আওয়ামী নাশকতার ছক

বসুন্ধরা ষড়যন্ত্রে মেজর সাদেকসহ গ্রেপ্তার ১৬

ওয়াসিম সিদ্দিকী
প্রকাশ : ৩১ জুলাই ২০২৫, ০৮: ৩৬

নাশকতা চালানোর জন্য কর্মশালার নামে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের ৪০০ ক্যাডারকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার ষড়যন্ত্রের ঘটনায় ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। প্রশিক্ষণের মূল দায়িত্বে ছিলেন মেজর সাদেকুল হক সাদেক।

ইতোমধ্যে তাকে নিরাপত্তা সংস্থার হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। নির্ভরযোগ্য সূত্রে এ খবর সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেলেও এ ব্যাপারে আইএসপিআরের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

বিজ্ঞাপন

সরকার উৎখাতে আওয়ামী নাশকতার ছক অনুযায়ী এর আগেও রাজধানীর অন্তত চারটি স্থানে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এর মধ্যে সুরক্ষিত একটি স্থানেও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় বাছাই করা ক্যাডারদের। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত প্রায় দুই হাজার ৫০০ জনকে প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হয়েছে।

চাকরিরত একজন মেজর এ পর্যন্ত হওয়া প্রশিক্ষণগুলোর সমন্বয় করেছেন। এসব প্রশিক্ষণে সার্বিক সহযোগিতা করেছেন বরগুনার যুবলীগ নেতা সোহেল রানা, গোপালগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেত্রী শামীমা নাসরিন শম্পা এবং মেহেরপুরের যুবলীগ আহ্বায়ক মাহফুজুর রহমান রিটন। কলকাতার সল্টলেকের বাসায় বসে সরাসরি ঢাকার এসব প্রশিক্ষণসহ সার্বিকভাবে সরকার উৎখাতের পরিকল্পনার বিষয়টি তত্ত্বাবধান করছেন আওয়ামী লীগের ক্ষমতাচ্যুত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তাকে সহযোগিতা করার জন্য তার সল্টলেকের বাসায় অবস্থান করছেন ডিএমপির পলাতক সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ কয়েকজন আওযামী লীগ নেতা ও পুলিশের সাবেক কর্মকর্তা।

অন্যদিকে দিল্লিতে অবস্থান করা পলাতক অতিরিক্ত আইজিপি ও এসবির সাবেক প্রধান মনিরুল ইসলাম এবং ডিজিএফআইয়ের সাবেক প্রধান পলাতক লেফটেন্যান্ট জেনারেল মুজিবুর রহমান ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর নির্দেশনায় তাদের কৌশলগত সাপোর্ট দিচ্ছেন। গত ২৮ জুলাই আমার দেশ-এ ‘দেশজুড়ে আওয়ামী নাশকতার ছক’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। ওই সংবাদে সরকার ও দেশবিরোধী আওয়ামী নাশকতার পরিকল্পনা ফাঁস করা হয়। ওই সংবাদে গত ৮ জুলাই বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি কনভেনশন হলে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা তুলে ধরা হয়।

নিরাপত্তাসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে মেজর সাদেককে নিরাপত্তা বাহিনীর হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। বসুন্ধরা ষড়যন্ত্রে এ পর্যন্ত ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বিভিন্ন সংস্থা এ বিষয়ে সমন্বিতভাবে কাজ করছে। রাজধানীতে এ পর্যন্ত হওয়া গোপন প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়া প্রায় সবাইকে চিহ্নিত করেছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। এছাড়া অর্থের জোগানদাতা হিসেবে একাধিক ব্যবসায়ীর গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। নজরদারিতে রাখা হয়েছে তাদের।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, গত ১২ জুলাই উত্তরা পশ্চিম থানা এলাকার ১১ নম্বর সেক্টরের ১৮ নম্বর রোডের ৮৩ নম্বর বাসা থেকে যুবলীগ নেতা সোহেল রানাকে গ্রেপ্তার করে ভাটারা থানা পুলিশ। শামীমা নাসরিন শম্পাকে একই সেক্টরের ১০/বি রোডের ১০ নম্বর বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। শম্পার স্বামী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। সোহেল রানা ও শম্পাকে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করে তথ্য যাচাই করা হয়। তাদের থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী মেজর সাদেককে হেফাজতে নেওয়া হয়।

নিরাপত্তাসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মেজর সাদেকের সঙ্গে হাসিনাপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের যোগাযোগ এবং জয়ের নির্দেশেই তিনি ঢাকা শহরে আওয়ামী লীগকর্মীদের সংগঠিত করছেন বলে যে তথ্য বেরিয়েছে, তাও যাচাই করা হচ্ছে। বিমানবন্দর ও শাহবাগ দখল করে তিন থেকে চার লাখ আওয়ামী নেতাকর্মীর সমাগম ঘটিয়ে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার মেজর সাদেক, বরগুনার যুবলীগ নেতা সোহেল রানা, গোপালগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেত্রী শামীমা নাসরিন শম্পা, মেহেরপুরের যুবলীগ আহ্বায়ক মাহফুজুর রহমান রিটনকে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করার পরিকল্পনাও রয়েছে নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর। নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মরত অফিসারদের মধ্যে আরো কেউ জড়িত কি না, তা বের করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে মেজর সাদেকের মোবাইল ফোন জব্দ করা যায়নি। কী কারণে তার মোবাইল ফোন এবং ল্যাপটপ জব্দ করা যায়নি, তা খুঁজে বের করতে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে সশস্ত্র বাহিনীর সহযোগিতা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। সার্বিকভাবে আওয়ামী নীলনকশার বিষয়ে প্রতিনিয়ত সরকারের উচ্চপর্যায়ে আপডেট দেওয়া হচ্ছে।

সোহেল রানা এবং শম্পার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মেজর সাদেকের নির্দেশে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে তৃণমূল আওয়ামী লীগকর্মীদের সংগঠিত করে বিভিন্ন স্থানে নাশকতা চালানোর প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য ভাটারা থানা এলাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ই-ব্লকের ৭ নম্বর রাডের ৫৩/এ বাড়িতে অবস্থিত কে বি কনভেনশন সেন্টারের দ্বিতীয় তলা ভাড়া নেওয়া হয়। চারতলাবিশিষ্ট বিল্ডিংয়ের দ্বিতীয় তলায় গত ৮ জুলাই সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রায় ৪০০ কর্মীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

মেজর সাদেক সেদিনের ওই কর্মশালার নামে সরকার উৎখাতে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেন। অনলাইনে গুজব প্রচার, অপরিচিত প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করা, নির্দিষ্ট সময়ে শেখ হাসিনা নির্দেশ দিলে সশস্ত্র অবস্থায় রাস্তায় নামতে হবে, সেক্ষেত্রে কীভাবে লড়াই করতে হবেÑসব মিলিয়ে সশস্ত্র ও ভার্চুয়াল লড়াই করার জন্য প্রশিক্ষণ দেন মেজর সাদেক ও একাধিক প্রশিক্ষক। ট্রেনিং সেশনের মাঝে নেতাকর্মীদের কাছ থেকে তাদের পরামর্শ জানতে চাওয়া হয়। স্টেজে উঠে ইচ্ছুকরা বক্তব্য দেন। দুপুরে উন্নতমানের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। প্রশিক্ষণের জন্য হল ভাড়া করেন এই হলের সাবেক মালিক বায়জিদ। তার বাড়ি গোপালগঞ্জে। হল ভাড়া করার জন‍্য তিনি বুকিং দেন।

বসুন্ধরা কনভেনশন হল ভাড়া দেওয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। জানা গেছে, বিদেশে লোক পাঠানোর জন্য কর্মশালার নামে হলটি ভাড়া নেওয়া হয়।

তদন্তসংশ্লিষ্ট সংস্থার মতে, কনভেনশন হলের ম্যানেজারের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। ম্যানেজার পরিকল্পিতভাবে কনভেনশন হলের সব সিসি ক্যামেরা দিনভর বন্ধ রাখেন। বসুন্ধরার কনভেনশন হলে প্রশিক্ষণ দেওয়ার আগে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় আরো অন্তত চারটি প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। আগাম তথ্য পাওয়ার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জালে আটক হওয়ার কারণে আরো একাধিক প্রশিক্ষণ পরিকল্পনা নস্যাৎ হয়ে যায়।

আগামী ৫ আগস্টকে ঘিরে নাশকতা তৈরি করে, গুজব ছড়িয়েÑসর্বোপরি সশস্ত্রভাবে অবস্থান নিয়ে রাজধানীর শাহবাগ দখল করার পরিকল্পনা করেছিল ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ। এ বিষয়ে আমার দেশ গত ২৮ জুলাই ‘দেশজুড়ে আওয়ামী নাশকতার ছক’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করলে ওই ষড়যন্ত্র ভেস্তে যায়। দেশব্যাপী তোলপাড় শুরু হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো নাশকতাকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করে। ২৮ জুলাই রাতে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ সারা দেশে ছয় দফা নির্দেশনা দিয়ে সতর্কতা জারি করে। সরকারের বিভিন্ন সংস্থা নড়েচড়ে বসে।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত