পিরোজপুরের স্বরূপকাঠীর ১০টি বধ্যভূমি তালিকাভুক্ত হলেও ৫৫ বছরে অধিকাংশ বধ্যভূমি চিহ্নিত হয়নি। নেছারবাদ সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এস এম আলম বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার দু‘দিন পর পিরোজপুরের স্বরুপকাঠি ১৮ ডিসেম্বর শত্রু মুক্ত হয়। ১৯৭১ সালের ২৬ মে থেকে ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত আলবদর, আল শামস, রাজাকার ও পিস কমিটির বরর্বরতায় গণহত্যার বধ্যভূমিগুলো রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে অধিকাংশই অরক্ষিত। সরকারি তালিকায় ১০টি বধ্যভূমির ৬টির কোনো সীমানা প্রাচীর নেই।
সোহাগদলে সাত ব্যক্তির এক কবর, বরছাকাঠি, শেখ পাড়া ও কুড়িয়ানা এ ৪টি বধ্যভূমি চিহ্নিত করা হলেও সাত ব্যক্তি এক কবরটি ও নদী ভাঙনে কবলিত। উপজেলায় উল্লেখযোগ্য ৪২টি এলাকায় নৌ ও সড়ক পথে মুক্তিযুদ্ধ ও পাক হানাদারদের সাথে সরাসরি যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাসহ হাজার হাজার স্তুপ লাশের পরিচয় জানা-না জান এক কাপড়েই মাটি চাপা দেয়ায় হয়।
কুড়িয়ানার সুরঞ্জন বাবু বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ গভীর রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বিভীষিকার গণহত্যার অধিকাংশ লাশের সন্ধান এখনো পাওয়া যায়নি।
ইদিলকাঠির রমেশ চন্দ্র পাল বলেন, এলাকায় ঘর-বাড়ি পুড়িয়ে এবং কয়েক শত নিরীহ মানুষকে হত্যা করে খালে-বিলে ভাসিয়ে দেয় এবং ২১টি লাশ ইদিলকাঠি খালের পাড়ে পাক সেনা ও দোসরদের ভয়ে তড়িঘড়ি করে মাটির স্তূপে চাপা দিয়ে রাখা হয় যা সীমানা প্রাচীর ছাড়াই অরক্ষিত। হানাদার বাহিনী হত্যাযজ্ঞ শত শত লাশগুলো দাফনের কাপড় ছাড়াই মাটি চাপা দিয়ে রাখলেও বধ্যভ’মির আওতা আসেনি। আবার কোনো কোনো এলাকায় এক দড়িতে বেধে গুলি করে হত্যার পর নিরীহ মানুষের লাশগুলো নদী, খাল-বিল, ডোবা- নালায় ফেলে দেওয়ায় এ সব লাশের সন্ধান ৫৫ বছরেও পায়নি শহিদ পরিবারগুলো।
উপলোরে এসব এলাকায় সরেজমিনে স্থানীয়রা জানান, অনেক শহিদের লাশ চাপা পড়ে আছে সড়ক ও পাকা ভবনের নিচে।
বরছাকাঠি শত বছর বর্ষীয়ান হাসেম আলী বলেন, পাকসেনারা ১০ নভেম্বর সোহাগদল বরছাকাঠিতে ২৬ জনকে একই দড়িতে বেঁধে গুলি করে। বেঁচে যায় পাঁচজন। লাশ পড়ে ২১ জনের। একদিন পর স্বজনরা ১৪ জনের লাশ নিয়ে যায়। তদের মধ্যে গোসাল কাপড় ছাড়াই এক গর্তে মাটিচাপা দেওয়া হয়। যা সাত ব্যক্তির এক কবর নামে তালিকাভুক্ত।
একইদিন ইন্দুর হাট, মিয়ার হাট বন্দর অগ্নিসংযোগ করে দুইটি বাজার পুড়িয়ে দেয়ার পর কয়েক শত লোক হত্যা করে পাক সেনারা।
৯৫ বর্ষিয়ান কুলচুম বেবী বলেন, আটঘর কুড়িয়ায় যে কাছা-পাকা সড়কগুলো দিয়েমরাদেহের উপর দিয়ে চলছে গাড়ি। বিরেন হালদার বলেন, কুড়িয়ানার বাজারে সংলগ্ন দু‘টি ডোবায় প্রায় আড়াই শত মানুষকে পাকসেনারা ধরে এনে হত্যার পর লাশ গ্রামবাসী ২ দিন পর মাটি চাপা দেয়। যা বধ্যভূমি হিসেবে তালিকাভুক্ত হলেও তা এখনো অরক্ষিত।
অলংকারকাঠি মুক্তিযোদ্ধা জহিরুল ইসলাম বলেন, আটঘর কুড়িয়ানা পেয়ারা বাগান ছিল স্বরুপকাঠির মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও বিভিন্ন এলাকাবাসীর নিরা পথ আশ্রয়ে স্থান। পাকসেনা এক টানা ২১দিন আক্রমণ করলে ৩ জন পাকসেনা নিহত হয়। আশ্রয়ে নেয়া নিরীহ মানুষ কত জন মারা গেছে তার কোনো হদিশ পাওয়া যায়নি। লাশগুলোর নেই কোনো বধ্যভূমি।
গুয়ারেখার সেকেন্দার আলি বলেন, ২৪ মে পাকসেনাদের হত্যার পর ১৭ জনের লাশ মাটি চাপা দেওয়া হয় যা অরক্ষিত।
সোহাগদলের মাস্টার মোসলেম আলি বলেন, ৭১’র দোসরদের হত্যাযজ্ঞ সন্ধ্যা নদী থেকে ভেসে যাওয়া লাশগুলো শকুন-কুকুর-শিয়াল ছিঁড়ে-ছিঁড়ে খাছছিল সেদিনের এ দৃশ্যই যেন-মানুষ কর্তৃক মানুষ হত্যার পর হোলি খেলার মাছির উল্লাস।
বরছাকাঠি ও কাছারিউলায় ২টি, ইদিল কাঠি ১টি, মাহামুদকাঠি ১টি, অলংকার কাঠি ১টি ও জলাবাড়ি ১টি এ মোট ৬টি সরকারি তালিকা ভুক্ত না হওয়ায় অপূর্ণতা রয়েছে বধ্যভূমির তালিকা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, উপজেলার ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা বধ্যভূমি অধিকাংশই তালিকাভুক্তর আওতায় আসেনি। যে সব বধ্যভূমি তালিকা ভুক্ত হয় নায় সে গুলোর সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অধীনে যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে তালিকাভুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন একাবাসী।
সদ্য যোগদানকারী নেছারাবাদ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা অমিত দত্ত বলেন, এ ব্যাপারে আমার তেমন একটা জানা নেই। তবে অচিরেই তদন্ত সাপেক্ষে ঊর্ধ্বতম কর্মকর্তাদের জানানো হবে।

