টেন্ডার জটিলতায় পিছিয়ে স্কুল ফিডিং কার্যক্রম

সরদার আনিছ
প্রকাশ : ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮: ৩৬

চলতি বছরের জানুয়ারিতে দেশের ১৯ হাজার ৪১৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ‘মিড ডে মিল’ বা স্কুল ফিডিং কর্মসূচি শুরুর কথা থাকলেও নানা জটিলতায় পিছিয়ে গেছে। সর্বশেষ সেপ্টেম্বরে চালুর কথা বলা হলেও টেন্ডার জটিলতায় তা আটকে আছে। শিক্ষার্থীদের পুষ্টি নিশ্চিত করা ও ঝরে পড়ার হার কমাতে ১৫০টি উপজেলার ৩১ লাখ ৩০ হাজার শিশুর জন্য এ কার্যক্রম চালুর উদ্যোগ নেয় সরকার। ২০২৭ সাল পর্যন্ত এ কর্মসূচি চলার কথা রয়েছে।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্র জানায়, বর্তমানে মিড ডে মিল প্রকল্পের জন্য লাইভ টেন্ডার প্রক্রিয়া চলছে। প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে দেরি হওয়ায় সেপ্টেম্বরে প্রকল্পটি চালু হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। তবে টেন্ডার কার্যক্রম শেষ হওয়ার পর দ্রুতই এ কর্মসূচি চালু হতে পারে।

বিজ্ঞাপন

প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিনের এই খাদ্যতালিকা শিক্ষার্থীদের পুষ্টি নিশ্চিত করবে এবং ক্ষুধার তাড়না থেকে মুক্তি দিয়ে শ্রেণিকক্ষে মনোযোগ বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে। এছাড়া প্রাথমিক শিক্ষায় ঝরে পড়ার হার কমবে এবং বিদ্যালয়ে উপস্থিতির হার উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে। প্রকল্পে মোট বরাদ্দ রাখা হয়েছে পাঁচ হাজার ৪৫২ কোটি টাকার বেশি। এর মধ্যে ৯৭ শতাংশ ব্যয়ই বরাদ্দ রাখা হয়েছে খাদ্য সরবরাহের জন্য। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে প্রকল্পটির জন্য বরাদ্দ নির্ধারণ করা হয়েছে দুই হাজার ১৬৪ কোটি টাকার বেশি।

এ প্রসঙ্গে গত রোববার সচিবালয়ে আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, মিড ডে মিলের কাজ এগোচ্ছে। সেপ্টেম্বরের শেষ বা আগামী অক্টোবরের শুরুতে দেশের ১৫০টি উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ‘মিড ডে মিল’ চালু করা হচ্ছে।

উপদেষ্টা বলেন, আমরা ডিপিপি তৈরি করি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) রিপোর্ট অনুযায়ী সেটি আগে তৈরি হয়। এরপর প্রক্রিয়া মেনে এটি একনেকে উপস্থাপন করেছিলাম, তখন বিবিএসের নতুন পরিসংখ্যান বের হলো। আমাদের বলা হলো, আপনারা নতুন পরিসংখ্যান অনুযায়ী করুন। একটি জেলার কোন অঞ্চল বেশি দরিদ্র, সেটি তো পরিবর্তন হয়েছে। নতুন করে আবার এটিকে ঠিক করে পাস করাতে হলো। এ জন্য কিছুটা বিলম্ব হয়েছে।

প্রকল্পটির আওতায় স্কুল চলাকালীন শিক্ষার্থীদের সপ্তাহে পাঁচ দিন সরবরাহ করা হবে পুষ্টিকর খাবার। এর মধ্যে রয়েছে বনরুটি, সেদ্ধ ডিম, ইউএইচটি দুধ, ফরটিফাইড বিস্কুট এবং মৌসুমি ফল বা কলা। সপ্তাহের রবি, মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার শিক্ষার্থীদের পরিবেশন করা হবে বনরুটি ও সেদ্ধ ডিম। সোমবার বনরুটি ও দুধ এবং বুধবার মিলবে ফরটিফাইড বিস্কুট ও মৌসুমি ফল বা কলা। প্রতিটি বনরুটির ওজন নির্ধারণ করা হয়েছে ১২০ গ্রাম, প্রতিটি ডিম ৬০ গ্রাম, দুধ ২০০ গ্রাম, বিস্কুট ৭৫ গ্রাম ও ফল ১০০ গ্রাম।

এছাড়া উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নেতৃত্বে স্কুল ফিডিং মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে রয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা, মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা, নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শকসহ প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তারা। প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রশিক্ষণও গুরুত্ব পাচ্ছে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মকর্তাদের জন্য আয়োজন করা হবে ১৯২টি ব্যাচে ওরিয়েন্টেশন ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচি। এতে অংশ নেবেন প্রায় ১৯ হাজার ৭১৯ শিক্ষক ও কর্মকর্তা।

প্রকল্প পরিচালক (পিডি) ও যুগ্ম সচিব হারুন অর রশীদ বলেন, প্রকল্পটির অনেক কাজ এগিয়েছে। আশা করছি খুব শিগগিরই চালু হবে।

প্রসঙ্গত, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতায় এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। প্রাথমিকভাবে দেশের আট বিভাগের ৬২ জেলার ১৫০ উপজেলার ১৯ হাজার ৪১৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩১ লাখ ৩০ হাজার শিক্ষার্থীকে এ প্রকল্পের আওতায় আনা হবে। প্রকল্পটি সফল হলে পর্যায়ক্রমে সারা দেশের স্কুলগুলোতে এই কর্মসূচি চালু করা হবে।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত