শতবর্ষী আলোকবর্তিকা

সরকারিকরণের ঘোষণা আজও বাস্তবায়ন হয়নি

রাকিব হোসেন, ঢাকা দক্ষিণ
প্রকাশ : ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ১০: ৪১
আপডেট : ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ১০: ৪৩
জিনজিরা পীর মোহাম্মদ পাইলট স্কুল অ্যান্ড কলেজ

ঢাকার কেরানীগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ জিনজিরা পীর মোহাম্মদ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজ। ১৯২২ সালে প্রতিষ্ঠা লাভের পর তৈরি হয়েছে তার শতবছরের গৌরবময় ইতিহাস। প্রতিষ্ঠানটি আলো ছড়াচ্ছে কেরানীগঞ্জের ১২ ইউনিয়ন ও পার্শ্ববর্তী এলাকায়। শিক্ষানুরাগী ও বিশিষ্ট দানবীর মরহুম খান বাহাদুর হাজী হাফেজ মোহাম্মদ হোসেন বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা।

বিজ্ঞাপন

১৯৫৮ সালে জিনজিরার শিক্ষানুরাগী মোহাম্মদ শরীফ হোসেন লাল মিয়া, চান মিয়া, হাজী সালাউদ্দিন উকিল এবং আব্দুল ছালাম বিকম-এর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি গঠিত হয়। ১৯৫৮ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন মরহুম মোহাম্মদ শামসুল হক চুন্নু মিয়া, শামসুল আলম চৌধুরী, মো. মোস্তফা, হোসেন মেহেদী, জাহেদ আলী, সিরাজ উদ্দিন ভূঁইয়া, গোলাম মোস্তফা, আব্দুল মজিদ, আব্দুল করিম, সাজেদুল হক, আলিমুদ্দিন আহমেদ, দেলোয়ার হোসেন, আজিজুর রহমান ও আলহাজ এমএ সোবাহান।

বিএনপির শাসনামলে ২০০৩ সালে জিনজিরা পিএম পাইলট স্কুল কলেজে উন্নীত হয়। তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী ড. ওসমান ফারুক এবং সাবেক শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী আমান উল্লাহ আমান কলেজ শাখা উদ্বোধন করেন। স্কুল শাখায় ৩২ বছর প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালনের পর এমএ সোবাহান কলেজ শাখার দায়িত্ব নেন। স্কুল-কলেজে একটানা ৪০ বছর দায়িত্ব পালন শেষে তিনি ২০০৮ সালে অবসরে যান। এরপর দায়িত্বে ছিলেন আবু বক্কর সিদ্দিক, হাবিবুর রহমান, মো. আব্দুল মালেক, মো. আমিনুল ইসলাম ও মো. ফারহাতুল বারী।

বিগত আওয়ামী শাসনামলে অধ্যক্ষ আবু বক্কর সিদ্দিকের বিরুদ্ধে ফ্যাসিবাদীদের যোগসাজশে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে। ২০২৪-এর ৫ আগস্ট-পরবর্তী ছাত্র আন্দোলনের তোপের মুখে তিনি পদত্যাগ করেন। এরপর থেকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মো. ফারহাতুল বারী।

বর্তমান ব্যবস্থাপনা কমিটি প্রতিষ্ঠানটির মানোন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—শিক্ষার মানোন্নয়নে সাপ্তাহিক ও মাসিক পরীক্ষা, ছাত্রছাত্রী-অভিভাবকদের নিয়ে মাসিক মতবিনিময় সভা, শিক্ষকদের মতবিনিময়, নিয়মিত উপস্থিতি, ক্রীড়াকক্ষ, বিতর্ক ও সাংস্কৃতিকচর্চা। বর্তমানে স্কুল শাখায় দুই হাজার ৭০০ এবং কলেজ শাখায় ৬২০ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ্, পল্লীকবি জসীমউদ্‌দীন, বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ আবুজর গিফারী, বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ আবুল হাসেম, শিক্ষা সচিব হেদায়েত আহমেদ, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ও স্পিকার জমির উদ্দিন সরকার, সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার আমিনুল হক, সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক মো. ইউনুস, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ওসমান ফারুক এবং সাবেক শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী আমান উল্লাহ আমানসহ অনেক প্রখ্যাত ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানটি পরিদর্শন করেছেন।

এ প্রতিষ্ঠানে ১৯৫৮ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত পাসের হার সন্তোষজনক। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি প্রতি বছর ‘আরশি’ নামে একটি স্মরণিকা বের করে আসছে। তাতে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী বিগত ৬৭ বছরের পাসের হার ৭৪ থেকে ৮৬ শতাংশ।

স্কুল শাখার প্রধান মো. মিজানুর রহমান আমার দেশকে বলেন, জিনজিরা পীর মোহাম্মদ পাইলট স্কুল প্রতিষ্ঠাকালে এলাকায় আর কোনো বিদ্যালয় ছিল না। ২০০৪ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজটি সরকারিকরণের ঘোষণা দিয়েছিলেন; কিন্তু স্থানীয় ব্যক্তিস্বার্থে তা বাস্তবায়িত হয়নি। রাজনৈতিক কারণে বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান কিছুটা কমে গেছে। তবে অতীত গৌরব ফিরিয়ে আনতে প্রচেষ্টা চলছে। বর্তমানে পড়াশোনার মান ভালো হচ্ছে এবং ভালো ছাত্রছাত্রীরা এখানে ভর্তি হচ্ছে।

ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. ফারহাতুল বারী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা জেলার সেরা তালিকায় আমাদের প্রতিষ্ঠানটি রয়েছে। অভিজ্ঞ শিক্ষকরা সেমিস্টার পদ্ধতিতে পাঠদান করেন। শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠাগার ও আধুনিক ল্যাব রয়েছে। নিয়মিত পড়া আদায় ও ক্লাস টেস্ট, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সিলেবাস সম্পন্ন করা, দুর্বল ও অনগ্রসর ছাত্রছাত্রীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা, মেধাবৃত্তি, সুরক্ষিত ও ধূমপানমুক্ত ক্যাম্পাস, মানবিক, বিজ্ঞান ও বাণিজ্য বিভাগ, জিনজিরা সমিতির অর্থায়নে এইচএসসিতে ভালো ফলাফলে হাজী নাজির হোসেন বৃত্তি প্রতিষ্ঠানটিকে অনন্য করেছে।

জিনজিরা পীর মোহাম্মদ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজের পরিচালনা পরিষদের বর্তমান সভাপতি স্থানীয় বিএনপি নেতা মো. মোকাররম হোসেন সাজ্জাদ। তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদী আওয়ামী শাসনামলে প্রতিষ্ঠানটিকে দলীয়করণ করা হয়েছিল। শিক্ষার মান ভালো ছিল না। অন্তর্বর্তী সরকার আমাকে দায়িত্ব দেওয়ার পর শিক্ষার মানোন্নয়নে বিভিন্ন ব্যবস্থা গৃহীত হয়েছে। অনেক প্রতিকূলতা ও বাধা পেরিয়ে এটি একটি আধুনিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিণত হতে চলেছে।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত