সড়কে কিশোর বাইকারদের বেপরোয়া গতি, আতঙ্কে পথচারীরা

গোদাগাড়ী (রাজশাহী) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৩ জুন ২০২৫, ১২: ০৬
ছবি: আমার দেশ

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার বিভিন্ন সড়ক এখন কিশোর বাইকারদের বেপরোয়া গতির রেস ট্র্যাকে পরিণত হয়েছে।

বিশেষ করে ঈদের সময় ফাঁকা রাস্তায় বাইক রেসিংয়ের মাত্রা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। তাদের দৌরাত্ম্যে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন পথচারী ও স্থানীয় বাসিন্দারা।

বিজ্ঞাপন

স্থানীয়দের অভিযোগ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তা ও নজরদারির অভাবেই এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।

নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের নেতারা বলছেন, আইনের পাশাপাশি অভিভাবকদেরও সচেতন হতে হবে। এখন গোদাগাড়ীর বিভিন্ন সড়কে প্রতিদিনই বাইকারদের দাপট দেখা যাচ্ছে। বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত অনেকটা নির্দ্বিধায় চলাচল করছে এসব কিশোর। এদের অনেকেই হেলমেট ছাড়াই মোটরসাইকেল চালাচ্ছে এবং ট্রাফিক আইন তোয়াক্কা করছে না। অধিকাংশ বাইকে লাগানো সাইলেন্সার থেকে বিকট শব্দ ছড়ানোয় শব্দদূষণও বেড়েছে আশঙ্কাজনক হারে।

এ অবস্থায় ঈদের পরদিন গোদাগাড়ীর চাঁদপুর গ্রামে বিকট শব্দে মোটরসাইকেল চালানোর প্রতিবাদ করেছেন এলাকাবাসী। সামাজিকমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, এক কিশোর বিকট শব্দে মোটরসাইকেল চালিয়ে আসছেন। এলাকার লোকজন মোটরসাইকেলটি থামিয়ে ওই কিশোরকে বাইক থেকে নামান। এরপর কয়েকজন মিলে ওই কিশোরকে ধরে সাইলেন্সারের সামনে কান নিয়ে যান। এরপর পিকআপ টেনে ওই বাইকারকেই তার বাইকের বিকট শব্দ শোনানো হয়। পরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

স্থানীয় কলেজ শিক্ষক কামরুজ্জামান বলেন, ‘প্রতিদিন সন্ধ্যায় হাঁটতে বের হই। কিন্তু বাইকের আচমকা গর্জন আর বেপরোয়া গতির কারণে রাস্তায় চলা এখন প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠেছে। মনে হয় যেন যুদ্ধক্ষেত্রে হাঁটছি।’

সরেজমিন দেখা গেছে, গোদাগাড়ীর স্বাধীন চত্বর থেকে সাফিনা পার্ক রোড পর্যন্ত সড়কে একাধিক কিশোর দলবদ্ধভাবে বাইক রেসিং করছে। অনেকেই হেলমেট ছাড়া, কেউবা এক বাইকে তিনজন করে উঠেছে। ঈদের ছুটিতে ফাঁকা রাস্তাকে সুযোগ হিসেবে নিয়েছে এরা।

পথচারীরা জানান, দিনের বেলায় কিছুটা নিয়ন্ত্রণ থাকলেও সন্ধ্যার পর থেকে পুরো এলাকা বাইকারদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। তাদের বেপরোয়া গতির কারণে প্রায়ই ঘটে ছোট-বড় দুর্ঘটনা।

গোদাগাড়ী নাগরিক কমিটির সভাপতি শান্ত কুমার মজুমদার বলেন, ‘ওরা যেভাবে বাইক চালায়, তাতে যে কোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। অথচ প্রশাসন অনেকটাই নিশ্চুপ।’

গোদাগাড়ী নাগরিক স্বার্থ-রক্ষণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক বরজাহান আলী পিন্টু বলেন, ‘শুধু আইন প্রয়োগ নয়, তরুণদের আচরণগত পরিবর্তনের জন্য পুলিশের নিয়মিত কাউন্সিলিং বাড়ানো উচিত।’

রাজশাহীর নিরাপদ সড়ক আন্দোলন সহসভাপতি ওয়ালিউর রহমান বাবু বলেন, ‘ওপরে-নিচে উঠিয়ে, একেবেকে ও বিকট শব্দ করে বাইক চালানো হয়। এর কারণে অনেক দুর্ঘটনা ঘটছে। তাদের এ আচরণে অনেক মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ছে।’

তিনি আরও বলেন, আইন বাস্তবায়নের পাশাপাশি অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে। অন্যথায় কিশোরদের সঠিক পথে নিয়ে আসা কষ্টকর হবে।

গোদাগাড়ী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রুহুল আমিন জানান, ‘ঈদের সময় রাস্তায় গাড়ি কম থাকায় একটি শ্রেণি বাইক রেসিং করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে চেকপোস্ট ও মোবাইল টহল পরিচালনা করা হচ্ছে।’

বিষয়:

আতঙ্ক
এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত