শ্রী-গুরুসংঘের সম্পাদক ও সহ-সাধারণ সম্পাদক পালিয়ে গেলেন ভারতে

নিকুঞ্জ বালা পলাশ, বরিশাল
প্রকাশ : ১৩ আগস্ট ২০২৫, ২১: ৩৪
আপডেট : ১৩ আগস্ট ২০২৫, ২১: ৪৭

গঠনতন্ত্র ও নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে দুই ভারতীয় নাগরিকসহ কতিপয় ব্যক্তির ইচ্ছামতো অবৈধভাবে গঠন করা শ্রী-গুরুসংঘের কেন্দ্রীয় কমিটি বাতিল করে দিয়েছে হাইকোর্ট। একই সাথে আশ্রমের পরিচালনার জন্য ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের উপসচিব, উপপরিচালক, জেলা প্রশাসক ও আশ্রম অধ্যক্ষকে অবৈধ কেন্দ্রীয় কমিটি ভেঙে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

বিজ্ঞাপন

পাশাপাশি ভারতীয় নাগরিকদের বাদ দিয়ে গঠনতন্ত্রের আলোকে ১১ সদস্যের উপদেষ্টা কমিটি গঠন করে তিন মাসের মধ্যে নতুন কমিটি গঠনেরও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অবৈধ কমিটির বিরুদ্ধে চলতি বছরের ২১ জুলাই ওই আশ্রমের সাবেক কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক প্রশান্ত কুমার দাসসহ সাবেক ১০ জন সদস্য বাদী হয়ে হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করেন। ওই রিট পিটিশনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ৬ আগস্ট এ আদেশ দেন।

বুধবার আদেশের কপি হাতে পান মামলার বাদী প্রশান্ত কুমার দাসসহ অন্যরা। নতুন কমিটির সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক ও কাউখালী মডেল স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিগত সরকারের দোসর সুব্রত রায়সহ কতিপয় ব্যক্তির প্ররোচনায় তিতাস গ্যাস কোম্পানির সাবেক ভারপ্রাপ্ত জিএম ভারতীয় নাগরিক রনঞ্জয় কৃষ্ণ দত্ত ও অপর ভারতীয় নাগরিক রতল লাল করসহ ৭১ জনকে নিয়ে গঠন করা হয়েছিল পিরোজপুরের কাউখালীর শ্রী-গুরুসংঘের কেন্দ্রীয় কার্যালয় পরিচালনা কমিটি।

এ ব্যাপারে রিট পিটিশন দায়েরকারী প্রশান্ত কুমার দাস বলেন, ভারতীয় নাগরিকদের নিয়ে গঠিত কমিটি যে অবৈধ এবং গায়ের জোরে কমিটি গঠন করা হয়েছে, তা হাইকোর্টের রায়ে প্রমাণিত হয়েছে। অপর রিট পিটিশন দায়েরকারী ড. প্রদীপ কুমার কর্মকার আমার দেশকে বলেন, ১৩ জুলাই ভারতীয় নাগরিকদের নিয়ে যে কমিটি গঠন করা হয়েছিল তা অবৈধ হওয়ায় হাইকোর্ট ওই কমিটি বাতিল করেছেন।

তিনি বলেন, এ থেকে ওই কমিটির সদস্যদের শিক্ষা নেয়া উচিত, গায়ের জোরে কোনো কিছুই করা ঠিক নয়। আমরা আশাবাদী যাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তাদের নেতৃত্বে সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য নতুন কমিটি পাবে কাউখালী শ্রী-গুরু আশ্রম।

আশ্রম সূত্র জানায়, গঠনতন্ত্র অনুসারে ১১ জন উপদেষ্টা দিয়ে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করতে হবে। কিন্তু তার তোয়াক্কা না করে চলতি বছরের ২৫ এপ্রিল আগের কমিটির নির্বাহী সভাপতি পরিমল কর্মকারকে আহ্বায়ক এবং আগের কমিটির সাধারণ সম্পাদক ভারতীয় নাগরিক রনঞ্জয় কৃষ্ণ দত্তকে সদস্য সচিব করে ১১ সদস্যের পরিবর্তে আগের কমিটির ২১ সদস্যকে দিয়েই আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়।

চলতি বছরের ১৩ জুন অবৈধ আহ্বায়ক কমিটি পুলিশ প্রশাসনের সহায়তায় ৭১ সদস্যবিশিষ্ট নতুন কমিটি গঠন করে। ওই কমিটির সভাপতি করা হয় আহ্বায়ক কমিটির নির্বাহী সভাপতি পরিমল কর্মকার ও সাধারণ সম্পাদক করা হয় ভারতীয় নাগরিক রনঞ্জয় কৃষ্ণ দত্তকে। ওই কমিটির সহ-সম্পাদক করা হয় আরেক ভারতীয় নাগরিক রতন লাল করকে। ভারতীয় নাগরিক রনঞ্জয় কুমার দত্ত বাংলাদেশেরও নাগরিক। পিরোজপুর সদর উপজেলার কুমারখালী গ্রামের বাসিন্দা পরিচয়ে তিনি তিতাস গ্যাস কোম্পানির ডিজিএম (অ্যাডমিন) ও ভারপ্রাপ্ত জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে চাকরি করেছেন। ২০২২ সালে চাকরি থেকে অবসর নেন তিনি। কিন্তু সরকারি চাকরিরত অবস্থায়ও তিনি ছিলেন একজন ভারতীয় নাগরিক।

চাকরির সুবাদে বৈধ ও অবৈধভাবে অর্জিত শত কোটি টাকা অবৈধ হুন্ডির মাধ্যমে পাঠিয়ে দিয়েছেন ভারতে। সেই টাকায় ভারতে গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। ছয়তলা বিলাসবহুল একাধিক বাড়ি, ৩টি ফ্ল্যাট, একাধিক গাড়ি, একাধিক ডিপিএস, কয়েক একর সম্পত্তি রয়েছে তার। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর ভারত ও বাংলাদেশের উভয় এলাকায় ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়।

এদিকে অভিযোগ আছে ধর্মীয় লেবাস ব্যবহার করে শ্রী-গুরুসংঘের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দুর্নীতি ও নানান অপকর্ম করছেন রনঞ্জয় কৃষ্ণ দত্ত ও রতন লাল কর। এ নিয়ে দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায় একটি সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পরপরই ভারতে পালিয়ে যান তারা।

তবে আমার দেশ পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর তিতাস গ্যাস কোম্পানির জিএম (রাজস্ব) মাহবুবুর রহমান জানান, রনঞ্জয় কৃষ্ণ দত্তের দুর্নীতি তদন্তে তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে।

ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছেন কমিটির সদস্যরা। পাশাপাশি সাবেক ডিজিএম রনঞ্জয়ের পেনশন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিষয়:

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত