
জমির উদ্দিন, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামের রাউজানের পাহাড়ি জনপদ নোয়াপাড়া। চারদিকে বেতগাছ, পাম, বাঁশঝাড় আর সরু কাঁচা রাস্তা। ভেতরে ঢুকলে চোখে পড়ে এক তিনতলা বাড়ি। বাইরে শান্ত, ভেতরে যেন যুদ্ধের প্রস্তুতি।
র্যাব-৭, চট্টগ্রামের গোয়েন্দা তথ্য ছিল-এই বাড়ির আড়ালেই চলছে অস্ত্র তৈরির কাজ। তথ্যটি নিশ্চিত হওয়ার পর কয়েকদিনের নজরদারিতে দেখা যায়, রাতে হালকা আলো জ্বলে ঘরে, শব্দ হয় হাতুড়ি ও লোহার ঘষাঘষির। অবশেষে বুধবার (৩০ অক্টোবর) রাতেই অভিযান চালানো হয় সেই বাড়িতে।
অভিযানে বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র, দেশীয় অস্ত্র, অস্ত্র তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তার করা হয় দুইজনকে।
নোয়াপাড়ার বাসিন্দা মো. কামাল উদ্দিন (৫০)। তিনি কামাল মেম্বার নামে পরিচিত। স্থানীয় বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় কর্মী। তিনি সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান খায়েজ আহমদের ছেলে ও বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান (পদ স্থগিত) গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারী। তার সঙ্গে আরও একজনকে গ্রেপ্তার করা হয় তিনি মো. সোহেল আহম্মদ (৪৪)। র্যাব বলছে, তারা দুজনই স্থানীয় অস্ত্র তৈরির সিন্ডিকেটের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য।
র্যাব-৭ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. হাফিজুর রহমান বলেন, আমরা জানতে পারি, নোয়াপাড়ার একটি বাড়িতে দীর্ঘদিন ধরে অস্ত্র তৈরি ও মজুত করা হচ্ছিল। বুধবার গভীর রাতে অভিযান চালিয়ে তিনটি একনলা বন্দুক, ছয়টি ওয়ান শুটার গান, পাঁচটি চাইনিজ কুড়াল, একখানা তলোয়ার, পাঁচটি রামদা এবং দেশীয় অস্ত্র তৈরির অসংখ্য যন্ত্রপাতি উদ্ধার করা হয়।
তিনি আরও বলেন, এলাকাটি পাহাড়ি ও দুর্গম হওয়ায় অপরিচিত কাউকে দেখলেই চক্রের সদস্যরা সতর্ক হয়ে যেত। তাই গোয়েন্দা নজরদারির পাশাপাশি কয়েক সপ্তাহ ধরে স্থানীয় সূত্র সক্রিয় রাখা হয়। সম্প্রতি রাউজানে হত্যাকাণ্ডে এই ধরনের অস্ত্রের ব্যবহার হয়েছে বলে জানান তিনি। গ্রেপ্তার দুজনের মোবাইলে অস্ত্র, মাদকের বিভিন্ন ছবিও রয়েছে বলে জানান এই র্যাব কর্মকর্তা।
যেভাবে বানানো হতো মৃত্যুযন্ত্র
র্যাবের কর্মকর্তারা জানান, কামাল ও সোহেল স্থানীয় কামারদের ব্যবহার করতেন অস্ত্র তৈরিতে। পুরনো লোহার রড, মোটরসাইকেলের পাইপ, সাইকেলের ফ্রেম আর মেশিনের স্প্রিং ব্যবহার করে বানানো হতো ব্যারেল ও ট্রিগার মেকানিজম।
একজন স্থানীয় কামার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ওরা মাঝে মাঝে এসে লোহা কিনতো, পাইপ বা স্প্রিং চাইতো। আমরা ভেবেছি মেশিনের কাজ করবে। পরে বুঝি এগুলো বন্দুক বানাতে নেয়। কামাল ভাইয়ের কাছে নাকি দামি গ্রাহক ছিল। বন্দুক বিক্রি করত ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকায়। স্থানীয়দের ভাষ্য, কামাল আগে একজন লোহা ব্যবসায়ী ছিলেন। ধীরে ধীরে স্থানীয় অপরাধী চক্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হন এবং ‘কারিগর’ হিসেবে নিজের দক্ষতাকে অস্ত্র বানানোর দিকে ঘুরিয়ে নেন।
র্যাব–৭ এর গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, এই এলাকায় তৈরি অস্ত্র মূলত বিক্রি হতো তিন ধরণের গ্রুপের কাছে-উপকূলীয় এলাকার জলদস্যু দল, স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ী ও ছোটখাটো রাজনৈতিক সন্ত্রাসী চক্র। অস্ত্রের দাম নির্ভর করতো ব্যারেলের দূরত্ব আর গোলাবারুদের মানের ওপর। একনলা বন্দুক বিক্রি হতো ২৫–৩০ হাজার টাকায়, ওয়ান শুটার ১৫–২০ হাজারে।
একজন র্যাব কর্মকর্তা বলেন, এরা অনেক সময় অর্ডার অনুযায়ী বন্দুক বানাতো। অর্থাৎ যে অপরাধী ১২ বোর বন্দুক চায়, তার চাহিদা অনুযায়ী অস্ত্র প্রস্তুত করা হতো।
রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, এই এলাকার ভূপ্রকৃতি এমন যে, গোপনে কাজ চালানো খুব সহজ। পাহাড়ের নিচে বা বাঁশঝাড়ের ভেতরে কয়েকজন মিলেই অস্ত্র তৈরির কাজ চালাতে পারে, বাইরে থেকে বোঝা যায় না। তাছাড়া স্থানীয়রা ভয় বা প্রভাবের কারণে চুপ থাকে।
পুলিশ জানায়, গত এক দশকে রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, ফটিকছড়ি ও হাটহাজারীতে অন্তত সাতবার অস্ত্র উদ্ধার অভিযান চালানো হয়েছে। অনেক সময় দেখা যায়, একই ধরণের কারিগরি ব্যবহার করা হয়েছে-মানে একই ধরণের কারখানা থেকেই অস্ত্র তৈরি।
গোপন ওয়ার্কশপের’ নেটওয়ার্ক
র্যাবের সূত্র বলছে, কামাল-সোহেল জুটি শুধু এক জায়গায় কাজ করতো না। তারা মাঝে মধ্যে পাহাড়ের গহিনে গিয়ে নতুন জায়গা বেছে নিয়ে অস্থায়ী কারখানা বানাতো। একজন স্থানীয় যুবক বলেন, ওরা কখনো ধানক্ষেতে, কখনো বাঁশঝাড়ের পাশে ছাপড়া ঘরে কাজ করতো। কেউ কাছে গেলে বলতো, লোহা মেরামতের কাজ চলছে। কিন্তু রাতে হাতুড়ির শব্দ আর আগুনের আলো দেখলে সন্দেহ হতো।
গ্রেপ্তারের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর পুরো নোয়াপাড়া এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়।
মাহবুব আলম নামে একজন স্থানীয় স্কুলশিক্ষক বলেন, আমরা জানতাম কামাল লোহার কাজ করে। কিন্তু অস্ত্র বানায় এটা শুনে আমরা স্তম্ভিত। এমন কাজ এতদিন ধরে চলেছে, অথচ কেউ টের পায়নি।
আরেকজন প্রবীণ কৃষক বলেন, রাতের দিকে গুলির শব্দ শুনেছি কয়েকবার। ভেবেছি শিকার করতে গেছে কেউ। এখন বুঝি, ওটা ছিল অস্ত্র পরীক্ষা।
র্যাব–৭ এর কর্মকর্তারা বলছেন, তদন্তে দেখা গেছে এই অস্ত্র ব্যবসার সঙ্গে স্থানীয় প্রভাবশালী কয়েকজনেরও সম্পর্ক রয়েছে। তারা অর্থায়ন ও ‘প্রটেকশন’ দিত।
একজন সিনিয়র কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এই ধরনের অস্ত্র কারখানা সাধারণত স্থানীয় ক্ষমতাবানদের আশ্রয়ে টিকে থাকে। কারখানার মালিক শুধু কার্যকরী ভূমিকা পালন করে, পেছনে থাকে অর্থদাতা ও ক্রেতা।
র্যাব জানায়, তদন্তে আরও কয়েকজনের নাম এসেছে; অভিযান চলমান রয়েছে। চট্টগ্রাম অঞ্চলে দেশীয় অস্ত্র উৎপাদনের ইতিহাস পুরনো। বিশেষ করে রাঙ্গুনিয়া ও ফটিকছড়ির পাহাড়ি অঞ্চলে আগেও ছোট ছোট ওয়ার্কশপে অস্ত্র তৈরি হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ২০২৪ সালের নভেম্বরে রাউজানের গহিন পাহাড়ে আরেকটি কারখানায় অভিযান চালিয়ে র্যাব তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছিল। তাদের কাছ থেকেও ওয়ান শুটার ও দেশীয় বন্দুক উদ্ধার হয়।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর এমদাদুল ইসলাম বলেন, অর্থনৈতিক দারিদ্র্য ও আইনশৃঙ্খলার দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে এসব কারিগর অপরাধে যুক্ত হচ্ছে। এটি শুধু একটি অপরাধ নয়-এটি স্থানীয় সহিংসতা, মাদক ও চাঁদাবাজির মূল উৎস। এই অস্ত্র যদি উপকূলীয় এলাকা ও শহরাঞ্চলে পৌঁছে যায়, তাহলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে। তাই গোয়েন্দা নজরদারি আরও বাড়ানো জরুরি।
গ্রেপ্তার হওয়া দুইজনকে রাউজান থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। উদ্ধার হওয়া অস্ত্র ও সরঞ্জাম ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হচ্ছে। র্যাব–৭ এর অধিনায়ক বলেন, আমরা তদন্ত করছি, তারা কোথা থেকে কাঁচামাল সংগ্রহ করতো এবং কারা ক্রেতা ছিল। আরও কয়েকটি এলাকায় অভিযান প্রস্তুতি চলছে।
নোয়াপাড়ার সেই বাড়ি এখন সিলগালা। কিন্তু চারপাশের পাহাড়, ঝোপঝাড় আর সরু রাস্তার ভেতর এখনো ছড়িয়ে আছে আতঙ্কের ছায়া। স্থানীয়দের প্রশ্ন র্যাবের অভিযানে ধরা পড়ল দুইজন, কিন্তু যারা পেছনে থেকে পাহাড়ের নিস্তব্ধতার আড়ালে এই মৃত্যুযন্ত্র বানানোর আয়োজন করেছিল, তারা কি কখনো ধরা পড়বে? কারণ গত বছরের ৫ আগস্টের পর রাজনৈতিক সহিংসতায় মোট ১৭টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ১২টি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড। সর্বশেষ গত শনিবার যুবদলের কর্মী মুহাম্মদ আলমগীর আলমকে গুলি করে খুন করা হয়। এর আগে ৭ অক্টোবর খুন হন বিএনপির কর্মী মুহাম্মদ আবদুল হাকিম।

চট্টগ্রামের রাউজানের পাহাড়ি জনপদ নোয়াপাড়া। চারদিকে বেতগাছ, পাম, বাঁশঝাড় আর সরু কাঁচা রাস্তা। ভেতরে ঢুকলে চোখে পড়ে এক তিনতলা বাড়ি। বাইরে শান্ত, ভেতরে যেন যুদ্ধের প্রস্তুতি।
র্যাব-৭, চট্টগ্রামের গোয়েন্দা তথ্য ছিল-এই বাড়ির আড়ালেই চলছে অস্ত্র তৈরির কাজ। তথ্যটি নিশ্চিত হওয়ার পর কয়েকদিনের নজরদারিতে দেখা যায়, রাতে হালকা আলো জ্বলে ঘরে, শব্দ হয় হাতুড়ি ও লোহার ঘষাঘষির। অবশেষে বুধবার (৩০ অক্টোবর) রাতেই অভিযান চালানো হয় সেই বাড়িতে।
অভিযানে বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র, দেশীয় অস্ত্র, অস্ত্র তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তার করা হয় দুইজনকে।
নোয়াপাড়ার বাসিন্দা মো. কামাল উদ্দিন (৫০)। তিনি কামাল মেম্বার নামে পরিচিত। স্থানীয় বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় কর্মী। তিনি সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান খায়েজ আহমদের ছেলে ও বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান (পদ স্থগিত) গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারী। তার সঙ্গে আরও একজনকে গ্রেপ্তার করা হয় তিনি মো. সোহেল আহম্মদ (৪৪)। র্যাব বলছে, তারা দুজনই স্থানীয় অস্ত্র তৈরির সিন্ডিকেটের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য।
র্যাব-৭ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. হাফিজুর রহমান বলেন, আমরা জানতে পারি, নোয়াপাড়ার একটি বাড়িতে দীর্ঘদিন ধরে অস্ত্র তৈরি ও মজুত করা হচ্ছিল। বুধবার গভীর রাতে অভিযান চালিয়ে তিনটি একনলা বন্দুক, ছয়টি ওয়ান শুটার গান, পাঁচটি চাইনিজ কুড়াল, একখানা তলোয়ার, পাঁচটি রামদা এবং দেশীয় অস্ত্র তৈরির অসংখ্য যন্ত্রপাতি উদ্ধার করা হয়।
তিনি আরও বলেন, এলাকাটি পাহাড়ি ও দুর্গম হওয়ায় অপরিচিত কাউকে দেখলেই চক্রের সদস্যরা সতর্ক হয়ে যেত। তাই গোয়েন্দা নজরদারির পাশাপাশি কয়েক সপ্তাহ ধরে স্থানীয় সূত্র সক্রিয় রাখা হয়। সম্প্রতি রাউজানে হত্যাকাণ্ডে এই ধরনের অস্ত্রের ব্যবহার হয়েছে বলে জানান তিনি। গ্রেপ্তার দুজনের মোবাইলে অস্ত্র, মাদকের বিভিন্ন ছবিও রয়েছে বলে জানান এই র্যাব কর্মকর্তা।
যেভাবে বানানো হতো মৃত্যুযন্ত্র
র্যাবের কর্মকর্তারা জানান, কামাল ও সোহেল স্থানীয় কামারদের ব্যবহার করতেন অস্ত্র তৈরিতে। পুরনো লোহার রড, মোটরসাইকেলের পাইপ, সাইকেলের ফ্রেম আর মেশিনের স্প্রিং ব্যবহার করে বানানো হতো ব্যারেল ও ট্রিগার মেকানিজম।
একজন স্থানীয় কামার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ওরা মাঝে মাঝে এসে লোহা কিনতো, পাইপ বা স্প্রিং চাইতো। আমরা ভেবেছি মেশিনের কাজ করবে। পরে বুঝি এগুলো বন্দুক বানাতে নেয়। কামাল ভাইয়ের কাছে নাকি দামি গ্রাহক ছিল। বন্দুক বিক্রি করত ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকায়। স্থানীয়দের ভাষ্য, কামাল আগে একজন লোহা ব্যবসায়ী ছিলেন। ধীরে ধীরে স্থানীয় অপরাধী চক্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হন এবং ‘কারিগর’ হিসেবে নিজের দক্ষতাকে অস্ত্র বানানোর দিকে ঘুরিয়ে নেন।
র্যাব–৭ এর গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, এই এলাকায় তৈরি অস্ত্র মূলত বিক্রি হতো তিন ধরণের গ্রুপের কাছে-উপকূলীয় এলাকার জলদস্যু দল, স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ী ও ছোটখাটো রাজনৈতিক সন্ত্রাসী চক্র। অস্ত্রের দাম নির্ভর করতো ব্যারেলের দূরত্ব আর গোলাবারুদের মানের ওপর। একনলা বন্দুক বিক্রি হতো ২৫–৩০ হাজার টাকায়, ওয়ান শুটার ১৫–২০ হাজারে।
একজন র্যাব কর্মকর্তা বলেন, এরা অনেক সময় অর্ডার অনুযায়ী বন্দুক বানাতো। অর্থাৎ যে অপরাধী ১২ বোর বন্দুক চায়, তার চাহিদা অনুযায়ী অস্ত্র প্রস্তুত করা হতো।
রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, এই এলাকার ভূপ্রকৃতি এমন যে, গোপনে কাজ চালানো খুব সহজ। পাহাড়ের নিচে বা বাঁশঝাড়ের ভেতরে কয়েকজন মিলেই অস্ত্র তৈরির কাজ চালাতে পারে, বাইরে থেকে বোঝা যায় না। তাছাড়া স্থানীয়রা ভয় বা প্রভাবের কারণে চুপ থাকে।
পুলিশ জানায়, গত এক দশকে রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, ফটিকছড়ি ও হাটহাজারীতে অন্তত সাতবার অস্ত্র উদ্ধার অভিযান চালানো হয়েছে। অনেক সময় দেখা যায়, একই ধরণের কারিগরি ব্যবহার করা হয়েছে-মানে একই ধরণের কারখানা থেকেই অস্ত্র তৈরি।
গোপন ওয়ার্কশপের’ নেটওয়ার্ক
র্যাবের সূত্র বলছে, কামাল-সোহেল জুটি শুধু এক জায়গায় কাজ করতো না। তারা মাঝে মধ্যে পাহাড়ের গহিনে গিয়ে নতুন জায়গা বেছে নিয়ে অস্থায়ী কারখানা বানাতো। একজন স্থানীয় যুবক বলেন, ওরা কখনো ধানক্ষেতে, কখনো বাঁশঝাড়ের পাশে ছাপড়া ঘরে কাজ করতো। কেউ কাছে গেলে বলতো, লোহা মেরামতের কাজ চলছে। কিন্তু রাতে হাতুড়ির শব্দ আর আগুনের আলো দেখলে সন্দেহ হতো।
গ্রেপ্তারের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর পুরো নোয়াপাড়া এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়।
মাহবুব আলম নামে একজন স্থানীয় স্কুলশিক্ষক বলেন, আমরা জানতাম কামাল লোহার কাজ করে। কিন্তু অস্ত্র বানায় এটা শুনে আমরা স্তম্ভিত। এমন কাজ এতদিন ধরে চলেছে, অথচ কেউ টের পায়নি।
আরেকজন প্রবীণ কৃষক বলেন, রাতের দিকে গুলির শব্দ শুনেছি কয়েকবার। ভেবেছি শিকার করতে গেছে কেউ। এখন বুঝি, ওটা ছিল অস্ত্র পরীক্ষা।
র্যাব–৭ এর কর্মকর্তারা বলছেন, তদন্তে দেখা গেছে এই অস্ত্র ব্যবসার সঙ্গে স্থানীয় প্রভাবশালী কয়েকজনেরও সম্পর্ক রয়েছে। তারা অর্থায়ন ও ‘প্রটেকশন’ দিত।
একজন সিনিয়র কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এই ধরনের অস্ত্র কারখানা সাধারণত স্থানীয় ক্ষমতাবানদের আশ্রয়ে টিকে থাকে। কারখানার মালিক শুধু কার্যকরী ভূমিকা পালন করে, পেছনে থাকে অর্থদাতা ও ক্রেতা।
র্যাব জানায়, তদন্তে আরও কয়েকজনের নাম এসেছে; অভিযান চলমান রয়েছে। চট্টগ্রাম অঞ্চলে দেশীয় অস্ত্র উৎপাদনের ইতিহাস পুরনো। বিশেষ করে রাঙ্গুনিয়া ও ফটিকছড়ির পাহাড়ি অঞ্চলে আগেও ছোট ছোট ওয়ার্কশপে অস্ত্র তৈরি হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ২০২৪ সালের নভেম্বরে রাউজানের গহিন পাহাড়ে আরেকটি কারখানায় অভিযান চালিয়ে র্যাব তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছিল। তাদের কাছ থেকেও ওয়ান শুটার ও দেশীয় বন্দুক উদ্ধার হয়।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর এমদাদুল ইসলাম বলেন, অর্থনৈতিক দারিদ্র্য ও আইনশৃঙ্খলার দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে এসব কারিগর অপরাধে যুক্ত হচ্ছে। এটি শুধু একটি অপরাধ নয়-এটি স্থানীয় সহিংসতা, মাদক ও চাঁদাবাজির মূল উৎস। এই অস্ত্র যদি উপকূলীয় এলাকা ও শহরাঞ্চলে পৌঁছে যায়, তাহলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে। তাই গোয়েন্দা নজরদারি আরও বাড়ানো জরুরি।
গ্রেপ্তার হওয়া দুইজনকে রাউজান থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। উদ্ধার হওয়া অস্ত্র ও সরঞ্জাম ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হচ্ছে। র্যাব–৭ এর অধিনায়ক বলেন, আমরা তদন্ত করছি, তারা কোথা থেকে কাঁচামাল সংগ্রহ করতো এবং কারা ক্রেতা ছিল। আরও কয়েকটি এলাকায় অভিযান প্রস্তুতি চলছে।
নোয়াপাড়ার সেই বাড়ি এখন সিলগালা। কিন্তু চারপাশের পাহাড়, ঝোপঝাড় আর সরু রাস্তার ভেতর এখনো ছড়িয়ে আছে আতঙ্কের ছায়া। স্থানীয়দের প্রশ্ন র্যাবের অভিযানে ধরা পড়ল দুইজন, কিন্তু যারা পেছনে থেকে পাহাড়ের নিস্তব্ধতার আড়ালে এই মৃত্যুযন্ত্র বানানোর আয়োজন করেছিল, তারা কি কখনো ধরা পড়বে? কারণ গত বছরের ৫ আগস্টের পর রাজনৈতিক সহিংসতায় মোট ১৭টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ১২টি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড। সর্বশেষ গত শনিবার যুবদলের কর্মী মুহাম্মদ আলমগীর আলমকে গুলি করে খুন করা হয়। এর আগে ৭ অক্টোবর খুন হন বিএনপির কর্মী মুহাম্মদ আবদুল হাকিম।

বিষয়টি নিয়ে এলাকাজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনাটি প্রশাসনিক পর্যায় পর্যন্ত জানাজানি হলে ওই নেতা অফিস থেকে ইউনিয়ন বিএনপির সাইনবোর্ড সরিয়ে ফেলে। এরপর থেকে তিনি ওই অফিসকে আনঅফিসিয়ালি ডিলারশিপের গোডাউন ঘোষণা করেন।
৩ ঘণ্টা আগে
রাতের অভিযানে নেতৃত্ব দেন যশোর কোতোয়ালি থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) কাজী বাবুল; থানা পুলিশ, ডিবি ও সাইবার ক্রাইম ইউনিটের একাধিক টিম এ অভিযানে অংশ নেয়। কাজী বাবুল জানান, আটক দুজনসহ ১০ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত ৩০-৩৫ জনকে অভিযুক্ত করে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করা হয়েছে।
৩ ঘণ্টা আগে
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কে ছিটকে পড়ে দুই যুবক নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন আরও একজন। বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলার বারইয়ারহাটের ধুমঘাট এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ঢাকামুখী লেনে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে।
৫ ঘণ্টা আগে
যে বয়সে খেলাধুলা করে সময় কাটানোর কথা তার। অথচ সেই বয়সে সংসারের বোঝা কাঁধে নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে ৯ বছরের ছোট্ট শিশু মরিয়ম। বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর ৬ বছর বয়সী ছোট ভাই ইসমাইলকে নিয়ে এখন মানবেতর জীবন-যাপন করছে সে।
৬ ঘণ্টা আগে