ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী শরীফ ওসমান হাদির মৃত্যুর খবরে শোকে স্তব্ধ ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার খাসমহল এলাকার লোকজন। গত বৃহস্পতিবার রাত ১০টার পর থেকেই বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ দলে দলে ছুটে আসছে তার গ্রামের বাড়িতে। গতকাল শুক্রবার সকাল থেকেই জামায়াতে ইসলামী, বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও প্রশাসনের কর্মকর্তারাও সমবেদনা জানাতে হাদির গ্রামের বাড়িতে উপস্থিত হন।
উপস্থিত নেতৃবৃন্দ ও এলাকাবাসী হাদিকে ‘জাতীয় বীর’ আখ্যা দিয়ে তার হত্যাকারীদের দ্রুত শনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। সেই সঙ্গে অন্তত শেষবারের মতো হাদির লাশ গ্রামের বাড়িতে এনে জানাজার দাবি ওঠে। পাশাপাশি হাদি হত্যার প্রতিবাদে বরিশাল ও ঝালকাঠিজুড়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ইনকিলাব মঞ্চসহ বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল ও কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে।
গতকাল সকালে নলছিটি পৌর এলাকার চৌরাস্তা-সংলগ্ন খাসমহল এলাকায় হাদির বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, শত শত মানুষ সেখানে ভিড় করছেন। সবার চোখে শোক, কান্না ও ক্ষোভ। সহপাঠী, বন্ধু ও স্বজনদের অনেকেই কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেললেও দৃপ্ত কণ্ঠে একটাই দাবি জানান—২৪ ঘণ্টার মধ্যে হাদি হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করতে হবে।
ঝালকাঠি-২ (ঝালকাঠি সদর ও নলছিটি) আসনের বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত প্রার্থী ও বিএম কলেজছাত্র সংসদের (বাকসু) সাবেক এজিএস শেখ নেয়ামুল করীম আমার দেশকে বলেন, হাদি আমার সহপাঠী ছিলেন। স্কুলজীবন থেকেই তিনি ছিলেন প্রতিবাদী। অন্যায়ের সঙ্গে কখনো আপস করেননি। হাদি শুধু এ গ্রামের সন্তান নয়, তিনি এখন জাতীয় বীর।
ঝালকাঠি জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সাহাদাত হোসেন বলেন, হাদির এমন মৃত্যু আমরা মেনে নিতে পারছি না। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে হবে। হাদি শুধু ঝালকাঠির গর্ব নয়, তিনি এখন জাতীয় বীর। তাকে সেই মর্যাদা দিতে হবে।
হাদির বড় বোনের স্বামী, নলছিটি ফুলহরি আব্দুল আজিজ দাখিল মাদরাসার সুপার ও বাইপাস সড়কস্থ আশরাফ আলী হাওলাদার জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা আমির হোসেন বলেন, হাদি এখন আর শুধু আমাদের নয়, তিনি রাষ্ট্রের সম্পদ। তার ব্যাপারে রাষ্ট্র যে সিদ্ধান্ত নেবে, আমরা সেটাই মেনে নেব।
দাফনের বিষয়ে তিনি জানান, হাদির পৈতৃক বাড়ি নলছিটির হাড়িখালী গ্রামে, যেখানে তার বাবা আব্দুল হাদি শায়িত আছেন। জীবদ্দশায় হাদি নিজেই ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন, মৃত্যুর পর যেন বাবার কবরের পাশেই তাকে দাফন করা হয়। তবে পরিবার রাষ্ট্রের সিদ্ধান্তকেই চূড়ান্ত বলে জানিয়েছেন। আমাদের একটাই চাওয়া, হাদির স্মৃতি যেন হারিয়ে না যায়। দেশের প্রতি তার এই আত্মত্যাগের কথা যেন প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের মানুষ শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে।
এলাকাবাসী জানান, হাদির পৈতৃক বাড়ি নলছিটির হাড়িখালী গ্রামে। প্রায় চার দশক আগে নলছিটি পৌর এলাকার খাসমহলে নতুন বাড়ি করেন। হাদির এক বোন এখানে বসবাস করছেন।
এদিকে জুলাই-বিপ্লবের সম্মুখসারির যোদ্ধা হিসেবে যারা হাদিকে কাছ থেকে দেখেছেন, তারা কোনোভাবেই তার এ পরিণতি মেনে নিতে পারছেন না। তাদের ভাষ্য, হাদিকে হত্যা করে আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে তার লড়াই কিংবা ইনসাফ প্রতিষ্ঠার ডাক স্তব্ধ করা যাবে না; বরং এই আন্দোলন আরো বেগবান হবে।
গতকাল দুপুরে হাদির ভগ্নিপতি মাওলানা আমির হোসেনসহ পরিবারের সদস্যরা তার লাশ গ্রহণের জন্য ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন। একই দিন জুমার নামাজের পর নলছিটি পৌর এলাকার কলেজ মোড় থেকে মুসল্লিদের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। তারা হাদির খুনিদের গ্রেপ্তারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। পরে কলেজ মোড় এলাকায় সড়ক অবরোধ করে টায়ার জ্বালিয়ে প্রতিবাদ জানানো হয়। কয়েক ঘণ্টা সড়ক যোগাযোগ বন্ধ থাকে।
১৯৯৩ সালে ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলায় এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন শরীফ ওসমান হাদি। তার বাবা ছিলেন একজন মাদরাসা শিক্ষক। তিন ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার ছোট।
নেছারাবাদ এনএস কামিল মাদরাসা থেকে দাখিল ও আলিম শেষ করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেন।
শিক্ষাজীবন শেষে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন হাদি। বৈবাহিক জীবনে তিনি এক সন্তানের জনক। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জুলাই বিপ্লবে তিনি ছিলেন সম্মুখসারির সংগঠক। ঢাকা-৮ আসনে সংসদ সদস্য প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনি প্রচারকালে সন্ত্রাসীদের গুলিতে আহত হন তিনি। পরে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার রাতে তিনি ইন্তেকাল করেন।
আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন


রাজধানীজুড়ে নিরাপত্তা জোরদার
শোকজের পর পদত্যাগ করলেন যুবশক্তির কেন্দ্রীয় নেতা নাহিদ