নজরুল ইসলাম, জয়পুরহাট
বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত জয়পুরহাটের দুটি আসনেই নির্বাচনি হাওয়া বইছে। ২০১৪, ১৮ এবং ২৪ সালে আওয়ামী লীগের প্রহসনের নির্বাচনে ভোট দিতে পারেননি সাধারণ জনগণ ও রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা। তারা মুখিয়ে আছেন আগামী নির্বাচনের জন্য। অনেক তরুণও বিগত ৩টি নির্বাচনে ভোট দিতে পারেননি। তারাও ভোট নিয়ে সক্রিয়। মুক্ত পরিবেশে এবার ভোটের পালে হাওয়া লেগেছে দারুণভাবে।
স্থানীয় ভোটারদের অনেকে মনে করছেন, আগামী নির্বাচনে সদর আসনে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে। তবে দলে কোন্দল না থাকলে অন্য আসনটিতে বিএনপি প্রার্থীর জয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।
জয়পুরহাট-১ (জয়পুরহাট সদর ও পাঁচবিবি) ও জয়পুরহাট-২ (কালাই, ক্ষেতলাল ও আক্কেলপুর) আসনে নির্বাচনি আমেজ শুরু হয়েছে ৫ আগস্টের পর থেকেই। দুটি আসনেই বিএনপি থেকে কাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে তা নিয়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। বিএনপির মনোনয়ন পেতে দলের বহু নেতা দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। দলের ভেতরে কার জনপ্রিয়তা বেশি তা নিয়েও নেতাকর্মীদের মধ্যে চলছে বাহাস।
এদিকে স্থানীয় বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল চলে আসছে অনেক আগে থেকেই। কার্যত দুই ভাগে বিভক্ত দলটি। জেলা পর্যায়ে প্রয়াত সাবেক মন্ত্রী আব্দুল আলিমের বড় ছেলে ফয়সল আলিম একাংশের নেতৃত্বে আছেন। অপর দিকে বর্তমান জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলজার হোসেন ও সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুদ রানা প্রধান আছেন অপর পক্ষের নেতৃত্বে। এই অংশটি জেলা কার্যালয়ে বসে। অপরাংশ বসে আরেক কার্যালয়ে। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রামেও তারা আলাদাভাবে দলীয় কর্মসূচি পালন করেছেন।
জয়পুরহাট সদর উপজেলা ও জয়পুরহাট পৌর বিএনপির কাউন্সিল হয় বর্তমান জেলা আহ্বায়ক কমিটির নেতৃত্বে। দলীয় কোন্দলের কারণে ফয়সল আলীমের নেতৃত্বাধীন নেতাকর্মীরা সেসব কাউন্সিলে অংশগ্রহণ করতে পারেননি।
তবে দীর্ঘদিন পর গত ২২ ফেব্রুয়ারি বিএনপির বিশাল সমাবেশে উভয় গ্রুপ অংশগ্রহণ করেন। সমাবেশ থেকে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানানো হয়। পাঁচবিবি উপজেলায়ও দলটি দু’ভাগে বিভক্ত। পাঁচবিবি উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাইফুল ইসলাম ডালিম ও সেক্রেটারি আব্দুল হান্নান বর্তমান জেলা আহ্বায়ক কমিটির অনুসারী। অপরদিকে ফয়সল আলিমের অনুসারী কুসুম্বা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আব্দুল গফুর মণ্ডল। তবে তিনিও মনোনয়ন চাইবেন বলে এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন। তবে সবাই আওয়ামী বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন।
অপরদিকে জয়পুরহাটের দুটি আসনেই জামায়াত প্রার্থিতা চূড়ান্ত করেছে। ৫ আগস্টের পর থেকেই দুই আসনের জামায়াতের দুই প্রার্থীর ব্যাপকভাবে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, নেতা-কর্মীদের নির্বাচনি প্রশিক্ষণ, কেন্দ্র পরিচালনা কমিটি গঠন এবং পোলিং এজেন্টদের তালিকা ও সবার প্রশিক্ষণ শেষ করা হয়েছে।
জয়পুরহাট -১ (সদর ও পাঁচবিবি)
১৯৯১ থেকে জয়পুরহাটের দুটি আসনই বিএনপির দখলে ছিল। ২০০৮ সালেও বিএনপি মনোনীত জয়পুরহাট-১ এ মোজাহার আলী প্রধান এবং জয়পুরহাট-২ আসনে ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০১৪, ১৮ এবং ২৪-এ পাতানো নির্বাচনে আসন দুটি দখলে নেয় আওয়ামী লীগ । এখন মাঠে নেই দলটি।
বিএনপির কয়েকজন সম্ভাব্য মনোনয়নপ্রত্যাশী গণসংযোগ শুরু করেছেন। ইতোমধ্যেই বিএনপির ছয় নেতা দলীয় মনোনয়ন চাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তারা হলেনÑ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলজার হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুদ রানা প্রধান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ফয়সল আলিম, বিশিষ্ট শিল্পপতি আনোয়ারুল হক আনু, যুক্তরাজ্য প্রবাসী তানজির আল ওয়াহাব এবং পাঁচবিবি উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আব্দুল গফুর মন্ডল।
গণসংযোগ ও বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগদান করে ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন তারা।
অপরদিকে অনেক আগেই একক প্রার্থীর ঘোষণা করে ব্যাপকভাবে নির্বাচনি কাজ চালিয়ে যাচ্ছে জামায়াত। তাদের দাবি, নির্বাচনের জন্য তারা সম্পূর্ণ প্রস্তুত।
জয়পুরহাট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলজার হোসেন মনোনয়নপ্রত্যাশী বলে আমার দেশকে জানিয়েছেন। তিনি জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি, যুবদলের নেতা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন দীর্ঘদিন। তিনি কয়েকবার পৌর কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছিলেন। প্যানেল মেয়র হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৫ বছর জুলুম-নির্যাতন ও মামলার শিকার হয়েছেন অনেকবার।
মাঠে সক্রিয়, উদারপন্থি ও কর্মীবান্ধব নেতা হিসেবে পরিচিত সাবেক এমপি প্রয়াত মোজাহার আলী প্রধানের সন্তান মাসুদ রানা প্রধান নিরলসভাবে কাজ করছেন। দলমত নির্বিশেষে সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে নির্বাচনি প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। তিনি জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি। হাসিনা সরকারের নিপীড়ন সহ্য করা এই নেতা অসংখ্য মামলার আসামি ছিলেন।
সাবেক মন্ত্রী প্রয়াত আব্দুল আলিমের বড় ছেলে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং বিশিষ্ট শিল্পপতি ফয়সল আলিম গণসংযোগে আছেন দীর্ঘদিন। তিনি হাসিনা পতনের আন্দোলনেও ছিলেন সক্রিয়। দলের জন্য এই নেতার পারিবারিক অবদানের কথা নেতাকর্মীদের আলোচনায় স্থান পায়। দলের জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে তার পরিবারকে।
জয়পুরহাটের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী জেলা বিএনপি নেতা মমতাজ উদ্দিন মন্ডলের বড় ছেলে বিশিষ্ট শিল্পপতি জয়পুরহাট চেম্বারের সাবেক সভাপতি আনোয়ারুল হক আনু মনোনয়ন চাইবেন বলে জানিয়েছেন। সদালাপী ও পরিচ্ছন্ন হিসেবে খ্যাত এই নেতা বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক সংস্কৃতির ইতিবাচক পরিবর্তন অত্যন্ত জরুরি। দেশের জন্য সব নাগরিকের কাজ করার সময় এসেছে। এই সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে। ইউকে আইনজীবী ফোরামের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জেলার সাবেক ছাত্রদল নেতা তানজির আল ওয়াহাব মাঠে থাকলে মাঠের চিত্র বদলেও যেতে পারে বলে তার অনুসারীদের অভিমত। নির্যাতিত নেতা আব্দুল গফুর মন্ডলও মনোনয়ন চাইবেন বলে জানিয়েছেন।
প্রত্যেক নেতাই অনুসারীদের নিয়ে নির্বাচনি প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে শেখ হাসিনার সময় আন্দোলন-সংগ্রামে যাদের দেখা মেলেনি অথবা অন্য দল করতেন তাদের অনেকেই এখন বিএনপি নেতাদের অনুসারি সেজেছেন। আওয়ামী লীগের দোসর অনেকেই এখন বিএনপি নেতাদের আশ্রয় পাচ্ছেন বলে খোদ বিএনপি নেতাকর্মীদের অভিযোগ।
অপরদিকে জামায়াতের একক প্রার্থী দলের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও জেলা জামায়াতের আমির ডা. ফজলুর রহমান সাঈদ দীর্ঘদিন ধরে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের জন্য আমরা সম্পূর্ণ প্রস্তুত। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করে সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হলে আমরাই বিজয়ী হব ইনশাআল্লাহ।’
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) থেকেও প্রার্থী দেওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। তবে উপজেলা কমিটি সম্পন্ন করার পর তারা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছেন।
এবি পার্টি থেকে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন স্থানীয় আলহেরা স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক প্রধান শিক্ষক সুলতান মোহাম্মদ শামসুজ্জামান। আওয়ামী লীগের নেতারা পলাতক। গত নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী ছিলেন অধ্যাপক ডা. মোয়াজ্জেম হোসেন। ভোট গ্রহণ চলাকালে ভোট বর্জন ও রাজনীতি না করার ঘোষণা দেন তিনি। তিনি বলেন, ‘আর ওসবে নেই।’
ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন জেলা শাখার শূরা সদস্য ও প্রধান উপদেষ্টা ডা. জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা সব ইসলামী দল ঐক্যবদ্ধভাবে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব। আমাদের বক্তব্য পরিষ্কারÑ আমাকে মনোনয়ন দিলে আমি আর জামায়াতকে মনোনয়ন দিলে তিনিই আমাদের প্রার্থী।’ এমনটি হলে শক্ত চ্যালেঞ্জে পড়বে বিএনপি এমনটিই ধারণা ভোটারদের।
জয়পুরহাট-২ (কালাই, ক্ষেতলাল ও আক্কেলপুর)
১৯৯১ এবং ২০০৮ সালের নির্বাচনে এই আসনটিও বিএনপির দখলে ছিল। অ্যাড. খলিলুর রহমান ১৯৯১ এবং ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফা ২০০৮ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এই আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফা, বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ওবায়দুর রহমান চন্দন, সাবেক সচিব আবদুল বারী, কেন্দ্রীয় কৃষকদলের জলবায়ুবিষয়ক সম্পাদক লায়ন সিরাজুল ইসলাম বিদ্যুৎ, সাবেক ছাত্রনেতা ও সমাজসেবক জাহেদুল আলম হিটো, বিশিষ্ট সমাজসেবক ইঞ্জিনিয়ার আমিনুর ইসলাম (সিআইপি), সাবেক ছাত্রনেতা আব্বাস আলী, ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা নুর মোহাম্মদ ও প্রবাসী আমিনুর ইসলাম।
অনুসারীদের নিয়ে নির্বাচনি এলাকায় ব্যাপকভাবে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। এ আসনে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী সবাই প্রভাবশালী। তবে শেষ পর্যন্ত কার ভাগ্যে মনোনয়ন জুটবে তা দেখার অপেক্ষায় আছেন দলটির নেতাকর্মীরা।
অপরদিকে জামায়াত মনোনীত ও আক্কেলপুর উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান এস এম রাশেদুল আলম সবুজ চষে বেড়াচ্ছেন পুরো নির্বাচনি এলাকা। ইতোমধ্যেই দলটি নির্বাচনের সব প্রস্তুতিও শেষ করেছে বলে তাদের দাবি। এলডিপি থেকে অধ্যাপক কারিমা খাতুন দলীয় মনোনয়ন নিয়ে সংসদ নির্বাচন করার উদ্দেশ্যে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন।
জুলাই অভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগ দলীয় নেতাকর্মীরা গা ঢাকা দিয়েছেন। অনেকেই এখন জেলে।
জাতীয় পার্টি, এনসিপি ও এলডিপি থেকে আগামী সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী দেওয়ার গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়নি। ইসলামী দলগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচন করবেন বলে কথাবার্তা শোনা যাচ্ছে। বর্তমান বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী ও জামায়াতের একক প্রার্থী সমগ্র নির্বাচনি এলাকায় গণসংযোগসহ দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন।
বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত জয়পুরহাটের দুটি আসনেই নির্বাচনি হাওয়া বইছে। ২০১৪, ১৮ এবং ২৪ সালে আওয়ামী লীগের প্রহসনের নির্বাচনে ভোট দিতে পারেননি সাধারণ জনগণ ও রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা। তারা মুখিয়ে আছেন আগামী নির্বাচনের জন্য। অনেক তরুণও বিগত ৩টি নির্বাচনে ভোট দিতে পারেননি। তারাও ভোট নিয়ে সক্রিয়। মুক্ত পরিবেশে এবার ভোটের পালে হাওয়া লেগেছে দারুণভাবে।
স্থানীয় ভোটারদের অনেকে মনে করছেন, আগামী নির্বাচনে সদর আসনে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে। তবে দলে কোন্দল না থাকলে অন্য আসনটিতে বিএনপি প্রার্থীর জয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।
জয়পুরহাট-১ (জয়পুরহাট সদর ও পাঁচবিবি) ও জয়পুরহাট-২ (কালাই, ক্ষেতলাল ও আক্কেলপুর) আসনে নির্বাচনি আমেজ শুরু হয়েছে ৫ আগস্টের পর থেকেই। দুটি আসনেই বিএনপি থেকে কাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে তা নিয়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। বিএনপির মনোনয়ন পেতে দলের বহু নেতা দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। দলের ভেতরে কার জনপ্রিয়তা বেশি তা নিয়েও নেতাকর্মীদের মধ্যে চলছে বাহাস।
এদিকে স্থানীয় বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল চলে আসছে অনেক আগে থেকেই। কার্যত দুই ভাগে বিভক্ত দলটি। জেলা পর্যায়ে প্রয়াত সাবেক মন্ত্রী আব্দুল আলিমের বড় ছেলে ফয়সল আলিম একাংশের নেতৃত্বে আছেন। অপর দিকে বর্তমান জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলজার হোসেন ও সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুদ রানা প্রধান আছেন অপর পক্ষের নেতৃত্বে। এই অংশটি জেলা কার্যালয়ে বসে। অপরাংশ বসে আরেক কার্যালয়ে। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রামেও তারা আলাদাভাবে দলীয় কর্মসূচি পালন করেছেন।
জয়পুরহাট সদর উপজেলা ও জয়পুরহাট পৌর বিএনপির কাউন্সিল হয় বর্তমান জেলা আহ্বায়ক কমিটির নেতৃত্বে। দলীয় কোন্দলের কারণে ফয়সল আলীমের নেতৃত্বাধীন নেতাকর্মীরা সেসব কাউন্সিলে অংশগ্রহণ করতে পারেননি।
তবে দীর্ঘদিন পর গত ২২ ফেব্রুয়ারি বিএনপির বিশাল সমাবেশে উভয় গ্রুপ অংশগ্রহণ করেন। সমাবেশ থেকে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানানো হয়। পাঁচবিবি উপজেলায়ও দলটি দু’ভাগে বিভক্ত। পাঁচবিবি উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাইফুল ইসলাম ডালিম ও সেক্রেটারি আব্দুল হান্নান বর্তমান জেলা আহ্বায়ক কমিটির অনুসারী। অপরদিকে ফয়সল আলিমের অনুসারী কুসুম্বা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আব্দুল গফুর মণ্ডল। তবে তিনিও মনোনয়ন চাইবেন বলে এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন। তবে সবাই আওয়ামী বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন।
অপরদিকে জয়পুরহাটের দুটি আসনেই জামায়াত প্রার্থিতা চূড়ান্ত করেছে। ৫ আগস্টের পর থেকেই দুই আসনের জামায়াতের দুই প্রার্থীর ব্যাপকভাবে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, নেতা-কর্মীদের নির্বাচনি প্রশিক্ষণ, কেন্দ্র পরিচালনা কমিটি গঠন এবং পোলিং এজেন্টদের তালিকা ও সবার প্রশিক্ষণ শেষ করা হয়েছে।
জয়পুরহাট -১ (সদর ও পাঁচবিবি)
১৯৯১ থেকে জয়পুরহাটের দুটি আসনই বিএনপির দখলে ছিল। ২০০৮ সালেও বিএনপি মনোনীত জয়পুরহাট-১ এ মোজাহার আলী প্রধান এবং জয়পুরহাট-২ আসনে ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০১৪, ১৮ এবং ২৪-এ পাতানো নির্বাচনে আসন দুটি দখলে নেয় আওয়ামী লীগ । এখন মাঠে নেই দলটি।
বিএনপির কয়েকজন সম্ভাব্য মনোনয়নপ্রত্যাশী গণসংযোগ শুরু করেছেন। ইতোমধ্যেই বিএনপির ছয় নেতা দলীয় মনোনয়ন চাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তারা হলেনÑ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলজার হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুদ রানা প্রধান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ফয়সল আলিম, বিশিষ্ট শিল্পপতি আনোয়ারুল হক আনু, যুক্তরাজ্য প্রবাসী তানজির আল ওয়াহাব এবং পাঁচবিবি উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আব্দুল গফুর মন্ডল।
গণসংযোগ ও বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগদান করে ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন তারা।
অপরদিকে অনেক আগেই একক প্রার্থীর ঘোষণা করে ব্যাপকভাবে নির্বাচনি কাজ চালিয়ে যাচ্ছে জামায়াত। তাদের দাবি, নির্বাচনের জন্য তারা সম্পূর্ণ প্রস্তুত।
জয়পুরহাট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলজার হোসেন মনোনয়নপ্রত্যাশী বলে আমার দেশকে জানিয়েছেন। তিনি জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি, যুবদলের নেতা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন দীর্ঘদিন। তিনি কয়েকবার পৌর কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছিলেন। প্যানেল মেয়র হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৫ বছর জুলুম-নির্যাতন ও মামলার শিকার হয়েছেন অনেকবার।
মাঠে সক্রিয়, উদারপন্থি ও কর্মীবান্ধব নেতা হিসেবে পরিচিত সাবেক এমপি প্রয়াত মোজাহার আলী প্রধানের সন্তান মাসুদ রানা প্রধান নিরলসভাবে কাজ করছেন। দলমত নির্বিশেষে সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে নির্বাচনি প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। তিনি জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি। হাসিনা সরকারের নিপীড়ন সহ্য করা এই নেতা অসংখ্য মামলার আসামি ছিলেন।
সাবেক মন্ত্রী প্রয়াত আব্দুল আলিমের বড় ছেলে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং বিশিষ্ট শিল্পপতি ফয়সল আলিম গণসংযোগে আছেন দীর্ঘদিন। তিনি হাসিনা পতনের আন্দোলনেও ছিলেন সক্রিয়। দলের জন্য এই নেতার পারিবারিক অবদানের কথা নেতাকর্মীদের আলোচনায় স্থান পায়। দলের জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে তার পরিবারকে।
জয়পুরহাটের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী জেলা বিএনপি নেতা মমতাজ উদ্দিন মন্ডলের বড় ছেলে বিশিষ্ট শিল্পপতি জয়পুরহাট চেম্বারের সাবেক সভাপতি আনোয়ারুল হক আনু মনোনয়ন চাইবেন বলে জানিয়েছেন। সদালাপী ও পরিচ্ছন্ন হিসেবে খ্যাত এই নেতা বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক সংস্কৃতির ইতিবাচক পরিবর্তন অত্যন্ত জরুরি। দেশের জন্য সব নাগরিকের কাজ করার সময় এসেছে। এই সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে। ইউকে আইনজীবী ফোরামের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জেলার সাবেক ছাত্রদল নেতা তানজির আল ওয়াহাব মাঠে থাকলে মাঠের চিত্র বদলেও যেতে পারে বলে তার অনুসারীদের অভিমত। নির্যাতিত নেতা আব্দুল গফুর মন্ডলও মনোনয়ন চাইবেন বলে জানিয়েছেন।
প্রত্যেক নেতাই অনুসারীদের নিয়ে নির্বাচনি প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে শেখ হাসিনার সময় আন্দোলন-সংগ্রামে যাদের দেখা মেলেনি অথবা অন্য দল করতেন তাদের অনেকেই এখন বিএনপি নেতাদের অনুসারি সেজেছেন। আওয়ামী লীগের দোসর অনেকেই এখন বিএনপি নেতাদের আশ্রয় পাচ্ছেন বলে খোদ বিএনপি নেতাকর্মীদের অভিযোগ।
অপরদিকে জামায়াতের একক প্রার্থী দলের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও জেলা জামায়াতের আমির ডা. ফজলুর রহমান সাঈদ দীর্ঘদিন ধরে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের জন্য আমরা সম্পূর্ণ প্রস্তুত। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করে সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হলে আমরাই বিজয়ী হব ইনশাআল্লাহ।’
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) থেকেও প্রার্থী দেওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। তবে উপজেলা কমিটি সম্পন্ন করার পর তারা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছেন।
এবি পার্টি থেকে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন স্থানীয় আলহেরা স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক প্রধান শিক্ষক সুলতান মোহাম্মদ শামসুজ্জামান। আওয়ামী লীগের নেতারা পলাতক। গত নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী ছিলেন অধ্যাপক ডা. মোয়াজ্জেম হোসেন। ভোট গ্রহণ চলাকালে ভোট বর্জন ও রাজনীতি না করার ঘোষণা দেন তিনি। তিনি বলেন, ‘আর ওসবে নেই।’
ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন জেলা শাখার শূরা সদস্য ও প্রধান উপদেষ্টা ডা. জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা সব ইসলামী দল ঐক্যবদ্ধভাবে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব। আমাদের বক্তব্য পরিষ্কারÑ আমাকে মনোনয়ন দিলে আমি আর জামায়াতকে মনোনয়ন দিলে তিনিই আমাদের প্রার্থী।’ এমনটি হলে শক্ত চ্যালেঞ্জে পড়বে বিএনপি এমনটিই ধারণা ভোটারদের।
জয়পুরহাট-২ (কালাই, ক্ষেতলাল ও আক্কেলপুর)
১৯৯১ এবং ২০০৮ সালের নির্বাচনে এই আসনটিও বিএনপির দখলে ছিল। অ্যাড. খলিলুর রহমান ১৯৯১ এবং ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফা ২০০৮ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এই আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফা, বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ওবায়দুর রহমান চন্দন, সাবেক সচিব আবদুল বারী, কেন্দ্রীয় কৃষকদলের জলবায়ুবিষয়ক সম্পাদক লায়ন সিরাজুল ইসলাম বিদ্যুৎ, সাবেক ছাত্রনেতা ও সমাজসেবক জাহেদুল আলম হিটো, বিশিষ্ট সমাজসেবক ইঞ্জিনিয়ার আমিনুর ইসলাম (সিআইপি), সাবেক ছাত্রনেতা আব্বাস আলী, ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা নুর মোহাম্মদ ও প্রবাসী আমিনুর ইসলাম।
অনুসারীদের নিয়ে নির্বাচনি এলাকায় ব্যাপকভাবে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। এ আসনে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী সবাই প্রভাবশালী। তবে শেষ পর্যন্ত কার ভাগ্যে মনোনয়ন জুটবে তা দেখার অপেক্ষায় আছেন দলটির নেতাকর্মীরা।
অপরদিকে জামায়াত মনোনীত ও আক্কেলপুর উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান এস এম রাশেদুল আলম সবুজ চষে বেড়াচ্ছেন পুরো নির্বাচনি এলাকা। ইতোমধ্যেই দলটি নির্বাচনের সব প্রস্তুতিও শেষ করেছে বলে তাদের দাবি। এলডিপি থেকে অধ্যাপক কারিমা খাতুন দলীয় মনোনয়ন নিয়ে সংসদ নির্বাচন করার উদ্দেশ্যে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন।
জুলাই অভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগ দলীয় নেতাকর্মীরা গা ঢাকা দিয়েছেন। অনেকেই এখন জেলে।
জাতীয় পার্টি, এনসিপি ও এলডিপি থেকে আগামী সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী দেওয়ার গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়নি। ইসলামী দলগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচন করবেন বলে কথাবার্তা শোনা যাচ্ছে। বর্তমান বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী ও জামায়াতের একক প্রার্থী সমগ্র নির্বাচনি এলাকায় গণসংযোগসহ দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন।
মঙ্গলবার (২১অক্টোবর) জিয়া সাইবার ফোর্সের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি কে,এম হারুন অর রশিদ ও সাধারন সম্পাদক মিয়া মোহাম্মদ রাজিবুল ইসলাম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে সভাপতি- সাধারন সম্পাদকসহ ৫৩ সদস্য বিশিষ্ট নির্বাহি কমিটি ঘোষনা দেন। ওই কিমিটির নির্বাহি সদস্য হিসেবে নূর আলমের নাম রয়েছে।
১ ঘণ্টা আগেনিখোঁজ মুফতি মুহিবুল্লাহর ছেলে আব্দুল্লাহ জানান, তিনি জুমার নামাজে হিন্দু সম্প্রদায়ের সংগঠন ইসকন নিয়ে বয়ান করে ছিলেন। এরপর থেকে তাকে হুমকি দিয়ে বেশ কয়েকটি উড়ো চিঠি দেয়া হয়। এরপর থেকে তিনি বিষয়টি নিয়ে মসজিদ কমিটির সাথে কথা বলেন। একপর্যায়ে বুধবার সকাল থেকে তিনি নিখোঁজ হন।
২ ঘণ্টা আগেগাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার ভরতখালীতে নদী শাসন ও ভাঙনরোধ প্রকল্পের কাজে বাধার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে গ্রামবাসী। বুধবার বিকেলে যমুনা নদীর তীর সংলগ্ন এলাকায় স্থানীয় নদীপাড়ের মানুষ এ মানববন্ধন করে।
২ ঘণ্টা আগেস্থানীয়রা জানান, আলমাস উপজেলার ৩ নম্বর চারিকাটা ইউনিয়নের নয়াখেল পূর্ব গ্রামের শরীফ উদ্দিনের ছেলে। জকিগঞ্জ ব্যাটালিয়নের (১৯ বিজিবি) সুইরঘাট বিওপির চার বিজিবি সদস্য দুটি মোটরসাইকেলযোগে চোরাইপণ্যবাহী একটি পিকআপকে ধাওয়া করেন। এ সময় বিজিবির ছোড়া গুলিতে আলমাস গুলিবিদ্ধ হন।
৩ ঘণ্টা আগে