কর্মস্থলে অনুপস্থিত দুই শতাধিক চিকিৎসক

আজাদুল আদনান
প্রকাশ : ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৯: ০২

দেশের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে প্রয়োজন অনুযায়ী চিকিৎসকদের পদায়ন স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু উচ্চতর শিক্ষা ও উন্নত কর্ম পরিবেশের অভাব ও রাজনৈতিক কারণসহ নানা কারণে পদায়ন হওয়ার পরও কর্মস্থলে যোগদান করেননি বহু চিকিৎসক।

এতে হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। গত এক বছরের বেশি সময়ে দুই শতাধিক চিকিৎসক নির্দিষ্ট কর্মস্থলে যোগ দেননি। আবার কাজে যোগ দেওয়া অনেকেই নিয়মিত দায়িত্ব পালন করছেন না বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সূত্রে জানা গেছে।

বিজ্ঞাপন

এসব ঘটনায় দফায় দফায় চিকিৎসকদের চিঠি দিচ্ছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। নোটিস পেয়ে কেউ কেউ যোগদান করলেও কানে তুলছেন না অনেক চিকিৎসক। তবে এটাই শেষ বার্তা বলে জানিয়েছে সরকারের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ। কাজে না ফিরলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।

মেডিকেল অফিসার ডা. মুহাম্মদ নাজমুল আলম। গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বদলি করা হলেও আট মাসেও যোগদান করেননি।

অন্যদিকে দুই দফায় হবিগঞ্জ ও কক্সবাজারে, পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে বদলি করা হয় কার্ডিওলজিস্ট মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমানকে। কিন্তু বদলির দেড় বছর হলেও কর্মস্থলে যোগদান না করায় গত ৭ আগস্ট ডা. মোস্তাফিজকে নোটিস পাঠায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

জানতে চাইলে ডা. মোস্তাফিজুর আমার দেশকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন অনুপস্থিত থাকার বেশির ভাগ সময়ই আওয়ামী লীগের আমলে। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামে বদলি করা হলেও রাজনৈতিক কারণে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়। যদিও অনেক চেষ্টার পর ঢুকেছিলাম। চব্বিশের নির্বাচনের পর আবারও হবিগঞ্জে পাঠানো হয়। সেখানে যেতে চাইলেও সে অর্ডারে ভুল হওয়ায় মন্ত্রণালয়ে সংশোধনী দিয়েছিলাম, কিন্তু স্থানীয় স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (আওয়ামীপন্থি চিকিৎসকদের সংগঠন) নেতা বদলির আদেশ লুকিয়ে রাখেন। এমনকি চব্বিশের নির্বাচনের ৫ জুলাই নতুন করে অর্ডার হয়, ছাড়পত্র আনতে গেলে দেয়নি কর্তৃপক্ষ। ফলে সেটি দীর্ঘদিন ঝুলেছিল। পরে মন্ত্রণালয়ে আবারও আবেদন করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে পদায়ন নিই। বর্তমানে সেখানে কর্মরত রয়েছি। মন্ত্রণালয় তদন্তও করেছে।’ কখনো অননুমোদিত ছুটি কাটাননি বলেও দাবি করেন এ চিকিৎসক।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চব্বিশের ৫ আগস্ট থেকে চলতি বছরের ১০ আগস্ট পর্যন্ত এক বছরের বেশি সময় আট হাজার ২৭৬ জন চিকিৎসককে বদলি করা হয়েছে। এর মধ্যে কর্মস্থলে যোগ দিয়েছেন আট হাজার ১৯ জন। অপেক্ষায় রয়েছেন প্রায় ৫৭ জন। বাকি ২০০ চিকিৎসকের বেশির ভাগই কর্মস্থলে যোগ দেননি। বাকিরা কাজে যোগ দিলেও ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করছেন না।

সরকারি চাকরিবিধি অনুযায়ী, প্রজ্ঞাপন জারির তিন কর্মদিবসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা দায়িত্ব হস্তান্তর করবেন, অন্যথায় চতুর্থ দিন থেকে সরাসরি অবমুক্ত হয়েছে বলে গণ্য করা হবে। পদায়িত কর্মস্থলে অবশ্যই যোগদান করতে হবে, এর বাইরে অন্যত্র বদলির আবেদন গ্রহণযোগ্য নয়। একই সঙ্গে বদলি হওয়া কর্মস্থলে যোগদান না করলে অসদাচরণ বলে বিবেচনা করা এবং বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের শৃঙ্খলা বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, ‘৫ আগস্টের পর নতুন কর্মস্থলে যোগদান করা চিকিৎসকের সংখ্যা হাজারের মতো ছিল। পরে ধীরে ধীরে কমতে থাকে। কারো বিরুদ্ধে কঠোর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া না হলেও নোটিস দেওয়ায় চাকরি বাঁচাতে অনেকে যোগদান করতে বাধ্য হন। অনুপস্থিত থাকা এসব চিকিৎসকের মধ্যে আওয়ামীপন্থি চিকিৎসক ছাড়াও শিক্ষা ছুটি, অন্যত্র যুক্ত হওয়া, পছন্দমতো কর্মস্থল না পাওয়ার মতো কারণও রয়েছে।’ এমনকি বদলিকৃত কর্মস্থলে যোগদান করেই নতুন কর্মস্থলের জন্য সুপারিশ করার মতো ঘটনা ঘটেছে বলেও জানান তিনি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. এবিএম আবু হানিফ আমার দেশকে বলেন, ‘বদলি হওয়া চিকিৎসকদের অধিকাংশই যোগদান করেন। শুরুর দিকে সমস্যাটা বেশি থাকলেও এখন অনেকটা কমেছে। তারপরও অনেকে এখন পর্যন্ত অপেক্ষায় আছেন; অনেকে যোগদান করেননি। আবার কেউ যোগদান করলেও কাজে নেই। আমাদের কাছে যেসব রিপোর্ট আসছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রণালয়ের পাঠানো হচ্ছে।’

জানতে চাইলেÑস্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব সাইদুর রহমান আমার দেশকে বলেন, ‘খারাপ পোস্টিং হয়েছে দাবি করে অনেকে যেতে চায় না। গত ২৬ আগস্টও অনেক জনকে নোটিস দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের অন্যান্য কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকায় এটাতে নজর দেওয়া হয়নি। কিন্তু বিষয়টিতে এখন গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এটাই শেষ চিঠি, এরপরও কেউ যোগদান না করলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত