কক্সবাজারের সদ্যসাবেক জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ সালাহউদ্দীনসহ নয়জনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে আদালতে দু’টি মামলার আবেদন করেছেন আতিকুল ইসলাম নামের একজন বিশেষ শ্রেণির ঠিকাদার।
মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) বিকেলে কক্সবাজার সিনিয়র স্পেশাল জজ আবদুর রহিমের আদালতে ‘উন্নয়ন ইন্টারন্যাশনাল’ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী আতিকুল ইসলাম ফৌজদারি আবেদন দু’টি করেন। তবে একটি আবেদনে কক্সবাজার জেলা যুবদলের সভাপতি অ্যাডভোকেট সৈয়দ আহমেদ উজ্জল ও সিনিয়র সহ-সভাপতি সরওয়ার রোমনও আসামির তালিকায় রয়েছেন। আবেদন দু’টি আদালত গ্রহণ করলেও মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত জানাননি বিচারক।
বাদীপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ হুমায়ুন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, বিচারক আবেদন দু’টি গ্রহণ করে ফাইল করেছেন। পরে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেয়ার কথা জানিয়েছেন বিচারক।
মামলার আবেদনে অভিযুক্তরা হলেন কক্সবাজারের সদ্যসাবেক জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দীন, বিআইডব্লিউটিএর পরিচালক (বন্দর ও পরিবহণ) এ.কে.এম আরিফ উদ্দীন, বিআইডব্লিউটিএর নির্বাহী প্রকৌশলী (ড্রেজিং বিভাগ) মো. রেজাউর রশিদ খন্দকার, কক্সবাজারের সাবেক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বিভীষন কান্তি দাস, বিআইডব্লিউটিএর সহকারী প্রকৌশলী (ড্রেজিং বিভাগ) মোহাম্মদ সাফি ইসলাম, কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী প্রজ্ঞান চাকমা, কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের সাবেক ডেপুটি কালেক্টর (রাজস্ব) মোহাম্মদ আবুল হাসনাত খাঁন, গার্ডিয়ান এন্টারপ্রাইজের প্রোপ্রাইটর মোহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিন এবং ড্রেজড ম্যাটেরিয়াল ব্যবস্থাপনা কমিটির অপরাপর সদস্যরা।
অপর মামলায় প্রথম পাঁচজন ছাড়াও অভিযুক্ত হয়েছেন জেলা প্রশাসনের ডেপুটি কালেক্টর (রাজস্ব) তাজমিন আলম তুলি, কক্সবাজার জেলা যুবদলের সভাপতি সৈয়দ আহমেদ উজ্জল ও সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. সরওয়ার রোমন। ড্রেজড ম্যাটেরিয়াল ব্যবস্থাপনা কমিটির অপরাপর সদস্যদেরও আসামি করা হয়েছে।
মামলার আবেদনে উল্লেখ করা হয়, সরকারের বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহণ কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) অধীনে কক্সবাজার জেলা ড্রেজড ম্যাটেরিয়াল ব্যবস্থাপনা কমিটির অনুমোদন ও নির্দেশনার আলোকে কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর ৬নং ঘাট এলাকার নাব্যতা উন্নয়নের লক্ষ্যে ‘বিআইডব্লিউটিএ’ ড্রেজিংয়ের জন্য সরাসরি উত্তোলিত ৫০ লাখ ঘনফুট ড্রেজিংকৃত ড্রেজড ম্যাটেরিয়াল ক্রয়ে আগ্রহী ক্রেতা/প্রতিষ্ঠানের নিকট বিক্রি করার জন্য এক বিজ্ঞপ্তি/নোটিশ স্থানীয় পত্র-পত্রিকায় প্রকাশ করে। বিজ্ঞপ্তির আলোকে ‘উন্নয়ন ইন্টারন্যাশনাল’ ২০২৪ সালের ২৪ নভেম্বর দরপত্র দাখিল করে। এই প্রতিষ্ঠানের পক্ষে দাখিল করা হয় এবং উদ্ধৃত প্রস্তাবিত দরের সাথে ৫ শতাংশ জামানতের টাকা পে-অর্ডারমূলে (ফেরতযোগ্য) ১৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা বিআইডব্লিউটিএর অনুকূলে প্রদান করা হয়। ওই বিজ্ঞপ্তি মতে একইদিন বিকাল ৪টার পর কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের শহীদ এটিএম জাফর আলম সম্মেলন কক্ষে দরদাতাদের উপস্থিতিতে দাখিলকৃত দরপত্র অর্থাৎ নিলাম উন্মুক্ত করা হয়।
উন্মুক্ত নিলামে মোট ১২ জন নিলাম দর প্রস্তাবকারি দরপত্র দাখিল করেন। এই উন্মুক্ত নিলামে উন্নয়ন ইন্টারন্যাশনালের সর্বোচ্চ প্রস্তাবিত দর ছিল প্রতি ঘনফুট ৫.৩৭ টাকা হারে ২ কোটি ৬৬ লাখ ৮৭ হাজার ৫০০ টাকা, যা দর প্রস্তাবে সর্বোচ্চ ডাককারি বিবেচিত হয়।
অপরদিকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দর প্রস্তাবকারির প্রস্তাব ছিল প্রতি ঘনফুট ৪.৫০ টাকা হারে দু’কোটি ২৫ লাখ টাকা। কিন্তু অভিযুক্তরা উন্নয়ন ইন্টারন্যাশনাল সর্বোচ্চ নিলাম ডাককারি হিসেবে কার্যাদেশ পাওয়ার নিশ্চিত দেখিয়ে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা ৪০ লাখ টাকা নগদে ঘুষ দাবির শর্ত জুড়ে দেন। ব্যর্থতায় অন্যান্য নিলামকারির মধ্য থেকে পছন্দ মতো যে কাউকে ওই পরিমাণ ঘুষের টাকা নিয়ে, তার প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ প্রদান করা হবে বলে সাফ জানিয়ে দেন।
বাদী দাবি করেন, ‘উন্নয়ন ইন্টারন্যাশনাল’ ঘুষ লেনদেনে সম্পূর্ণরূপে অস্বীকৃতি জানালে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির আশ্রয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নিলাম প্রস্তাবকারিকে ডাকটি প্রদান করে।
অন্য মামলায়ও প্রায় একই ধরনের অভিযোগ তোলা হয়েছে। উল্লিখিত ঘটনা চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি বিকেল ৪টায়। আগের অভিযোগটি ২০২৪ সালের ২৪ নভেম্বরের।

