ধলঘাট অর্থনৈতিক অঞ্চল
সোহাগ কুমার বিশ্বাস, চট্টগ্রাম
কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার ধলঘাট ইউনিয়ন। দক্ষিণ-পশ্চিমে বঙ্গোপসাগর, পূর্বদিকে কোহেলিয়া নদী, উত্তরের একাংশে মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য কৃত্রিম চ্যানেল তৈরি করা হয়েছে। অন্য অংশে লবণের মাঠ ও চিংড়িঘের। জোয়ারে পানিতে তলিয়ে যায় এলাকাটি। ভাটায় ডাঙা দেখা গেলেও চলাচলের উপযোগী থাকে না একেবারেই।
তবে হালে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের পেছন দিয়ে তিন চাকার অটো চলাচলের জন্য একটি মেঠোপথ তৈরি করে নিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। শুষ্ক মৌসুমে এখন স্বল্পপরিসরে অটোরিকশা চলাচল করছে। তবে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে দ্বীপের বাসিন্দাদের যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম এখনও নৌপথ। প্রায় দেড়শ বছর আগে জেগে ওঠা এই দ্বীপটিতে বর্তমানে ১৭ হাজার মানুষের বাস, যা এতদিন অবহেলিতি এবং একরকম লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকলেও ২০১৪ সালের পাতানো নির্বাচনে ক্ষমতা দখলের পর এই দ্বীপটিতে নজর পড়ে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের।
কয়লা বিদুৎকেন্দ্রের জন্য তৈরি করা চ্যানেলে গভীর সমুদ্রবন্দর করার পরিকল্পনা প্রকাশ হলে লুটেরা সিন্ডিকেটের কাছে দামি হয়ে ওঠে অবহেলিত দ্বীপটি। দেশজুড়ে ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল (ইকোনমিক জোন) তৈরির যে উদ্যোগ নেয় পতিত সরকার, তারই একটি ধলঘাট অর্থনৈতিক অঞ্চল।
নিয়মানুযায়ী অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে ছোট-বড় অনেক প্রতিষ্ঠানের নামে জমি বরাদ্দ দেওয়ার কথা থাকলেও এখানে প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা মাত্র তিনটি। পতিত সরকারের লুটেরা সিন্ডিকেটের হোতা এস আলম গ্রুপের জিনিক্স টেক্সটাইল, টিকে গ্রুপের সুপার পেট্রো কেমিক্যাল লিমিটেড ও লন্ডনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান সিয়াম গ্যাসের এ-দেশীয় এজেন্ট প্যাসিফিক গ্রুপের নামে লিখে দেওয়া হয়েছে দ্বীপটি।
খাতা-কলমে এই দ্বীপের এক হাজার ২৪০ একর জমিতে ধলঘাট ইকোনমিক জোনের জন্য অধিগ্রহণ করা হয়েছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। এর মধ্যে টিকে গ্রুপের নামে ৫১০ একর জমি, সিয়াম গ্যাসের নামে ১০০ একর, আর বাকিটা লিখে দেওয়া হয়েছে এস আলমের নামে। এস আলম গ্রুপ ও সিয়াম গ্যাস এখনও কাজ শুরু করেনি। তবে ভূমির মানোন্নয়নে কাজ শুরু করেছে টিকে গ্রুপ।
সরেজমিনে দেখা যায়, দ্বীপের শেষদিকে বঙ্গোপসাগর আর কুহেলিয়া নদীর মোহনায় জমি ভরাটের কাজ শুরু করছে টিকে গ্রুপ। ৫১০ একর জমি বরাদ্দ দেওয়া হলেও প্রতিষ্ঠানটি দখলে নিয়েছে বরাদ্দের বাইরেও বিপুল পরিমাণ জমি। ৮ নম্বর বেগুনবুনিয়া পণ্ডিতের ডেল ওয়ার্ডটি পুরোটাই দখল হয়ে গেছে একটি কোম্পানির কাছে। এখান থেকে উচ্ছেদ হওয়া প্রায় অর্ধশত পরিবারের ঠাঁই হয়েছে টিকে গ্রুপের বাউন্ডারির বাইরে ৪ নম্বর সরইতলা ওয়ার্ডের রাস্তার পাশের সরকারি খাসজমিতে। স্থানীয়দের কাছে এটি ‘উচ্ছেদপাড়া’ নামেই পরিচিতি পেয়েছে।
উচ্ছেদের শিকার বেগুনবুনিয়ার বাসিন্দা আলী আহমেদ জানান, অর্থনৈতিক অঞ্চলের অধিগ্রহণের বাইরে টিকে গ্রুপের ভরাট করা জমির মধ্যে ৭ একর ৪১ শতাংশ জমি তার। কয়েক বছর আগেও ওই জমিতে লবণ ও চিংড়ি চাষ করতেন তিনি। ২০২১ সালে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা বলে জমি ভরাট করে নিলেও একটি টাকাও পাননি এখনও।
একই এলাকার নুর ইসলামের ৭৪ শতাংশ জমি দখল করে নিয়েছে বেজার ইকোনমিক জোন প্রকল্প। স্ত্রী রেহানা বেগমকে সঙ্গে নিয়ে সরইতলা এলাকায় রাস্তার পাশের খাস জমিতে মাটির ঘর করে বসবাস করেন প্রতিবন্ধী বেলাল উদ্দিন। আগে তার বাড়ি ছিলো বেগুনবুনিয়া গ্রামের মাঝখানে। পৈত্রিকসূত্রে পাওয়া ৫০ শতক জমিতে চাষাবাদ করেই জীবিকা চলত তার। পতিত সরকারের আগ্রাসী কথিত উন্নয়নে বাড়ি-ঘর, জমি-জমা সবই গেছে।
শরইতলা উচ্ছেদপাড়ায় দেখা মেলে আমেনা বেগমের। ৩০ বছর আগে বেগুনবুনিয়ার আব্দুল জলিলের সঙ্গে বিয়ে হয় তার। আধাপাকা ঘরে সাজানো-গোছানো সংসার ছিল। উচ্ছেদের শিকার হয়ে ২০২১ সাল থেকে ঠাঁই হয়েছে জীর্ণ-শীর্ণ মাটির ঘরে। তার দাবি ইকোনোমিক জোনের জন্য বরাদ্দ করা জমির বাইরেও বিপুল পরিমাণ জমি জবরদস্তি করে দখলে নেওয়া হচ্ছে।
এমনকি উচ্ছেদের পর যে এলাকায় পরিবারগুলো নতুন করে ঠাঁই নিয়েছেন, তার কাছাকাছিও চলে এসেছে দখলদাররা। ফলে এখান থেকেও নতুন করে উচ্ছেদ আতঙ্ক ঘিরে ধরেছে তাদের। ৪ নম্বর সরইতলা ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য মোক্তার আহমেদ জানান, বড় তিনটি গ্রুপের মধ্যে শুধু একটি গ্রুপ কাজ শুরু করেছে। আর এতেই পুরো একটি ওয়ার্ডের মানুষ উচ্ছেদ হয়ে গেছে। বাকি দুটি গ্রুপ যখন কাজ শুরু করবে, তখন আরও বিপুলসংখ্যক মানুষ উচ্ছেদের মুখে পড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
পরিবেশ বিপর্যয়ের শঙ্কা
১৫ থেকে ২০ ফুট উঁচু করে প্রায় সাড়ে ৫০০ একর জমি ভরাট করেছে টিকে গ্রুপ। ভরাট করার পুরো মাটি তোলা হয়েছে কোহেলিয়া নদী থেকে। অপরিকল্পিতভাবে বিপুল পরিমাণ বালু তোলার কারণে ভাঙন তৈরি হয়েছে দ্বীপের দক্ষিণ দিকের এলাকায় সাগর উপকূলে। যেখানে কিছুদিন আগেও বড় একটি ঝাউবাগান ছিল। বাগানের পুরো এলাকায় সাগরের ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে।
পরিবেশ গবেষক ইদ্রিস আলী জানান, যে কোনো নদী থেকে বালু তুলতে হলে বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে পরিকল্পনা করে কাটতে হয়। নইলে নদীর গতিপথ ও প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। এতে করে নদীতে জলজ প্রাণীর বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ে এবং পরিবেশের ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়ে। কোহেলিয়া নদীতে এমনটাই ঘটেছে। ফলে সাগর উপকূলীয় এলাকার পরিবেশে মারাত্মক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
বিচ্ছিন্ন দ্বীপটি নজরে এলো যেভাবে
মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি করতে ১৮ মিটার ড্রাফটের চ্যানেল তৈরির পর এই চ্যানেলকে কাজে লাগিয়ে গভীর সমুদ্রবন্দর তৈরির পরিকল্পনা করে হাসিনা সরকার। এখানে বন্দর হলে গুরুত্ব বাড়বে এলাকাটির—এই চিন্তা থেকেই পতিত সরকারের লুটেরা সিন্ডিকেটের প্রধান এস আলম গ্রুপের মালিক সাইফুল আলমের নজরে আসে দ্বীপটি।
ছলে-বলে-কৌশলে দ্বীপটি বাগিয়ে নেওয়ার ফন্দি আঁটেন তিনি। আর অর্থনৈতিক সহযোগিতার জন্য দলে ভেড়ান টিকে গ্রুপ ও সিয়াম গ্যাসকে। দ্বীপ দখলের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনস্থ প্রতিষ্ঠান বেজার সাবেক চেয়ারম্যান পবন চৌধুরীকেও সঙ্গে নেন তারা। দেশব্যাপী ১০০টি ইকোনমিক জোন তৈরির অপ্রয়োজনীয় ও লুটেরা প্রকল্পের মধ্যে ধলঘাট ইকোনমিক জোনের নাম ঢুকিয়ে দেন পবন।
পুরো দ্বীপেই ছড়িয়ে পড়েছে উচ্ছেদ আতঙ্ক
এক পাশে কথিত ইকোনমিক জোন, অন্য পাশে গভীর সমুদ্রবন্দর তৈরির কাজ চলছে। ফলে ধীরে ধীরে ছোট হয়ে আসছে ধলঘাট ইউনিয়নের আয়তন। বন্দরের প্রাথমিক পরিকল্পনায় উপকূলীয় এলাকায় মূল টার্মিনালসহ প্রশাসনিক ভবন স্থাপন করার পরিকল্পনা থাকলেও ভবিষ্যতে বন্দরের অপারেশন শুরু হলে অফডকসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ধলঘাটের বিকল্প নেই।
পুরো এলাকার ওপর চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের তৈরি করা ম্যাপে কয়লা বিদুৎকেন্দ্রের পেছনে প্রস্তাবিত রেললাইনের পাশে একটা এলাকায় পাবলিক জোন রাখা হয়েছে। তবে এখানে ধলঘাটের বাসিন্দারা থাকবেন, নাকি বন্দর-সংশ্লিষ্টদের আবাসন হবে—সে ব্যাপারে কিছুই বলা হয়নি। এর ওপর গত ১৫ বছরে দেশের সবকটি এলাকায় উন্নয়নের নামে বিভিন্ন লুটপাটের প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলেও ধলঘাটকে কেন্দ্র করে কিছুই হয়নি। ফলে পতিত সরকারের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে আগে-পরে এই দ্বীপের সবাইকেই উচ্ছেদ হতে হবে বলে আশঙ্কা করছেন বাসিন্দারা।
ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন না ধলঘাটের বাসিন্দারা
ধলঘাটের সমাজকর্মী সারোয়ার আলম জানান, দ্বীপটি ছিল একেবারেই অবহেলিত। ১০ বছর আগেও মূল ভূখণ্ডের কারও পা পড়েনি বিচ্ছিন্ন এই দ্বীপে। ফলে বাপ-দাদার আমল থেকে ভোগদখল করে এলেও অনেকেই জমির সঠিক কাগজপত্র করতে পারেননি। এতদিন এসবের প্রয়োজনও পড়েনি।
বেজা ইকোনমিক জোন ঘোষণা করার আগে সবাইকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আশ্বাস দিলেও কাগজপত্রের মারপ্যাঁচের কারণে অধিকাংশ মানুষই ক্ষতিপূরণের টাকা তুলতে পারেননি। আর এ বিষয়টিকে বড় সুযোগ হিসেবে দেখছে বরাদ্দ পাওয়া কোম্পানিগুলো। সাধারণ মানুষকে ভয় দেখিয়ে নামমাত্র টাকা ধরিয়ে দিয়ে দখল করে নিচ্ছে তাদের পৈতৃক জমি। টিকে ও প্যাসিফিক বিপুল পরিমাণ জমি বরাদ্দ নিলেও ভূমিদস্যু গ্রুপ এস আলম বরাদ্দ নিয়েছে অন্যদের তিন ভাগের এক ভাগ জমি। কারণ, তাদের লক্ষ্যই ছিল সাধারণ মানুষের জমি দখল করে নেওয়া।
টিকে গ্রুপের বক্তব্য
টিকে গ্রুপের প্রজেক্ট ম্যানেজার জিকু বিশ্বাস বলেন, ধলঘাট ইকোনমিক জোনে তাদের নামে বরাদ্দ করা জমির মানোন্নয়নের কাজ চলছে। অবকাঠামোগত ডিজাইনে বরাদ্দ পাওয়া জমির বাইরে অল্প পরিমাণ জমির প্রয়োজন পড়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে তা ন্যায্য দামে কিনে নেওয়া হয়েছে। কারও জমি দখল করা হয়নি। জিকু বিশ্বাস আরও বলেন, নির্ধারিত জমিতে জ্বালানি তেল পরিশোধন করে তা ইস্টার্ন রিফাইনারির এসপিএম প্রজেক্টে সরবরাহ করার পরিকল্পনা রয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৯ সালে কারখানাটি উৎপাদনে যাবে।
অর্থনীতিবিদদের বক্তব্য
ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটির সাবেক উপাচার্য মুহম্মদ সিকান্দার খান বলেন, ইকোনমিক জোনের নামে মাত্র তিনটি গ্রুপের কাছে একটি জনপদ লিখে দেওয়া কাগজ-কলমে হয়তো বেআইনি হবে না; কিন্তু এটা পুরোপুরিই অনৈতিক। যার সঙ্গে সরাসরি রাষ্ট্র জড়িত। এর ওপর কাগজপত্রের ধুয়ো তুলে বিচ্ছিন্ন দ্বীপের অবহেলিত বাসিন্দাদের উচ্ছেদ করা রাষ্ট্রীয় প্রতারণার অংশ। বিগত সরকার তা অবলীলায় করে গেলেও অন্তর্বর্তী সরকার বিষয়টি নিয়ে নতুন করে ভাববে বলে মনে করেন তিনি।
আর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক নসরুল কদিরের মতে, বিগত সরকারের প্রতিটি প্রকল্প কোনো না কোনো গোষ্ঠীকে সুবিধা দিয়েছে। ধলঘাট ইকোনমিক জোনও তেমনই একটি প্রকল্প। এখানে একদিকে সরকারি টাকা তিনটি গ্রুপের কাছে বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে; অন্যদিকে অবহেলিত জনপদের বাসিন্দাদের ঠকানো হয়েছে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে।
বেজার বক্তব্য
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেজার একজন অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা বলেন, ‘অর্থনৈতিক অঞ্চলের কথা বলে মূলত দেশের বিভিন্ন এলাকার জমি লুটেরা সিন্ডিকেটের হাতে তুলে দেওয়ায় পতিত সরকারের লক্ষ্য ছিল। উন্মুক্ত টেন্ডারের মাধ্যমে প্লট বরাদ্দ দেওয়ার নিয়ম থাকলেও এ প্রকল্পে সেই নিয়ম মানা হয়নি। প্রতিটি অর্থনৈতিক অঞ্চলে অসংখ্য প্রতিষ্ঠান থাকার নিয়ম থাকলেও এমআইডিআই নিয়মানুসারে একের অধিক প্রতিষ্ঠান থাকলেও তাকে শিল্পাঞ্চল ঘোষণা করা যায়।
তবে আগে এই পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়নি কখনও। ধলঘাট দ্বীপটিকেও এ আইনের ফাঁক গলে মাত্র তিনটি গ্রুপের কাছে লিখে দেওয়া হয়েছে। তবে প্রকল্পটি নিয়ে নতুন করে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। প্রকল্প থেকে এস আলম গ্রুপকে বাদ দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। টিকে ও প্যাসিফিককেও বরাদ্দ করা জমির ভেতরে থেকে কাজ করার নির্দেশনা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে তা এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি কাউকে।
বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুনকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি। এমনকি এসএমএস করেও সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে সম্প্রতি ঢাকার একটি পাঁচতারকা হোটেলে ইকোনমিক জোনের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কিত এক সেমিনারে বাংলাদেশে ১০০টি ইকোনমিক জোনের কোনো প্রয়োজন নেই বলে উল্লেখ করেন তিনি। বলেন, তাই এ প্রকল্পগুলো বাদে মূলত মিরসরাই ইকোনমিক জোনসহ গুরুত্বপুর্ণ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে বেশি মনোযোগী বেজা। ধলঘাটসহ অন্যান্য জোনে উচ্ছেদসহ যে কোনো অভিযোগ আগে থাকলেও ভবিষ্যতে আর উঠবে না বলেও জানান তিনি।
কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার ধলঘাট ইউনিয়ন। দক্ষিণ-পশ্চিমে বঙ্গোপসাগর, পূর্বদিকে কোহেলিয়া নদী, উত্তরের একাংশে মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য কৃত্রিম চ্যানেল তৈরি করা হয়েছে। অন্য অংশে লবণের মাঠ ও চিংড়িঘের। জোয়ারে পানিতে তলিয়ে যায় এলাকাটি। ভাটায় ডাঙা দেখা গেলেও চলাচলের উপযোগী থাকে না একেবারেই।
তবে হালে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের পেছন দিয়ে তিন চাকার অটো চলাচলের জন্য একটি মেঠোপথ তৈরি করে নিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। শুষ্ক মৌসুমে এখন স্বল্পপরিসরে অটোরিকশা চলাচল করছে। তবে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে দ্বীপের বাসিন্দাদের যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম এখনও নৌপথ। প্রায় দেড়শ বছর আগে জেগে ওঠা এই দ্বীপটিতে বর্তমানে ১৭ হাজার মানুষের বাস, যা এতদিন অবহেলিতি এবং একরকম লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকলেও ২০১৪ সালের পাতানো নির্বাচনে ক্ষমতা দখলের পর এই দ্বীপটিতে নজর পড়ে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের।
কয়লা বিদুৎকেন্দ্রের জন্য তৈরি করা চ্যানেলে গভীর সমুদ্রবন্দর করার পরিকল্পনা প্রকাশ হলে লুটেরা সিন্ডিকেটের কাছে দামি হয়ে ওঠে অবহেলিত দ্বীপটি। দেশজুড়ে ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল (ইকোনমিক জোন) তৈরির যে উদ্যোগ নেয় পতিত সরকার, তারই একটি ধলঘাট অর্থনৈতিক অঞ্চল।
নিয়মানুযায়ী অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে ছোট-বড় অনেক প্রতিষ্ঠানের নামে জমি বরাদ্দ দেওয়ার কথা থাকলেও এখানে প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা মাত্র তিনটি। পতিত সরকারের লুটেরা সিন্ডিকেটের হোতা এস আলম গ্রুপের জিনিক্স টেক্সটাইল, টিকে গ্রুপের সুপার পেট্রো কেমিক্যাল লিমিটেড ও লন্ডনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান সিয়াম গ্যাসের এ-দেশীয় এজেন্ট প্যাসিফিক গ্রুপের নামে লিখে দেওয়া হয়েছে দ্বীপটি।
খাতা-কলমে এই দ্বীপের এক হাজার ২৪০ একর জমিতে ধলঘাট ইকোনমিক জোনের জন্য অধিগ্রহণ করা হয়েছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। এর মধ্যে টিকে গ্রুপের নামে ৫১০ একর জমি, সিয়াম গ্যাসের নামে ১০০ একর, আর বাকিটা লিখে দেওয়া হয়েছে এস আলমের নামে। এস আলম গ্রুপ ও সিয়াম গ্যাস এখনও কাজ শুরু করেনি। তবে ভূমির মানোন্নয়নে কাজ শুরু করেছে টিকে গ্রুপ।
সরেজমিনে দেখা যায়, দ্বীপের শেষদিকে বঙ্গোপসাগর আর কুহেলিয়া নদীর মোহনায় জমি ভরাটের কাজ শুরু করছে টিকে গ্রুপ। ৫১০ একর জমি বরাদ্দ দেওয়া হলেও প্রতিষ্ঠানটি দখলে নিয়েছে বরাদ্দের বাইরেও বিপুল পরিমাণ জমি। ৮ নম্বর বেগুনবুনিয়া পণ্ডিতের ডেল ওয়ার্ডটি পুরোটাই দখল হয়ে গেছে একটি কোম্পানির কাছে। এখান থেকে উচ্ছেদ হওয়া প্রায় অর্ধশত পরিবারের ঠাঁই হয়েছে টিকে গ্রুপের বাউন্ডারির বাইরে ৪ নম্বর সরইতলা ওয়ার্ডের রাস্তার পাশের সরকারি খাসজমিতে। স্থানীয়দের কাছে এটি ‘উচ্ছেদপাড়া’ নামেই পরিচিতি পেয়েছে।
উচ্ছেদের শিকার বেগুনবুনিয়ার বাসিন্দা আলী আহমেদ জানান, অর্থনৈতিক অঞ্চলের অধিগ্রহণের বাইরে টিকে গ্রুপের ভরাট করা জমির মধ্যে ৭ একর ৪১ শতাংশ জমি তার। কয়েক বছর আগেও ওই জমিতে লবণ ও চিংড়ি চাষ করতেন তিনি। ২০২১ সালে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা বলে জমি ভরাট করে নিলেও একটি টাকাও পাননি এখনও।
একই এলাকার নুর ইসলামের ৭৪ শতাংশ জমি দখল করে নিয়েছে বেজার ইকোনমিক জোন প্রকল্প। স্ত্রী রেহানা বেগমকে সঙ্গে নিয়ে সরইতলা এলাকায় রাস্তার পাশের খাস জমিতে মাটির ঘর করে বসবাস করেন প্রতিবন্ধী বেলাল উদ্দিন। আগে তার বাড়ি ছিলো বেগুনবুনিয়া গ্রামের মাঝখানে। পৈত্রিকসূত্রে পাওয়া ৫০ শতক জমিতে চাষাবাদ করেই জীবিকা চলত তার। পতিত সরকারের আগ্রাসী কথিত উন্নয়নে বাড়ি-ঘর, জমি-জমা সবই গেছে।
শরইতলা উচ্ছেদপাড়ায় দেখা মেলে আমেনা বেগমের। ৩০ বছর আগে বেগুনবুনিয়ার আব্দুল জলিলের সঙ্গে বিয়ে হয় তার। আধাপাকা ঘরে সাজানো-গোছানো সংসার ছিল। উচ্ছেদের শিকার হয়ে ২০২১ সাল থেকে ঠাঁই হয়েছে জীর্ণ-শীর্ণ মাটির ঘরে। তার দাবি ইকোনোমিক জোনের জন্য বরাদ্দ করা জমির বাইরেও বিপুল পরিমাণ জমি জবরদস্তি করে দখলে নেওয়া হচ্ছে।
এমনকি উচ্ছেদের পর যে এলাকায় পরিবারগুলো নতুন করে ঠাঁই নিয়েছেন, তার কাছাকাছিও চলে এসেছে দখলদাররা। ফলে এখান থেকেও নতুন করে উচ্ছেদ আতঙ্ক ঘিরে ধরেছে তাদের। ৪ নম্বর সরইতলা ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য মোক্তার আহমেদ জানান, বড় তিনটি গ্রুপের মধ্যে শুধু একটি গ্রুপ কাজ শুরু করেছে। আর এতেই পুরো একটি ওয়ার্ডের মানুষ উচ্ছেদ হয়ে গেছে। বাকি দুটি গ্রুপ যখন কাজ শুরু করবে, তখন আরও বিপুলসংখ্যক মানুষ উচ্ছেদের মুখে পড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
পরিবেশ বিপর্যয়ের শঙ্কা
১৫ থেকে ২০ ফুট উঁচু করে প্রায় সাড়ে ৫০০ একর জমি ভরাট করেছে টিকে গ্রুপ। ভরাট করার পুরো মাটি তোলা হয়েছে কোহেলিয়া নদী থেকে। অপরিকল্পিতভাবে বিপুল পরিমাণ বালু তোলার কারণে ভাঙন তৈরি হয়েছে দ্বীপের দক্ষিণ দিকের এলাকায় সাগর উপকূলে। যেখানে কিছুদিন আগেও বড় একটি ঝাউবাগান ছিল। বাগানের পুরো এলাকায় সাগরের ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে।
পরিবেশ গবেষক ইদ্রিস আলী জানান, যে কোনো নদী থেকে বালু তুলতে হলে বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে পরিকল্পনা করে কাটতে হয়। নইলে নদীর গতিপথ ও প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। এতে করে নদীতে জলজ প্রাণীর বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ে এবং পরিবেশের ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়ে। কোহেলিয়া নদীতে এমনটাই ঘটেছে। ফলে সাগর উপকূলীয় এলাকার পরিবেশে মারাত্মক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
বিচ্ছিন্ন দ্বীপটি নজরে এলো যেভাবে
মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি করতে ১৮ মিটার ড্রাফটের চ্যানেল তৈরির পর এই চ্যানেলকে কাজে লাগিয়ে গভীর সমুদ্রবন্দর তৈরির পরিকল্পনা করে হাসিনা সরকার। এখানে বন্দর হলে গুরুত্ব বাড়বে এলাকাটির—এই চিন্তা থেকেই পতিত সরকারের লুটেরা সিন্ডিকেটের প্রধান এস আলম গ্রুপের মালিক সাইফুল আলমের নজরে আসে দ্বীপটি।
ছলে-বলে-কৌশলে দ্বীপটি বাগিয়ে নেওয়ার ফন্দি আঁটেন তিনি। আর অর্থনৈতিক সহযোগিতার জন্য দলে ভেড়ান টিকে গ্রুপ ও সিয়াম গ্যাসকে। দ্বীপ দখলের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনস্থ প্রতিষ্ঠান বেজার সাবেক চেয়ারম্যান পবন চৌধুরীকেও সঙ্গে নেন তারা। দেশব্যাপী ১০০টি ইকোনমিক জোন তৈরির অপ্রয়োজনীয় ও লুটেরা প্রকল্পের মধ্যে ধলঘাট ইকোনমিক জোনের নাম ঢুকিয়ে দেন পবন।
পুরো দ্বীপেই ছড়িয়ে পড়েছে উচ্ছেদ আতঙ্ক
এক পাশে কথিত ইকোনমিক জোন, অন্য পাশে গভীর সমুদ্রবন্দর তৈরির কাজ চলছে। ফলে ধীরে ধীরে ছোট হয়ে আসছে ধলঘাট ইউনিয়নের আয়তন। বন্দরের প্রাথমিক পরিকল্পনায় উপকূলীয় এলাকায় মূল টার্মিনালসহ প্রশাসনিক ভবন স্থাপন করার পরিকল্পনা থাকলেও ভবিষ্যতে বন্দরের অপারেশন শুরু হলে অফডকসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ধলঘাটের বিকল্প নেই।
পুরো এলাকার ওপর চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের তৈরি করা ম্যাপে কয়লা বিদুৎকেন্দ্রের পেছনে প্রস্তাবিত রেললাইনের পাশে একটা এলাকায় পাবলিক জোন রাখা হয়েছে। তবে এখানে ধলঘাটের বাসিন্দারা থাকবেন, নাকি বন্দর-সংশ্লিষ্টদের আবাসন হবে—সে ব্যাপারে কিছুই বলা হয়নি। এর ওপর গত ১৫ বছরে দেশের সবকটি এলাকায় উন্নয়নের নামে বিভিন্ন লুটপাটের প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলেও ধলঘাটকে কেন্দ্র করে কিছুই হয়নি। ফলে পতিত সরকারের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে আগে-পরে এই দ্বীপের সবাইকেই উচ্ছেদ হতে হবে বলে আশঙ্কা করছেন বাসিন্দারা।
ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন না ধলঘাটের বাসিন্দারা
ধলঘাটের সমাজকর্মী সারোয়ার আলম জানান, দ্বীপটি ছিল একেবারেই অবহেলিত। ১০ বছর আগেও মূল ভূখণ্ডের কারও পা পড়েনি বিচ্ছিন্ন এই দ্বীপে। ফলে বাপ-দাদার আমল থেকে ভোগদখল করে এলেও অনেকেই জমির সঠিক কাগজপত্র করতে পারেননি। এতদিন এসবের প্রয়োজনও পড়েনি।
বেজা ইকোনমিক জোন ঘোষণা করার আগে সবাইকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আশ্বাস দিলেও কাগজপত্রের মারপ্যাঁচের কারণে অধিকাংশ মানুষই ক্ষতিপূরণের টাকা তুলতে পারেননি। আর এ বিষয়টিকে বড় সুযোগ হিসেবে দেখছে বরাদ্দ পাওয়া কোম্পানিগুলো। সাধারণ মানুষকে ভয় দেখিয়ে নামমাত্র টাকা ধরিয়ে দিয়ে দখল করে নিচ্ছে তাদের পৈতৃক জমি। টিকে ও প্যাসিফিক বিপুল পরিমাণ জমি বরাদ্দ নিলেও ভূমিদস্যু গ্রুপ এস আলম বরাদ্দ নিয়েছে অন্যদের তিন ভাগের এক ভাগ জমি। কারণ, তাদের লক্ষ্যই ছিল সাধারণ মানুষের জমি দখল করে নেওয়া।
টিকে গ্রুপের বক্তব্য
টিকে গ্রুপের প্রজেক্ট ম্যানেজার জিকু বিশ্বাস বলেন, ধলঘাট ইকোনমিক জোনে তাদের নামে বরাদ্দ করা জমির মানোন্নয়নের কাজ চলছে। অবকাঠামোগত ডিজাইনে বরাদ্দ পাওয়া জমির বাইরে অল্প পরিমাণ জমির প্রয়োজন পড়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে তা ন্যায্য দামে কিনে নেওয়া হয়েছে। কারও জমি দখল করা হয়নি। জিকু বিশ্বাস আরও বলেন, নির্ধারিত জমিতে জ্বালানি তেল পরিশোধন করে তা ইস্টার্ন রিফাইনারির এসপিএম প্রজেক্টে সরবরাহ করার পরিকল্পনা রয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৯ সালে কারখানাটি উৎপাদনে যাবে।
অর্থনীতিবিদদের বক্তব্য
ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটির সাবেক উপাচার্য মুহম্মদ সিকান্দার খান বলেন, ইকোনমিক জোনের নামে মাত্র তিনটি গ্রুপের কাছে একটি জনপদ লিখে দেওয়া কাগজ-কলমে হয়তো বেআইনি হবে না; কিন্তু এটা পুরোপুরিই অনৈতিক। যার সঙ্গে সরাসরি রাষ্ট্র জড়িত। এর ওপর কাগজপত্রের ধুয়ো তুলে বিচ্ছিন্ন দ্বীপের অবহেলিত বাসিন্দাদের উচ্ছেদ করা রাষ্ট্রীয় প্রতারণার অংশ। বিগত সরকার তা অবলীলায় করে গেলেও অন্তর্বর্তী সরকার বিষয়টি নিয়ে নতুন করে ভাববে বলে মনে করেন তিনি।
আর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক নসরুল কদিরের মতে, বিগত সরকারের প্রতিটি প্রকল্প কোনো না কোনো গোষ্ঠীকে সুবিধা দিয়েছে। ধলঘাট ইকোনমিক জোনও তেমনই একটি প্রকল্প। এখানে একদিকে সরকারি টাকা তিনটি গ্রুপের কাছে বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে; অন্যদিকে অবহেলিত জনপদের বাসিন্দাদের ঠকানো হয়েছে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে।
বেজার বক্তব্য
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেজার একজন অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা বলেন, ‘অর্থনৈতিক অঞ্চলের কথা বলে মূলত দেশের বিভিন্ন এলাকার জমি লুটেরা সিন্ডিকেটের হাতে তুলে দেওয়ায় পতিত সরকারের লক্ষ্য ছিল। উন্মুক্ত টেন্ডারের মাধ্যমে প্লট বরাদ্দ দেওয়ার নিয়ম থাকলেও এ প্রকল্পে সেই নিয়ম মানা হয়নি। প্রতিটি অর্থনৈতিক অঞ্চলে অসংখ্য প্রতিষ্ঠান থাকার নিয়ম থাকলেও এমআইডিআই নিয়মানুসারে একের অধিক প্রতিষ্ঠান থাকলেও তাকে শিল্পাঞ্চল ঘোষণা করা যায়।
তবে আগে এই পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়নি কখনও। ধলঘাট দ্বীপটিকেও এ আইনের ফাঁক গলে মাত্র তিনটি গ্রুপের কাছে লিখে দেওয়া হয়েছে। তবে প্রকল্পটি নিয়ে নতুন করে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। প্রকল্প থেকে এস আলম গ্রুপকে বাদ দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। টিকে ও প্যাসিফিককেও বরাদ্দ করা জমির ভেতরে থেকে কাজ করার নির্দেশনা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে তা এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি কাউকে।
বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুনকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি। এমনকি এসএমএস করেও সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে সম্প্রতি ঢাকার একটি পাঁচতারকা হোটেলে ইকোনমিক জোনের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কিত এক সেমিনারে বাংলাদেশে ১০০টি ইকোনমিক জোনের কোনো প্রয়োজন নেই বলে উল্লেখ করেন তিনি। বলেন, তাই এ প্রকল্পগুলো বাদে মূলত মিরসরাই ইকোনমিক জোনসহ গুরুত্বপুর্ণ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে বেশি মনোযোগী বেজা। ধলঘাটসহ অন্যান্য জোনে উচ্ছেদসহ যে কোনো অভিযোগ আগে থাকলেও ভবিষ্যতে আর উঠবে না বলেও জানান তিনি।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে বিভিন্ন মেরূকরণ। এ নির্বাচনে কোন দল ক্ষমতায় আসবে, কোন দল কার সঙ্গে সমঝোতা বা জোট করে ভোট করবেÑএসব বিষয় নিয়ে আলোচনা ও তৎপরতাও জোরদার হচ্ছে। বিশেষ করে ইসলামি দলগুলোকে নিয়ে সাধারণ ভোটারদের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট মহলে বিশেষ আগ্রহ তৈরি হয়েছে।
৬ ঘণ্টা আগেনীলের দেশখ্যাত নীলফামারী দীর্ঘদিন শোষণ করেছিল ইংরেজরা। তাদের স্থানীয় নিপীড়ক নীলকরদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ ছিলেন উত্তরের এই জেলার চাষিরা। ২০০ বছর পর সেই নিষ্ঠুর ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি করেন আওয়ামী ‘কসাই’খ্যাত আসাদুজ্জামান নূর।
১১ ঘণ্টা আগেআগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনায় জেলা প্রশাসকদেরই (ডিসি) রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ হিসেবে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকার দুজন বিভাগীয় কমিশনার এবং ৬৪ জন ডিসিসহ ৬৬ জন রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ করা হবে।
১ দিন আগেবছরের প্রায় ১০ মাস পার হলেও মাধ্যমিক স্তরের বিনামূল্যের পাঠ্যবই ছাপানোর কাজ শুরু হয়নি। এমনকি পাঠ্যবইয়ের কনটেন্টও পুরোপুরি প্রস্তুত হয়নি; এখনো চলছে পরিবর্তন-পরিমার্জনের কাজ। এছাড়া ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদনও মেলেনি এখনো।
১ দিন আগে