আমার দেশ

চট্টগ্রাম বন্দর

ইয়ার্ডে কনটেইনারের পরিমাণ স্বাভাবিক, জট নেই অফডকেও

সোহাগ কুমার বিশ্বাস, চট্টগ্রাম
ইয়ার্ডে কনটেইনারের পরিমাণ স্বাভাবিক, জট নেই অফডকেও

ঈদ উপলক্ষে টানা আট-নয়দিনের ছুটিতে প্রতি বছর বড় ধরনের জট তৈরি হয় চট্টগ্রাম বন্দরে। ঈদের তিন-চারদিন আগে থেকে শুরু হওয়া এই জট স্বাভাবিক হতে সময় লাগে এক মাসের বেশি।

টানা ১৬ বছরের এই চিরচেনা দৃশ্যপট এবার আর নেই। ছুটি থাকলেও কনটেইনার খালাস থেকে ডেলিভারি, অফডকে আনলোড থেকে জাহাজীকরণ- সবকিছুই রয়েছে একেবারে স্বাভাবিক।

বিজ্ঞাপন

বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, বন্দর ব্যবস্থাপনায় আগে থেকে নেওয়া সঠিক পরিকল্পনার পাশাপাশি সরকারের নানামুখী উদ্যোগে সিন্ডিকেট নিরুৎসাহিত হওয়ায় এবারকার ঈদের ছুটিতে স্বস্তির সঙ্গে অপারেশনাল কাজ চালাতে পেরেছে দেশের সবচেয়ে বড় এ বন্দর।

বন্দর সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বন্দরের চারটি গেট দিয়ে প্রতিদিন তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টিইইউএস আমদানি পণ্যবোঝাই কনটেইনার ডেলিভারি হয়। বিপরীতে প্রায় সমপরিমাণ রপ্তানি পণ্যবোঝাই ও খালি কনটেইনার জাহাজীকরণ হয়। কিন্তু ঈদের লম্বা ছুটিতে স্বাভাবিক এই চেইন ভেঙে পড়ে। আমদানি করা পণ্য জাহাজ থেকে খালাস হলেও ডেলিভারি নেন না আমদানিকারকরা। আবার ছুটির সময় কারখানা বন্ধ থাকার অজুহাতে আগেভাগেই রপ্তানি পণ্যবোঝাই কনটেইনার অফডকে পাঠিয়ে দেন রপ্তানিকারকরা। ফলে ঈদের চার-পাঁচদিন আগে থেকে ১৮টি অফডকের সামনে পণ্যবোঝাই কনটেইনারবাহী লরির দীর্ঘ লাইন পড়ে যেত। এতে ভয়াবহ যানজট সৃষ্টি হতো নগরজুড়ে।

এ ছাড়া বন্দরের ইয়ার্ডগুলোতে খালাস হওয়া কনটেইনারের স্তূপ পড়ে যেত। বাড়তি সময় কাজ করে অতিরিক্ত শ্রমিক ও যন্ত্রাংশ কাজে লাগিয়ে এই জট স্বাভাবিক করতে সময় লাগত এক মাসের বেশি।

তবে টানা ১৬ বছরের চিরচেনা সে দৃশ্যপট এবার নেই। ঈদের ছুটি শেষে শুক্রবার ৫৩ হাজার ৫১৮ টিইইউএস কনটেইনার ধারণক্ষমতাসম্পন্ন চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনারের পরিমাণ ছিল ৩৫ হাজার ৩৪৮ টিইইউএস আর ১৮টি অফডকে কনটেইনার রয়েছে ৭৭ হাজার টিইইউএস। এর মধ্যে ৬২ হাজারই খালি কনটেইনার। আট হাজার ৩০০টি রপ্তানিমুখী আর ছয় হাজার ৭০০ টিইইউএস আমদানি পণ্যবোঝাই কনটেইনার, যা একেবারেই স্বাভাবিক।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি বেসরকারি কনটেইনার ডিপোর মালিক জানান, ৫ আগস্টের আগে আমদানি কিংবা রপ্তানি সবকিছুই তখনকার সরকারদলীয় নেতারা নিয়ন্ত্রণ করতেন। সবকটি ব্যবসায়ী সংগঠন ছিল তাদের নিয়ন্ত্রণে। এ কারণে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে নির্ধারিত সময়ের আগে ঈদের ছুটিতে কারখানা বন্ধ হয়ে যাবেÑ এমন অজুহাতে কনটেইনার পাঠিয়ে দেওয়া হতো অফডকে। এ ছাড়া সিন্ডিকেট করে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করতে বন্দরকে ব্যবহার করা হতো গুদাম হিসেবে। ফলে দীর্ঘ জট তৈরি হতো বন্দর ও বহির্নোঙরে। জটের কারণে নির্ধারিত পণ্য সময়মতো জাহাজীকরণও সম্ভব হতো না। ফলে ঈদের এই মৌসুমকে বায়াররাও ঝুঁকিপূর্ণ মৌসুম হিসেবে ধরে রাখতেন, যার দীর্ঘ নেতিবাচক প্রভাব পড়ত জাতীয় অর্থনীতিতে। কিন্তু অদৃশ্য শক্তির চাপ না থাকায় অনেকটা স্বস্তিতে পার হলো ঈদের লম্বা ছুটি।

বেসরকারি কনটেইনার ডিপো মালিকদের সংগঠন বিকডার সেক্রেটারি রুহুল আমিন শিকদার বিপ্লব জানান, প্রতি বছর ঈদ উপলক্ষে কারখানা বন্ধ হয়ে যাবেÑ এ কথা বলে শিডিউলের বাইরে পণ্য পাঠিয়ে দিতেন রপ্তানিকারকরা। একই অজুহাতে খালাস হওয়া পণ্য ডেলিভারি নিতেন না আমদানিকারকরা। কিন্তু চলতি বছর রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত পরিবেশে স্ব স্ব অফিসগুলো স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারায় জটের সৃষ্টি হয়নি।

চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক জানান, ঈদের বন্ধে প্রতি বছর জটের সৃষ্টি হয়। এ বিষয়কে মাথায় রেখে এবার আগে থেকেই নানামুখী উদ্যোগ নেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ। এসব উদ্যোগের মধ্যে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পণ্য খালাস না করলে চারগুণ হারে চার্জ আদায়সহ সবকটি ট্রেড বডির সঙ্গে সমন্বয় করার কারণে বন্দরের অপারেশন স্বাভাবিক রাখা গেছে।

ওমর ফারুক বলেন, স্বাভাবিক সময়ে দৈনিক তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার কনটেইনার ডেলিভারি হয়। ১৫ রোজার পর এ ডেলিভারির পরিমাণ চার হাজার ছাড়িয়েছিল। অন্যবার ঈদের আগের দিন থেকে ঈদের পর দুদিন পর্যন্ত কনটেইনার ডেলিভারি ১০০-এর নিচে নেমে এলেও এবার ছিল হাজারের কাছাকাছি। পরিসংখ্যান দেখে মনে হচ্ছে, আগে থেকেই আমদানি-রপ্তানিকারকদের এক ধরনের প্রস্তুতি ছিল, যে কারণে আগের বছরগুলোতে হঠাৎ করে অনেক পণ্যের চাপ তৈরি হতো কিংবা মাঝেমধ্যে একেবারে খালি হয়ে যেত। এবার তা হয়নি। সবাই আন্তরিক থাকায় জটের মুখোমুখি হতে হয়নি বন্দরকে।

Google News Icon

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন