থান
হাবিবুরের বাড়ি গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার চন্দ্রদিঘলিয়া গ্রামে। বাবা আব্দুল আলী মোল্লা ও মা রাবেয়া বেগম এখন প্রয়াত। গোপালগঞ্জের চন্দ্রদিঘলিয়া মোল্লাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষাজীবন শুরু করে গোপালগঞ্জের এসএম মডেল গভর্নমেন্ট হাই স্কুল ও সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজে তিনি পড়াশোনা করেন। লেখাপড়া শেষ করে গোপালগঞ্জে একটি জাতীয় দৈনিকের স্থানীয় সংবাদদাতা হিসেবেও তিনি কাজ করেছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ‘গোপালগঞ্জ ফ্যাক্টর’ ও হাসিনার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কই ছিল তার দানবীয় ক্ষমতার উৎস। তার উত্থান কোনো স্বাভাবিক পেশাগত দক্ষতা বা যোগ্যতার ভিত্তিতে হয়নি; বরং পুরোটাই ছিল রাজনৈতিক আনুগত্যের পুরস্কার।
সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, হাবিবুর রহমানের কর্মজীবন শুরু হয়েছিল পিএসসির তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী বা কেরানি হিসেবে। অভিযোগ রয়েছে, অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়ার সুযোগ নিয়ে, ‘গোপালগঞ্জ কানেকশন’ এবং শক্তিশালী রাজনৈতিক প্রভাবকে কাজে লাগানোর পাশাপাশি পিএসসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে লিয়াজোঁ করে বিসিএস পরীক্ষা দেন। ১৯৯৮ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি যোগ দেন বাংলাদেশ পুলিশে। তিনি ১৭তম বিসিএসের কর্মকর্তা। তিনি তিনবার বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম) ও দুবার রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম) পান।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর হাবিবুরের ভাগ্য খুলে যায়। তিনি দ্রুত হাসিনার ‘আস্থাভাজন’ হয়ে ওঠেন। অভিযোগ আছে, শেখ পরিবারের প্রভাবশালী সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী শেখ ফজলুল করিম সেলিমকে সামনে রেখে ওই পুলিশ কর্মকর্তা সরকার, দল ও পুলিশ বাহিনীতে একচ্ছত্র প্রভাব বিস্তার শুরু করেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রতি প্রশ্নাতীত আনুগত্যের পুরস্কার হিসেবে তিনি পুলিশ প্রশাসনে বিএনপি-জামায়াতপন্থি কর্মকর্তাদের চিহ্নিতকরণ, গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ ও বদলির ‘বিশেষ দায়িত্ব’ পান। তার হাত ধরেই পুলিশ বাহিনীতে ব্যাপক দলীয়করণ শুরু হয়। ২০১২ সালের ১৪ নভেম্বর থেকে ২০১৬ সালের ১৬ জুলাই পর্যন্ত ছিলেন ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার (এসপি)। অতিরিক্ত ডিআইজি হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে দায়িত্ব পালন করেন পুলিশ সদর দপ্তরের সংস্থাপন বিভাগে। পরে তিনি সদর দপ্তরের অ্যাডমিন ও ডিসিপ্লিন সেকশনের ডিআইজি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ২০২২ সালে তিনি ডিএমপি কমিশনারের মতো পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হন। মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, ২০১৩ সালে জামায়াত-শিবিরের আন্দোলন থেকে শুরু করে ২০২৪ সালের ছাত্র আন্দোলন পর্যন্ত প্রতিটি বিরোধী বা গণআন্দোলন দমনে তার ভূমিকা ছিল প্রশ্নবিদ্ধ ও নির্মম।
পোস্টিংবাণিজ্য থেকে হাজার কোটি টাকার সম্পদ
পুলিশে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের সময় হাবিবুরের বিরুদ্ধে সীমাহীন দুর্নীতি, পোস্টিংবাণিজ্য এবং হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের ভয়াবহ অভিযোগ ওঠে। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর তিনি ডিএমপির ডিসি (হেডকোয়ার্টার) হিসেবে দায়িত্ব পান। মূলত তখন থেকেই তার বদলিবাণিজ্যের যাত্রা শুরু।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ডিএমপিতে ওসি পদায়ন থেকে শুরু করে যেকোনো পদে পোস্টিংয়ের জন্য ৩০ লাখ থেকে কোটি টাকা পর্যন্ত ঘুস লেনদেন হতো হাবিবুরের নিয়ন্ত্রণে। ঢাকা জেলার এসপি হিসেবে পোস্টিং নিয়ে তিনি শিল্পকারখানা, মাদক ব্যবসা, ছিনতাইকারী চক্র এবং মামলাবাণিজ্য সিন্ডিকেটের ‘ত্রাণকর্তা’ হয়ে ওঠেন। পরে ডিআইজি হয়ে ঢাকা রেঞ্জে এবং পুলিশ সদর দপ্তরের প্রশাসন শাখায় বসে তিনি সারা দেশের পুলিশ বাহিনীর বদলি একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ করেন। কনস্টেবল নিয়োগ ও বদলিবাণিজ্যকে তিনি রীতিমতো ‘শিল্পে’ রূপ দিয়েছিলেন। পুলিশের অস্ত্র, সরঞ্জাম ও অবকাঠামো নির্মাণসংক্রান্ত কেনাকাটায়ও তার কমিশনবাণিজ্য ছিল ওপেন সিক্রেট। পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগে ঘুসের টাকার একটি অংশ তিনি লেনদেন করতেন উত্তরার আপন হিজড়া এবং মগবাজারের রাখী হিজড়ার মাধ্যমে। পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (অ্যাডমিন ও ডিসিপ্লিন) থাকাকালীন তিনি বদলি ও নিয়োগবাণিজ্য করতেন তার চাচাতো ভাই মাহমুদ হাসানকে দিয়ে। এছাড়া মুন নামে আরেকজনকে দিয়েও তিনি নিয়োগ ও তদবিরবাণিজ্য করতেন বলে জানা গেছে।
অবৈধ টাকায় গড়েছেন সম্পদের পাহাড়
বিভিন্ন মাধ্যমে জানা গেছে, পোস্টিংবাণিজ্য, জমি ‘দখল ও উদ্ধার’ বাণিজ্য এবং বিভিন্ন অপরাধী সিন্ডিকেটকে সুরক্ষা দিয়ে হাবিবুর রহমানের অর্জিত মোট অবৈধ সম্পদের পরিমাণ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। দেশ-বিদেশে বিলাসবহুল স্থপনা এবং একাধিক ব্যবসায় তার এই কালো টাকা বিনিয়োগ করেছেন। দুর্নীতির অর্থে হাবিবুর ঢাকার সাভারে গড়ে তোলেন ‘হাবিব নগর’ ও ‘উত্তরণ পল্লী’ নামে দুটি আবাসিক এলাকা। এছাড়া সাভার, ভাকুর্তা, আশুলিয়া ও হেমায়েতপুরে তিনি বেনামে অসংখ্য জমি ও বাড়ি কিনেছেন।
সাভারের পোড়াবাড়ি এলাকায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামও পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘হাবিবুর রহমান প্রাথমিক বিদ্যালয়’। সেখানে প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে তার নাম লেখা হয় ‘অ্যাডিশনাল ডিআইজি (সংস্থাপন), বাংলাদেশ পুলিশ।’ সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠানটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
রাজধানীর বাড্ডা লিংক রোডে জায়গা দখলের অভিযোগও ওঠে হাবিবুরের বিরুদ্ধে। স্থানীয় যুব মহিলা লীগ নেত্রী মামলা করতে গেলে পুলিশ তা নেয়নি। গুলশানের তৎকালীন ডিসি এসএম মোস্তাক আহমেদ পুরো বিষয়টি ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ’ ম্যানেজ করেছে বলে জানান।
আরো জানা গেছে, উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরে সাততলা ভবন, উত্তরার রাজউক প্রকল্পে জমি, তুরাগ থানার বাউনিয়ার ধুলাবাড়ী এলাকায় পাঁচ কাঠা জমি আছে হাবিবুরের। গোপালগঞ্জে বাবা-মায়ের নামে রাবেয়া-আলী গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ একাধিক প্রতিষ্ঠানও স্থাপন করেন তিনি। নিজের নামে সম্পদ না রাখলেও বিপুল অর্থ পাচার করেন অস্ট্রেলিয়ায়।
হাবিবুর উত্তরণ ফাউন্ডেশন নামে একটি সংগঠনকে সামনে রেখে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা তুলতেন, যা তার প্রধান কাজে পরিণত হয়। ঢাকা জেলার এসপি থাকাকালীন পুরো সাভার-আশুলিয়াকে নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসেন। টার্গেট করেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও সন্ত্রাসীদের। ফাউন্ডেশনের নামে নেওয়া মোটা অঙ্কের চাঁদার বড় অংশ নিতেন হাবিবুর রহমান।
প্রথমে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ডা. এনামুর রহমানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলেন হাবিবুর। ধর্ষণ মামলায় এনামের পক্ষ নেওয়ার পর থেকেই তাদের রাজনৈতিক আঁতাত শুরু হয়। হাবিবের প্রভাবেই এনাম ব্যবসায়িকভাবে লাভবান হন আর হাবিব পান আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতা।
এরপর সাভারের সন্ত্রাসী মঞ্জুরুল আলম রাজীব ও তার ভাই ফখরুল আলম সমরকে নিয়ন্ত্রণে এনে হাবিব ক্ষমতার বলয় শক্ত করেন। রাজীবকে উপজেলা চেয়ারম্যান এবং সমরকে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হতে সহায়তা করেন। সাবেক ছাত্রদল নেতা ওবায়েদুর রহমান অভি তার ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী হয়ে নিয়মিত অর্থ জোগাতেন উত্তরণ ফাউন্ডেশনে। হাবিবের পৃষ্ঠপোষকতায় হাজী সেলিম আহমেদ গার্মেন্টস বন্ড চুরি এবং স্বর্ণ ও ডলার পাচারে জড়িয়ে দ্রুত শিল্পপতি হয়ে ওঠেন। প্রতি মাসে তিনি হাবিবকে মোটা অঙ্কের টাকা দিতেন; এমনকি তার অস্ত্রের লাইসেন্সের সুপারিশও করেছিলেন হাবিব। স্বর্ণ ব্যবসায়ী জসীম উদ্দিন ও উত্তর ডিবির প্রধান মোহাম্মদ রাসেল শেখ মিলে গড়ে তোলেন স্বর্ণ ও অর্থপাচারের সিন্ডিকেট, যার মূল আর্থিক স্রোত যেত হাবিবের কাছে। বেদে সম্প্রদায় থেকে উঠে আসা রমজান আহমেদকে হাবিব বানান সাভার পৌর কাউন্সিলর ও উত্তরণ ফাউন্ডেশনের পরিচালক। তিনি সরকারি অনুদানের বড় অংশ জমা রাখতেন হাবিবের ফাউন্ডেশনে। অভিযোগ আছে, হাবিবের ছায়াতলে বেদে ও পতিতাদের মাধ্যমে পরিচালিত হতো গোপন অপরাধচক্রও।
সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ধামসোনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম ও সাভার উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা দেওয়ান মো. মঈনউদ্দিন বিপ্লবও ছিলেন হাবিবুরের সহযোগী।
নারী কেলেঙ্কারির ভূরিভূরি অভিযোগ
হাবিবুরের বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগও ব্যাপক আলোচিত। অভিযোগ ওঠে, তিনি তার পদের প্রভাব খাটিয়ে পুলিশ বাহিনীর অনেক নারী সদস্য এবং সাধারণ নারীকে অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে বাধ্য করাসহ নির্যাতন ও হয়রানি করেছেন। পুলিশ প্রশাসনে নারী সদস্যদের পোস্টিং, পদোন্নতি ও সুবিধাজনক স্থানে বদলির ক্ষেত্রেও তিনি অনৈতিক প্রভাব খাটাতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া ক্ষমতার জোরে তিনি বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদকের পদ পাঁচ বছর আঁকড়ে রেখেছিলেন। ওই সময় কাবাডি ফেডারেশনের টাকা নয়ছয় করার অভিযোগও উঠেছিল তার বিরুদ্ধে।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটলে হাবিবুর তড়িঘড়ি করে দেশ থেকে পালিয়ে যান। অভিযোগ রয়েছে, তিনি ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন।
পুলিশের এই কর্মকর্তার বিস্ময়কর উত্থান বাংলাদেশের প্রশাসনিক ইতিহাসে এক কলঙ্কজনক অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
পলাতক থাকায় অভিযোগ প্রসঙ্গে হাবিবুর রহমানের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী বা কেরানি হিসেবে কর্মজীবন শুরু, শেষ হয় দেশের অন্যতম ক্ষমতাধর পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে পলায়নের মধ্য দিয়ে। ২০১৩ সাল থেকে আওয়ামীবিরোধীদের দমনে তিনি ছিলেন অগ্রগামীদের একজন।
এরই ধারাবিহকতায় জুলাই বিপ্লবেও আন্দোলন দমনে গণহত্যার গুরুত্বপূর্ণ ‘নির্দেশদাতা’ ছিলেন তিনি। তীব্র জনরোষে আওয়ামী লীগের পতনের পর এই পুলিশ কর্মকর্তা ভারতে পালিয়ে যান। সেখানে অবস্থান করে পলাতক আওয়ামী নেতাদের সঙ্গে সমন্বয় করে দেশবিরোধী অপতৎপরতায় লিপ্ত রয়েছেন বলে ইতোমধ্যে খবর বেরিয়েছে।
এই পুলিশ কর্মকর্তা হলেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান। তার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা হয়েছে। ঝুলছে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও। এছাড়া তার বিরুদ্ধে রয়েছে হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ গড়ে তোলার অভিযোগ।
নিরাপত্তাসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার রাজনৈতিক ছত্রছায়া এবং তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের প্রত্যক্ষ মদতে হাবিবুর আওয়ামী লীগ সরকারের নিরাপত্তা কৌশলের প্রধান ‘ভরসার মুখ’ হয়ে উঠেছিলেন। ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনি পুলিশে সীমাহীন দুর্নীতি, পোস্টিংবাণিজ্য ও নারী কেলেঙ্কারির সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছিলেন। বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি বিএনপি, জামায়াত এবং সর্বশেষ ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী ছাত্র-জনতার ওপর রাষ্ট্রীয় দমনপীড়নের নামে নির্বিচার হত্যাকাণ্ডে নেতৃত্ব দেন তিনি।
গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ
জুলাই বিপ্লবে ঢাকায় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের পেছনে হাবিবুরের সরাসরি ভূমিকা থাকার অভিযোগে আইসিটিতে একাধিক মামলা হয়। তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে ট্রাইব্যুনাল-১। ফরমাল চার্জে বলা হয়, হাসিনার নির্দেশে হাবিবুর রহমান ঢাকায় আন্দোলন দমন অভিযানে নেতৃত্ব দেন।
২০২৪ সালের ১৯ জুলাই রাজধানীর রামপুরায় পুলিশের গুলিতে নিহত হন অন্তত ২৩ জন। অভিযোগপত্রে বলা হয়, সেদিন হাবিব নিজে উপস্থিত থেকে অধীনস্থ কর্মকর্তাদের গুলি চালানোর নির্দেশ দেন। সে সময় রামপুরায় নির্মাণাধীন ভবনের ছাদ থেকে আমির হোসেন নামে এক তরুণকে লাফ দিতে বাধ্য করা হয়, যা ওই সময়ে বেশ আলোচিত একটি ঘটনা ছিল।
এছাড়া ওই বছরের ৫ আগস্ট চানখাঁরপুলে নিরস্ত্র আন্দোলনকারীদের ওপরও গুলি চালানোর নির্দেশ দেন এই হাবিব। ট্রাইব্যুনালের তদন্তে উদ্ধার হওয়া অডিও ক্লিপে শোনা যায়, তিনি অধীনস্থদের বলেনÑ‘প্রয়োজনে সর্বোচ্চ ক্ষমতা ব্যবহার করো, গুলি করো।’ তার নির্দেশেই সেদিন ছয়জনকে হত্যা করা হয়।
ট্রাইব্যুনালের বিচারক গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বেঞ্চ হত্যাকাণ্ডগুলোকে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। বর্তমানে হাবিবুর রহমান, সাবেক এডিসি রাশেদুল ইসলাম, ওসি মশিউর রহমান, এসআই তারিকুল ইসলাম এবং এএসআই চঞ্চল চন্দ্র সরকারের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি রয়েছে।
রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় অভাবনীয় উত্থান
হাবিবুরের বাড়ি গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার চন্দ্রদিঘলিয়া গ্রামে। বাবা আব্দুল আলী মোল্লা ও মা রাবেয়া বেগম এখন প্রয়াত। গোপালগঞ্জের চন্দ্রদিঘলিয়া মোল্লাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষাজীবন শুরু করে গোপালগঞ্জের এসএম মডেল গভর্নমেন্ট হাই স্কুল ও সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজে তিনি পড়াশোনা করেন। লেখাপড়া শেষ করে গোপালগঞ্জে একটি জাতীয় দৈনিকের স্থানীয় সংবাদদাতা হিসেবেও তিনি কাজ করেছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ‘গোপালগঞ্জ ফ্যাক্টর’ ও হাসিনার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কই ছিল তার দানবীয় ক্ষমতার উৎস। তার উত্থান কোনো স্বাভাবিক পেশাগত দক্ষতা বা যোগ্যতার ভিত্তিতে হয়নি; বরং পুরোটাই ছিল রাজনৈতিক আনুগত্যের পুরস্কার।
সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, হাবিবুর রহমানের কর্মজীবন শুরু হয়েছিল পিএসসির তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী বা কেরানি হিসেবে। অভিযোগ রয়েছে, অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়ার সুযোগ নিয়ে, ‘গোপালগঞ্জ কানেকশন’ এবং শক্তিশালী রাজনৈতিক প্রভাবকে কাজে লাগানোর পাশাপাশি পিএসসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে লিয়াজোঁ করে বিসিএস পরীক্ষা দেন। ১৯৯৮ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি যোগ দেন বাংলাদেশ পুলিশে। তিনি ১৭তম বিসিএসের কর্মকর্তা। তিনি তিনবার বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম) ও দুবার রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম) পান।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর হাবিবুরের ভাগ্য খুলে যায়। তিনি দ্রুত হাসিনার ‘আস্থাভাজন’ হয়ে ওঠেন। অভিযোগ আছে, শেখ পরিবারের প্রভাবশালী সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী শেখ ফজলুল করিম সেলিমকে সামনে রেখে ওই পুলিশ কর্মকর্তা সরকার, দল ও পুলিশ বাহিনীতে একচ্ছত্র প্রভাব বিস্তার শুরু করেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রতি প্রশ্নাতীত আনুগত্যের পুরস্কার হিসেবে তিনি পুলিশ প্রশাসনে বিএনপি-জামায়াতপন্থি কর্মকর্তাদের চিহ্নিতকরণ, গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ ও বদলির ‘বিশেষ দায়িত্ব’ পান। তার হাত ধরেই পুলিশ বাহিনীতে ব্যাপক দলীয়করণ শুরু হয়। ২০১২ সালের ১৪ নভেম্বর থেকে ২০১৬ সালের ১৬ জুলাই পর্যন্ত ছিলেন ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার (এসপি)। অতিরিক্ত ডিআইজি হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে দায়িত্ব পালন করেন পুলিশ সদর দপ্তরের সংস্থাপন বিভাগে। পরে তিনি সদর দপ্তরের অ্যাডমিন ও ডিসিপ্লিন সেকশনের ডিআইজি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ২০২২ সালে তিনি ডিএমপি কমিশনারের মতো পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হন। মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, ২০১৩ সালে জামায়াত-শিবিরের আন্দোলন থেকে শুরু করে ২০২৪ সালের ছাত্র আন্দোলন পর্যন্ত প্রতিটি বিরোধী বা গণআন্দোলন দমনে তার ভূমিকা ছিল প্রশ্নবিদ্ধ ও নির্মম।
পোস্টিংবাণিজ্য থেকে হাজার কোটি টাকার সম্পদ
পুলিশে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের সময় হাবিবুরের বিরুদ্ধে সীমাহীন দুর্নীতি, পোস্টিংবাণিজ্য এবং হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের ভয়াবহ অভিযোগ ওঠে। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর তিনি ডিএমপির ডিসি (হেডকোয়ার্টার) হিসেবে দায়িত্ব পান। মূলত তখন থেকেই তার বদলিবাণিজ্যের যাত্রা শুরু।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ডিএমপিতে ওসি পদায়ন থেকে শুরু করে যেকোনো পদে পোস্টিংয়ের জন্য ৩০ লাখ থেকে কোটি টাকা পর্যন্ত ঘুস লেনদেন হতো হাবিবুরের নিয়ন্ত্রণে। ঢাকা জেলার এসপি হিসেবে পোস্টিং নিয়ে তিনি শিল্পকারখানা, মাদক ব্যবসা, ছিনতাইকারী চক্র এবং মামলাবাণিজ্য সিন্ডিকেটের ‘ত্রাণকর্তা’ হয়ে ওঠেন। পরে ডিআইজি হয়ে ঢাকা রেঞ্জে এবং পুলিশ সদর দপ্তরের প্রশাসন শাখায় বসে তিনি সারা দেশের পুলিশ বাহিনীর বদলি একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ করেন। কনস্টেবল নিয়োগ ও বদলিবাণিজ্যকে তিনি রীতিমতো ‘শিল্পে’ রূপ দিয়েছিলেন। পুলিশের অস্ত্র, সরঞ্জাম ও অবকাঠামো নির্মাণসংক্রান্ত কেনাকাটায়ও তার কমিশনবাণিজ্য ছিল ওপেন সিক্রেট। পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগে ঘুসের টাকার একটি অংশ তিনি লেনদেন করতেন উত্তরার আপন হিজড়া এবং মগবাজারের রাখী হিজড়ার মাধ্যমে। পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (অ্যাডমিন ও ডিসিপ্লিন) থাকাকালীন তিনি বদলি ও নিয়োগবাণিজ্য করতেন তার চাচাতো ভাই মাহমুদ হাসানকে দিয়ে। এছাড়া মুন নামে আরেকজনকে দিয়েও তিনি নিয়োগ ও তদবিরবাণিজ্য করতেন বলে জানা গেছে।
অবৈধ টাকায় গড়েছেন সম্পদের পাহাড়
বিভিন্ন মাধ্যমে জানা গেছে, পোস্টিংবাণিজ্য, জমি ‘দখল ও উদ্ধার’ বাণিজ্য এবং বিভিন্ন অপরাধী সিন্ডিকেটকে সুরক্ষা দিয়ে হাবিবুর রহমানের অর্জিত মোট অবৈধ সম্পদের পরিমাণ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। দেশ-বিদেশে বিলাসবহুল স্থপনা এবং একাধিক ব্যবসায় তার এই কালো টাকা বিনিয়োগ করেছেন। দুর্নীতির অর্থে হাবিবুর ঢাকার সাভারে গড়ে তোলেন ‘হাবিব নগর’ ও ‘উত্তরণ পল্লী’ নামে দুটি আবাসিক এলাকা। এছাড়া সাভার, ভাকুর্তা, আশুলিয়া ও হেমায়েতপুরে তিনি বেনামে অসংখ্য জমি ও বাড়ি কিনেছেন।
সাভারের পোড়াবাড়ি এলাকায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামও পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘হাবিবুর রহমান প্রাথমিক বিদ্যালয়’। সেখানে প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে তার নাম লেখা হয় ‘অ্যাডিশনাল ডিআইজি (সংস্থাপন), বাংলাদেশ পুলিশ।’ সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠানটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
রাজধানীর বাড্ডা লিংক রোডে জায়গা দখলের অভিযোগও ওঠে হাবিবুরের বিরুদ্ধে। স্থানীয় যুব মহিলা লীগ নেত্রী মামলা করতে গেলে পুলিশ তা নেয়নি। গুলশানের তৎকালীন ডিসি এসএম মোস্তাক আহমেদ পুরো বিষয়টি ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ’ ম্যানেজ করেছে বলে জানান।
আরো জানা গেছে, উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরে সাততলা ভবন, উত্তরার রাজউক প্রকল্পে জমি, তুরাগ থানার বাউনিয়ার ধুলাবাড়ী এলাকায় পাঁচ কাঠা জমি আছে হাবিবুরের। গোপালগঞ্জে বাবা-মায়ের নামে রাবেয়া-আলী গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ একাধিক প্রতিষ্ঠানও স্থাপন করেন তিনি। নিজের নামে সম্পদ না রাখলেও বিপুল অর্থ পাচার করেন অস্ট্রেলিয়ায়।
হাবিবুর উত্তরণ ফাউন্ডেশন নামে একটি সংগঠনকে সামনে রেখে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা তুলতেন, যা তার প্রধান কাজে পরিণত হয়। ঢাকা জেলার এসপি থাকাকালীন পুরো সাভার-আশুলিয়াকে নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসেন। টার্গেট করেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও সন্ত্রাসীদের। ফাউন্ডেশনের নামে নেওয়া মোটা অঙ্কের চাঁদার বড় অংশ নিতেন হাবিবুর রহমান।
প্রথমে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ডা. এনামুর রহমানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলেন হাবিবুর। ধর্ষণ মামলায় এনামের পক্ষ নেওয়ার পর থেকেই তাদের রাজনৈতিক আঁতাত শুরু হয়। হাবিবের প্রভাবেই এনাম ব্যবসায়িকভাবে লাভবান হন আর হাবিব পান আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতা।
এরপর সাভারের সন্ত্রাসী মঞ্জুরুল আলম রাজীব ও তার ভাই ফখরুল আলম সমরকে নিয়ন্ত্রণে এনে হাবিব ক্ষমতার বলয় শক্ত করেন। রাজীবকে উপজেলা চেয়ারম্যান এবং সমরকে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হতে সহায়তা করেন। সাবেক ছাত্রদল নেতা ওবায়েদুর রহমান অভি তার ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী হয়ে নিয়মিত অর্থ জোগাতেন উত্তরণ ফাউন্ডেশনে। হাবিবের পৃষ্ঠপোষকতায় হাজী সেলিম আহমেদ গার্মেন্টস বন্ড চুরি এবং স্বর্ণ ও ডলার পাচারে জড়িয়ে দ্রুত শিল্পপতি হয়ে ওঠেন। প্রতি মাসে তিনি হাবিবকে মোটা অঙ্কের টাকা দিতেন; এমনকি তার অস্ত্রের লাইসেন্সের সুপারিশও করেছিলেন হাবিব। স্বর্ণ ব্যবসায়ী জসীম উদ্দিন ও উত্তর ডিবির প্রধান মোহাম্মদ রাসেল শেখ মিলে গড়ে তোলেন স্বর্ণ ও অর্থপাচারের সিন্ডিকেট, যার মূল আর্থিক স্রোত যেত হাবিবের কাছে। বেদে সম্প্রদায় থেকে উঠে আসা রমজান আহমেদকে হাবিব বানান সাভার পৌর কাউন্সিলর ও উত্তরণ ফাউন্ডেশনের পরিচালক। তিনি সরকারি অনুদানের বড় অংশ জমা রাখতেন হাবিবের ফাউন্ডেশনে। অভিযোগ আছে, হাবিবের ছায়াতলে বেদে ও পতিতাদের মাধ্যমে পরিচালিত হতো গোপন অপরাধচক্রও।
সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ধামসোনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম ও সাভার উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা দেওয়ান মো. মঈনউদ্দিন বিপ্লবও ছিলেন হাবিবুরের সহযোগী।
নারী কেলেঙ্কারির ভূরিভূরি অভিযোগ
হাবিবুরের বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগও ব্যাপক আলোচিত। অভিযোগ ওঠে, তিনি তার পদের প্রভাব খাটিয়ে পুলিশ বাহিনীর অনেক নারী সদস্য এবং সাধারণ নারীকে অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে বাধ্য করাসহ নির্যাতন ও হয়রানি করেছেন। পুলিশ প্রশাসনে নারী সদস্যদের পোস্টিং, পদোন্নতি ও সুবিধাজনক স্থানে বদলির ক্ষেত্রেও তিনি অনৈতিক প্রভাব খাটাতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া ক্ষমতার জোরে তিনি বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদকের পদ পাঁচ বছর আঁকড়ে রেখেছিলেন। ওই সময় কাবাডি ফেডারেশনের টাকা নয়ছয় করার অভিযোগও উঠেছিল তার বিরুদ্ধে।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটলে হাবিবুর তড়িঘড়ি করে দেশ থেকে পালিয়ে যান। অভিযোগ রয়েছে, তিনি ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন।
পুলিশের এই কর্মকর্তার বিস্ময়কর উত্থান বাংলাদেশের প্রশাসনিক ইতিহাসে এক কলঙ্কজনক অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
পলাতক থাকায় অভিযোগ প্রসঙ্গে হাবিবুর রহমানের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

রাজধানীর মিরপুরের গৃহবধূ সালমা বেগম (৩৫) জ্বরে আক্রান্ত হলে চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ খান। কিছুটা সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফেরেন। কিন্তু এক সপ্তাহের মধ্যে আবার জ্বর আসে। এরপর দ্রুত প্রেশার কমে যায়, প্লাটিলেট নেমে যায় বিপজ্জনক পর্যায়ে। হাসপাতালে নেওয়ার পর আইসিইউতে তিনদিন আপ্রাণ চেষ্টা করেও বাঁচানো যায়
১১ ঘণ্টা আগে
বছরের শেষ সময়ে পেঁয়াজ নিয়ে হঠাৎ সক্রিয় হয়েছে সিন্ডিকেট। গত বৃহস্পতিবার থেকে কেজিতে দাম বেড়েছে ১০ টাকা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, পেঁয়াজের সরবরাহ কমে যাওয়ায় বাজারে দাম বেড়েছে। এদিকে, বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির জন্য প্রায় তিন হাজার আবেদন জমা পড়েছে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে। কিন্তু সরকার এখনো আইপি দেয়নি।
১২ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশি রোগীদের বিদেশমুখী প্রবণতা নতুন নয়। দীর্ঘদিন ধরে ভারত ছিল তাদের প্রধান গন্তব্য। তবে জুলাই বিপ্লবের পর থেকে দেশটিতে যাওয়া উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। এছাড়াও থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, চীন, মালয়েশিয়া, সৌদি আরবেও যান রোগীরা।
১ দিন আগে
রাজধানীর মিরপুরের রূপনগর লেক এখন অস্তিত্বহীন। বলতে গেলে ২৪ একর আয়তনের বৃহৎ এ জলাশয় উধাও হয়ে গেছে। আর এ বিষয়টি সরাসরি কর্তৃপক্ষই বলছে। এ নিয়ে বারবার তদন্ত হয়, প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে জমা হয়, বোর্ড মিটিং হয়, সিদ্ধান্ত হয়; কিন্তু বাস্তব রূপে ফিরে আসে না এ লেক। উল্টো বিগত বছরগুলোতে লেকের ভেতরেও প্লট সাজিয়
১ দিন আগে