ইসলামী ব্যাংক খুলশী শাখার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের এলসি জালিয়াতির ঘটনায় অন্তত ৬ কোটি টাকার ক্ষতির অভিযোগ করেছেন খেজুর আমদানিকারক ব্যবসায়ী মোহাম্মদ নুরুল হুদা। তার দাবি, করোনাকালে ব্যবসা স্থবির থাকার সুযোগে ব্যাংক কর্মকর্তারা তার অগোচরে তার নামেই অতিরিক্ত একাধিক এলসি খুলে ফেলেন-যা পরবর্তীতে বিপর্যয় ডেকে আনে।
বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের এস রহমান হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, নাজমুল হক, গিয়াস উদ্দিন, পংকজ তালুকদার, দিদারুল আলম টিপু, দেবু দেব ও মো. ফয়সাল প্রমুখ।
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী নুরুল হৃদা বলেন, ২০২১–২২ সালে সৌদি আরব থেকে খেজুর আমদানির জন্য ব্যাংকের মাধ্যমে প্রায় ২৫টি এলসি খুলেছিলেন নুরুল হুদা। নিয়ম অনুযায়ী প্রতিবারই তিনি সমপরিমাণ অর্থ, খালি চেক ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ব্যাংকে জমা রাখতেন। তবে আমদানি সাময়িক বন্ধ থাকায় তার নামে কোনো নতুন এলসি খোলার কথা ছিল না। অথচ কর্মকর্তারা তাঁর স্বাক্ষরিত খালি চেক ও নথি ব্যবহার করে একাধিক এলসি তৈরি করে দেন বলে অভিযোগ।
এসব এলসির অর্থ পরিশোধ না হওয়ায় তাঁর জমা রাখা চেক ডিজঅনার হয় এবং তাঁর বিরুদ্ধেই মামলা হয়। সমাধান চাইতে তিনি ব্যাংকের শাখা ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দ্বারস্থ হলেও কোনো প্রতিকার পাননি। পরে তিনি আদালতের শরণাপন্ন হন।
২০২৫ সালের ২৩ মার্চ দণ্ডবিধির ৪৬৭, ৪৬৮, ৪০৬, ৪২০, ৫০৬ ও ৩৪ ধারায় মামলা করেন নুরুল হুদা। আদালতের নির্দেশে সিআইডি তদন্ত করে। গত ৪ ডিসেম্বর তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আব্দুল করিম ইসলামী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান, সাবেক এমডিসহ সাতজনকে অভিযুক্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করেন। শুনানির পর ৭ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট চতুর্থ আদালত সাতজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন-ইসলামী ব্যাংক পিএলসি–এর সাবেক চেয়ারম্যান ওবাইদুল্লাহ মাসুদ, সাবেক এমডি মনিরুল মাওলা, খুলশী শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মোরশেদুল আলম, সাবেক সেকেন্ড অফিসার মো. মহিউদ্দিন, বৈদেশিক মুদ্রা কর্মকর্তা মুহাম্মদ জুবাইর, জুনিয়র অফিসার মুহাম্মদ রাফায়াতন ও এসইভিপি এম. জুবাইর আজম হেলালী।
সংবাদ সম্মেলন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে নুরুল হুদা বলেন, আমার নামে দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার চাই। প্রতারণার মাধ্যমে নেওয়া আমার চেকগুলো ফেরত চাই। এই মামলার কারণে ২০২২ সাল থেকে আমি আর কোনো ব্যবসা করতে পারিনি। ব্যবসায়িক প্রতিবন্ধকতা এই মুহূর্তে অবসান চাই। আমার আত্মসাতকৃত টাকা ফেরত চাই। দীর্ঘ সময় ব্যবসা বন্ধ থাকায় অন্তত ৬ কোটি টাকার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।

