লোডশেডিংয়ে সিলেট নগরীর জনজীবন দুর্বিষহ

সিলেট ব্যুরো
প্রকাশ : ২৭ জুলাই ২০২৫, ০৯: ১২

সিলেটের কুমারগাঁও ২৫ মেগাওয়াট পাওয়ার স্টেশন প্রায় ১১ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ থাকায় বিতরণেও ঘাটতি দেখা দিয়েছে। ফলে তীব্র তাপপ্রবাহের মাঝেও সিলেট নগরীতে ভয়াবহ লোডশেডিং চলছে। নগরবাসী বলছে, কয়েকদিন ধরে সিলেটের তাপমাত্রা ৩৭-৩৮ ডিগ্রি। এর মধ্যে আবার ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিং। এতে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে জনজীবন। দ্রুত বিদ্যুৎ সরবরাহের দাবি নগরবাসীর।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কর্মকর্তারা জানান, এটা তাদের আওতাধীন না, তাই কবে নাগাদ চালু হবে সেটা বলতে পারছেন না। যদিও ২৫ মেগাওয়াট পাওয়ার স্টেশনটি পিডিবির বলে জানা গেছে। পিডিবির এমন বক্তব্যে দীর্ঘস্থায়ী বিদ্যুৎবিভ্রাটে পড়ার শঙ্কা নগরবাসীর।

বিজ্ঞাপন

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরীর বিদ্যুৎ সরবরাহকারী কুমারগাঁও ১৩২/৩৩ কেভি গ্রিড উপকেন্দ্রের ২৫ মেগাওয়াট পাওয়ার স্টেশন প্রায় ১১ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে। এটি ছাড়া সিলেটে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের আর কোনো জেনারেশন নেই। তাই জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ এনে নগরীতে বিদ্যুৎ বিতরণ করা হচ্ছে। তবে চাহিদার তুলনায় কম বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে ন্যাশনাল লোড ডেসপ্যাচ সেন্টার (এনএলডিসি)। এতে সিলেটে বিদ্যুৎবিভ্রাট চরম আকার ধারণ করেছে। পাওয়ার স্টেশন বন্ধের কারণ ও চালু হওয়ার ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য জানেন না সিলেট বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ও কুমারগাঁও গ্রিড উপকেন্দ্রের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বরত কর্মকর্তারা।

জানা গেছে, পাওয়ার স্টেশনটি বন্ধ থাকায় সিলেট নগরে বিদ্যুৎ বিতরণে প্রভাব পড়েছে। সিলেটে দৈনিক বিদ্যুতের চাহিদা ২৩০-২৪০ মেগাওয়াটের মতো। এর মধ্যে সরবরাহ হচ্ছে ১৮০ থেকে ১৯০ মেগাওয়াট। ফলে গড় ঘাটতি ৪০ মেগাওয়াট। লোডশেডিংয়ের মাত্রা ১৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ।

বিউবো কর্তৃপক্ষ বলছে, ট্রান্সফরমার পুড়ে যাওয়ার কারণে পাওয়ার স্টেশনটি বন্ধ হয়েছে। পাওয়ার স্টেশনের বন্ধ হওয়ার পর স্টেশনের প্রধান প্রকৌশলীও অবসরে চলে গেছেন। তবে তার দায়িত্বে থাকা মিজানুর রহমান আমার দেশকে জানান, পাওয়ার স্টেশনের ট্রান্সফরমার পুড়ে যায়নি, তবে সমস্যা হয়েছে। এটা ঠিক করতে কতদিন লাগবে, বলতে পারছি না।

পাওয়ার স্টেশনের দায়িত্বরত কর্মকর্তা বিদ্যুৎ আচার্য। তিনি বলেন, কুমারগাঁওয়ের পাওয়ার স্টেশন রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে। কবে এই পাওয়ার স্টেশন চালু হবে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা তো অন্য ডিপার্টমেন্টের, একটু জেনে জানাতে হবে।

বিউবো সূত্র জানায়, সিলেট মহানগরীতে পাঁচটি ডিভিশনে ১৩টি সাবস্টেশন আছে। তাপমাত্রা বেশি থাকার কারণে বর্তমানে সমস্যা বেশি হচ্ছে। ফিউজ ছিঁড়ে যাওয়া, তার ছিঁড়ে পড়ে যাওয়া বৃদ্ধি পেয়েছে। তার ওপর কুমারগাঁওয়ের ২৫ মেগাওয়াট পাওয়ার স্টেশন বন্ধ। এই পাওয়ার স্টেশনের ট্রান্সফরমার পুড়ে গেছে প্রায় ১১ দিন। এরপর থেকেই সিলেটে লোডশেডিং বেড়ে গেছে এবং ভোল্টেজও কম হচ্ছে। পাশাপাশি চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে না সিলেটে।

এ ব্যাপারে বিউবো সিলেট বিতরণ বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী শামস-ই আরেফিন বলেন, পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ না পাওয়ায় কিছু এলাকায় লোডশেডিং করতে হচ্ছে। পুরো সিস্টেমে ফ্রিকোয়েন্সি ডাউন হয়ে গেলে ঢাকা থেকে বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেয়। তাই লোডশেডিং করতে হয়।

এ ব্যাপারে সিলেট বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল কাদির বলেন, সিলেটের বিদ্যুৎ সরবরাহ হয় কুমারগাঁও গ্রিড উপকেন্দ্র থেকে। ট্রান্সফরমার পুড়ে যাওয়ায় লোডশেডিং ও ভোল্টেজ কম হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা এখন গ্রিড থেকে পাওয়ার আনছি। আমাদের নিজস্ব জেনারেশন সিলেটে আর নেই। এটা চালু হলে সিলেটের লোডশেডিং কমবে।

তিনি আরো বলেন, ট্রান্সফরমার পুড়ে গেছে তাই বলা যাচ্ছে না কতদিনের ভেতর ঠিক হবে। কারণ এটার যন্ত্রপাতি বাইরে থেকে আনা হয়। তা ছাড়া সিলেট চাহিদার তুলনায় কম বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে ন্যাশনাল লোড ডেসপ্যাচ সেন্টার। লোডশেডিং কমাতে হলে আমাদের পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু পাওয়ার স্টেশনটি মেরামত আমাদের আওতাধীন নয়।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত