বগুড়ার এপিবিএন স্কুলে এখনো বহাল ৭ মার্চের ভাষণ

সবুর শাহ্ লোটাস, বগুড়া
প্রকাশ : ২৬ জুলাই ২০২৫, ০৯: ৩৬
আপডেট : ২৬ জুলাই ২০২৫, ১২: ৫০

বগুড়ার আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন স্কুল অ্যান্ড কলেজে (এপিবিএন) এখনো রয়ে গেছে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের রেখে যাওয়া স্মৃতিচিহ্ন। সরকার পতনের প্রায় বছর পূর্ণ হতে চললেও বেদিতে এখনো শোভা পাচ্ছে ৭ মার্চের ভাষণের খোদাই করা ফলক।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর এখান থেকে শেখ মুজিবের ভস্কর্যটি অপসারণ করা হলেও ধ্বংস করা হয়নি এটি। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অভিযোগ, অনেক আগেই বিদ্যালয়টির অধ্যক্ষসহ অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু কর্তৃপক্ষ ফলকটি অপসারণ করেনি। ফলে প্রতিদিন শিক্ষার্থীদের এই বেদিকে সামনে রেখেই প্রাত্যহিক সমাবেশ করতে হচ্ছে। স্কুল কর্তৃপক্ষ বলছে, বিষয়টি তাদের নজরে আসেনি। অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা কর্তৃপক্ষের উদাসিনতাকে দায়ী করছেন।

বিজ্ঞাপন

স্মৃতিফলকটি উদ্বোধন করেছিলেনে তৎকালীন বগুড়া এপিবিএন-৪-এর অধিনায়ক (পুলিশ সুপার) জয়নুল আবেদীন। এতে লেখা রয়েছে-৭ মার্চের একটি ভাষণ নিরস্ত্র জাতির জাগরণ, একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম আমার দেশ বাংলাদেশ মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টারে বঙ্গবন্ধুর সেই ভাষণ, তাই করি আজ আনন্দ শোভাযাত্রা। স্মরণ করি ‎তুমি মোদের মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ‎তুমি রবে অনাদিকাল এ বাংলায় জাতির মনের গভীরে। ‎তোমার এই মহাকাব্য প্রেরণা জোগাবে যুগে যুগে ‎শোষিত বঞ্চিতদের দেশ হতে দেশান্তরে। এর পাশেই রয়েছে কালো টাইলসে খোদাই করা ৭ মার্চের ভাষণ, যা এই মুহূর্তে বড়ই বেমানান বলে আমার দেশকে জানিয়েছেন বেশ কয়েকজন ছাত্র ও অভিভাবক।

তারা বলেন, স্কুল-কলেজ মিলিয়ে প্রতিদিন আনুমানিক চার হাজার শিক্ষার্থী ও দেড় শতাধিক শিক্ষক-কর্মচারী এই গেট দিয়ে প্রবেশ করে আর বের হয়। তাদের এটি দেখতে হয়, যা চব্বিশের জুলাই আন্দোলনের পরিপন্থি। এটি প্রধান ফটকের পাশে স্কুল ও কলেজের অফিসকক্ষের মাঝামাঝি, যেখানে ফ্ল্যাগস্ট্যান্ড ও শহীদ মিনারের আদলে গড়া বেদির দেয়ালে টাইলসে খোদাই করে লেখা।

বগুড়ায় জুলাই আন্দোলনে পুলিশের হামলায় আহত যমুনা টেলিভিশনের সাংবাদিক মেহেরুল সুজন বলেন, আমার ছেলে এই স্কুলের তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। বিষয়টি আমার কাছেও খারাপ লেগেছে। স্কুলের গেট থেকে ৩০০ ফুট দূরে বৈশাখী টেলিভিশনের সাংবাদিক সুমন সরদারের আবাসস্থল। তিনি বলেন, এতবড় স্কুলের এই ঘটনা জুলাই বিপ্লবের সঙ্গে বেমানান। এর জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষকে জবাবদিহির আওতায় আনা প্রয়োজন।

এ ব্যাপারে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাহবুবা হক বলেন, ১৯৯৮ সালে রাবি হতে বের হয়ে এই প্রতিষ্ঠানের কলেজ শাখায় যোগদান করি। চব্বিশের জুলাই আন্দোলনের পর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পাই। তিনি বলেন, জুলাই আন্দোলনের পর ৫ আগস্ট এই বেদির পাশেই বঙ্গবন্ধুর একটি ম্যুরাল ছিল। তা ছাত্র-জনতা গুঁড়িয়ে দেয়। তবে কেন এটি অপসারণ করা হয়নিÑএ প্রশ্নের জবাবে তিনি নিশ্চুপ থাকেন। ছাত্র ও অভিভাবকদের কাছ থেকে কোনো অভিযোগ পেয়েছেন কি নাÑজানতে চাইলে তিনি বলেন, আসলে যে কোনো কারণে তা অপসারণ করা হয়নি। এখন উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

বগুড়া জেলা শিক্ষা অফিসার মো. রমজান আলী আকন্দ বলেন, বিষয়টি শুনেছি। এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কাজ শুরু করেছি। দেশ থেকে ফ্যাসিস্ট পালিয়ে গেলেও তাদের স্মৃতি কীভাবে থাকে, সেটা দেখছি।

বগুড়া-৪ এপিবিএনের অধিনায়ক (অ্যাডিশনাল ডিআইজি) ও পদাধিকারবলে স্কুল অ্যান্ড কলেজের সভাপতি মো. শহীদ আবু সারোয়ার আমার দেশকে বলেন, বিষয়টি নজরে আসেনি। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত