দুইদিনের ব্যবধানে লোহাগড়ায় আবারও দুর্ঘটনা, ১০ জন নিহত

চট্টগ্রাম ব্যুরা
প্রকাশ : ০২ এপ্রিল ২০২৫, ০৯: ১০
আপডেট : ০২ এপ্রিল ২০২৫, ১৪: ০৫

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি জাঙ্গালিয়া এলাকায় বাসের সঙ্গে দুই মাইক্রোবাসের সংঘর্ষে ১০ জন নিহত হয়েছেন। বুধবার সকাল সোয়া ৭টার দিকে চুনতি বন বিভাগের রেঞ্জ অফিসের সামনে এই দুর্ঘটনা ঘটে। এতে ঘটনাস্থলেই ৭ জন নিহত হয়েছেন। পরে হাসপাতালে নেয়ার পর আরও তিনজন মারা যান।

বিজ্ঞাপন

নিহত চারজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন, কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বাসিন্দা সাধনা মণ্ডল, দিলিপ কুমার বিশ্বাস, আশিস মণ্ডল, আরাধ্য বিশ্বাস।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কক্সবাজার থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রামগামী রিলাক্স পরিবহনের একটি বাস জাঙ্গালীয়ায় নিয়ন্ত্রণ হারায়। এ সময় চালক নিয়ন্ত্রণ নিতে হার্ডব্রেক করে। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুটি মাইক্রোবাসকে ধাক্কা দেয়। এরমধ্যে একটি মাইক্রোবাস দুমড়ে মুচড়ে যায়। অন্যটিও অল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে ঘটনাস্থলেই ৭ জন নিহত হন। গুরুতর আহত আরও ৫ জনকে লোহাগাড়া হাসপাতালে নিয়ে যায় ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধার কর্মীরা। সেখানে একজনের মৃত্যু হয়। বাকি চারজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হলে দুইজনের মৃত্যু হয়। নিহতরা কুষ্টিয়া থেকে কক্সবাজারে যাচ্ছিলেন। মাইক্রোবাস চালক ছাড়া নিহতরা সবাই দুটি পরিবারের সদস্য ছিলো বলে ধারণা করা হচ্ছে।

লোহাগাড়া ফায়ার সার্ভিসের টিম লিডার রাখাল চন্দ্র জানান, বাস ও দুটি মাইক্রোবাসের ত্রিমুখী সংঘর্ষে এই দুর্ঘটনা ঘটে। প্রথমে একটি মাইক্রোর সঙ্গে যাত্রীবাহী বাসের সংঘর্ষ হয়। পড়ে আরেকটি মাইক্রোবাসও নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনা কবলিত গাড়ি দুটির সঙ্গে ধাক্কা লাগে। হতাহতরা বেশিরভাগই একটি মাইক্রোবাসের যাত্রী। ঘটনাস্থল থেকে ৭ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া আহত আরো ৫ জনকে প্রথমে লোহাগাড়া ও পড়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

নিহত একটি পরিবারের স্বজন বাধন বিশ্বাস জানান, নিহতরা সবাই ঝিনাইদহ ও কুষ্টিয়ার বাসিন্দা। দুটি পরিবারের ১২ জন সদস্য ঈদের ছুটিতে একটি হাইস মাইক্রোবাস ভাড়া করে কক্সবাজার যাচ্ছিলেন। পথে দুর্ঘটনার কবলে পড়েন।

লোহাগাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আরিফুর রহমান জানান, জাঙ্গালিয়ার এই একই এলাকায় ঈদের দিন আলাদা আরেকটি দুর্ঘটনায় ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত কালকেও একটি যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রন হারিয়ে খাদে পড়ে যায়। এতে কারো মুত্যু না হলেও অন্তত ১০ জন আহত হয়। আর আজ সকালের দুর্ঘটনায় ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এনিয়ে এক কিলোমিটার এলাকার মধ্যে তিন দিনের ব্যবধানে তিনটি সড়ক দুর্ঘটনায় ১৫ জনের মৃত্যু ও ২০ জন আহত হয়।

একই এলাকায় বার বার দুর্ঘটনা কেন ঘটছে এমন প্রশ্নের জবাবে ওসি আরিফুর জানান, মূলক এই এলাকাটিকে মহাসড়কে অসংখ্য বাক রয়েছে। যার বেশিরভাগই ঝুঁকিপুর্ণ। এছাড়া চকরিয়া ও কক্সবাজার থেকে বিপুল পরিমাণ কাচা লবন পটিয়ার ইন্দ্রোপোলের লবন কারখানাগুলোতে পরিবহন করা হয়। এই লবনের ট্রাক থেকে এক ধরনের পিচ্ছিল পানি সড়কের ওপর পড়ে ধুলোর সঙ্গে মিশে পুরো মহাসড়কটিকেই ঝুঁকিপুর্ণ করে তোলে। এতে দ্রুতগামীর কোন পরিবহন হঠাত ব্রেক করলে নিয়ন্ত্রন হারিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে।

যাত্রী কল্যান সংস্থার মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী জানান, সরু সড়কে বেপোরোয়া গতিতে যান চলাচলের কারণে এই দুর্ঘটনাগুলো ঘটছে। এছাড়া উৎসব পার্বনে কক্সবাজার এলাকায় পর্যটকের চাপ বেশি থাকায় এই মহাসড়ক নিয়ে ধারণা নেই এমন চালকদের আধিক্য বাড়ে এখানে। আর এই কারণে দুর্ঘটনা বেশি ঘটে উৎসবের সময়গুলোতে।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত