হাইকোর্টের রায়ে জটিল পরিস্থিতিতে ইসি

গাজী শাহনেওয়াজ
প্রকাশ : ১২ নভেম্বর ২০২৫, ০৯: ৪৫

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে সংসদীয় আসন বিন্যাস ইস্যুতে আদালত থেকে দেওয়া রায়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সংকটে পড়েছে। এই সংকট থেকে উত্তরণে আদালত থেকে রায়ের কপি হাতে পাওয়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়ার চিন্তা করছে ইসি। কারণ তারা মনে করছে, তফসিল ঘোষণার ঠিক আগে সীমানা নির্ধারণ নিয়ে মামলা থাকলে নির্বাচনে প্রভাব পড়তে পারে। ইসির দায়িত্বশীল সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

ইসির অতীত রেকর্ড বলছে, সংসদীয় আসন নিয়ে ইসির সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে সংক্ষুব্ধরা রিট করলেও তা খারিজ করেছিল আদালত। এমনকি ভারতে পলাতক হাসিনা সরকারের আজ্ঞাবহ কমিশনের আমলেও কেউ এ সুবিধা পায়নি।

বিজ্ঞাপন

নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি শক্তভাবে এই রায়ের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ না করা হয় তাহলে আগামীতে যে কোনো কমিশনের জন্য এটা নেতিবাচক উদাহরণ হয়ে থাকবে। এমনকি অসঙ্গতি থাকা সত্ত্বেও কোনো কমিশন সংসদীয় আসনের সীমানা বিন্যাস করতে সাহস দেখাবে না। একই সঙ্গে, দ্রুত আপিল করার পরামর্শ দিয়েছেন একজন নির্বাচন বিশেষজ্ঞ।

গত সোমবার সীমানা পুনঃনির্ধারণের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্ট। বিচারপতি শশাঙ্ক শেখর সরকার ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ার কাজলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করে।

রায়ে বলা হয়, বাগেরহাটে চারটি সংসদীয় আসনই বহাল থাকবে এবং গাজীপুরে একটি আসন কমানো হবে।

এর আগে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গত ৩০ জুলাই নির্বাচন কমিশন প্রাথমিকভাবে বাগেরহাটের চারটি আসন থেকে একটি কমিয়ে তিনটি করার প্রস্তাব দেয়। এরপর গত ৪ সেপ্টেম্বর ৩০০ সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ করে চূড়ান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে ইসি। এতে গাজীপুরে একটি আসন বাড়িয়ে মোট ৬টি এবং বাগেরহাটে একটি আসন কমিয়ে মোট ৩টি করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৬ সেপ্টেম্বর বাগেরহাটে চারটি সংসদীয় আসন বহাল রাখতে কেন নির্দেশনা দেওয়া হবে না এবং নির্বাচন কমিশনের প্রকাশিত গেজেটে আসন সংখ্যা চার থেকে তিনে কমানোর সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে হাইকোর্ট রুল জারি করে।

আপিল বিভাগের সিনিয়র আইনজীবী হাবিবুর রহমান আমার দেশকে বলেন, ইসি যে প্রক্রিয়ায় সংসদীয় আসনের সীমানা বিন্যাস করেছে তা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক না। আসন বিন্যাসে স্থানীয় মানুষের মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ণ হয়নি। সংবিধানে বলা আছে, ইসি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে। ইসির এখতিয়ারের উপরে কোনো জুডিশিয়ারি হস্তক্ষেপ করতে পারবে না।

তিনি আরো বলেন, সীমানা বিন্যাসের কাজগুলো আইনের সঠিকতা মেনে করা হয়েছে, এখানে আইনের কোনো ব্যত্যয় হয়েছে বলে আমার কাছে মনে হয়নি। আইনটি পর্যালোচনায় করে আমি দেখেছি, সীমানা বিন্যাস আইনের মধ্যে থেকে কমিশন তাদের কাজগুলো করেছে, এখানে তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থ নেই। কিংবা কোনো অসৎ উদ্দেশ্যে কাজটি করেনি। ইসির পক্ষ থেকে যদি এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিলে যায়, তাহলে সেটা আদালত বিবেচনায় না নিলে আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ড. আব্দুল আলীম আমার দেশকে বলেন, তফসিল ঘোষণার ঠিক একমাস আগে জনগুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে আদালত থেকে একটা রায় দেওয়া হয়েছে। এই রায়ের বিরুদ্ধে দ্রুত আপিল করা উচিত ইসির। অন্যথায় নির্বাচনে বড় প্রভাব পড়তে পারে।

ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ মঙ্গলবার নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের বলেন, সীমানা নির্ধারণ নিয়ে প্রায় ৩০টি মামলা আছে এবং সীমানা জটিলতায় প্রভাব পড়তে পারে নির্বাচনের তফসিলে। বাগেরহাটের সংসদীয় ৪টি আসন নিয়ে আদালতের রায়ের কপি পাওয়ার পরে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রি. জে. (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন আমার দেশকে বলেন, সীমানা নির্ধারণের ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের হাতে ন্যস্ত। তাই এটি চূড়ান্ত হয়ে যাওয়ার পর তা আদালতে চ্যালেঞ্জ করার সাংবিধানিক সুযোগ নেই। সীমানা বিন্যাস আইনে বলা হয়েছে, ইসির সীমানা নির্ধারণ নিয়ে দেশের কোনো আদালত বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষের কাছে প্রশ্ন তোলা যাবে না।

সাবেক এই নির্বাচন কমিশনার সিইসিকে পরামর্শ দিয়ে আরো বলেন, ওনার এখন উচিত প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দেখা করে আইনটির ব্যাখ্যা দেখানো এবং এর ফলে নির্বাচন ব্যাহত হতে পারে তা বোঝানো। একই সঙ্গে, যদি এ বিষয়ে শক্তভাবে পদক্ষেপ নিতে ইসি ব্যর্থ হয় তাহলে এ ইস্যুতে নেতিবাচক উদাহরণ তৈরি হয়ে থাকবে। আগামীতে কোনো কমিশন যৌক্তিক সংসদীয় আসন ভেঙে জনগণের সুবিধার্থে বিন্যাস করলে আদালতে শত শত মামলা হবে এবং ওই রায়ের রেফারেন্স হাজির করবে। ফলে নির্বাচন করা কমিশনের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ হবে।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত