আমার দেশ জনপ্রিয় বাংলা নিউজ পেপার

দখল হয়ে যাচ্ছে হাতিয়ায় জেগে ওঠা চর

জিএম ইব্রাহীম, হাতিয়া (নোয়াখালী)
দখল হয়ে যাচ্ছে হাতিয়ায় জেগে ওঠা চর
নোয়াখালীর হাতিয়ায় মেঘনা নদীতে জেগে ওঠা চর। আমার দেশ

নোয়াখালীর হাতিয়ায় দখল হয়ে যাচ্ছে মেঘনায় জেগে ওঠা চর। সারিবদ্ধভাবে মাটির স্তূপে নিশানা টানিয়ে চলছে চর দখল। এতে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে গোচারণভূমি। বহু প্রজন্ম ধরে এ অঞ্চলের মানুষ এসব চরে লালন-পালন করে আসছেন তাদের গরু ও মহিষ।

সারিবদ্ধভাবে মাটির স্তূপ তৈরি করে খুঁটি গেড়ে নিশানা দিয়ে চলছে দখলের রাজত্ব। আর বাতানদের ঘরবাড়ি ঘিরে উচ্ছেদের চাপ বাড়ছে। অনেককে এরই মধ্যে গরু-মহিষ নিয়ে অন্যত্র সরে যাওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রশাসন রয়েছে নির্বিকার।

বিজ্ঞাপন

জানা গেছে, নোয়াখালীর হাতিয়ার চর আতাউর ও জাগলার চরে চলছে দখলদারদের তৎপরতা। উপজেলার তমরদ্দি ও চরকিং ইউনিয়নের পশ্চিম পাশে এই চর দুটির অবস্থান। চরগুলো বনবিভাগের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও দ্বীপের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ায় সীমিত জনবল নিয়ে দখল ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছে বনবিভাগ। এ বিষয়ে জুলাই মাসে যুদ্ধাহতদের পক্ষ থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও কোস্টগার্ডের কাছে প্রতিকার চেয়ে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, চরের উত্তর পাশে ও মাঝামাঝি দুটি জায়গায় বাতানরা অস্থায়ীভাবে বসবাস করে। একেবারে দক্ষিণে একটি আশ্রয়ণ ও দুটি গুচ্ছগ্রামে ৪০০ পরিবার বসবাস করে। নদী পার হয়ে হাতিয়ার মূল ভূখণ্ড থেকে এসে তাদের আইনশৃঙ্খলা দেখভাল করতে হয়। বনবিভাগ বিশাল এই চরে পুরোনো কেওড়া বাগানের রক্ষণাবেক্ষণ করে, পাশাপাশি নতুন জেগে ওঠা চরে কেওড়ার বীজ বপন করে। কিন্তু এরই মধ্যে দখলকারীরা স্তূপ তৈরি করে বনবিভাগের এই বিশাল এলাকা দখল করে নিয়েছে।

চরে বসবাস করা বাতানরা জানান, চর দখলের এই কাজে সরাসরি যারা জড়িত তাদের বাড়ি পার্শ্ববর্তী চরকিং ইউনিয়নের চরবগুলা ও শুল্লুকিয়া গ্রামে। তাদের মধ্যে সরাসরি চরে উপস্থিত থেকে জমি মেপে দেওয়ার কাজে জড়িত মাদু, শাহজাহান, জলিল, দুলাল, ফিরোজ ও ইরাক মাঝি। দুটি চরই তাদের পার্শ্ববর্তী হওয়ায় তারা দিনভর চরে থাকে, রাতে বাড়িতে চলে যায়। রাজনৈতিকভাবে তারা একসময় আওয়ামী লীগ করলেও এখন স্থানীয় বিএনপি নেতা সাবেক ইউপি সদস্য মনির উদ্দিনের লোক হিসেবে কাজ করে। চরে মনির মেম্বারকে কখনো দেখা যায়নি। তবে তিনি তীরে বসে এসব দখল নিয়ন্ত্রণ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে চরকিং ইউনিয়ন বিএনপির সদ্য বিলুপ্ত হওয়া কমিটির সভাপতি ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘চর দখলের বিষয়টি আমি শুনেছি। খবর পেয়েছি এর সঙ্গে মনির মেম্বারসহ কয়েকজন জড়িত আছেন। মনির মেম্বার বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকলেও কোনো পদ-পদবিতে নেই। আমি মনির মেম্বারের সঙ্গে কথা বলার পর তিনি বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।’

অভিযোগের বিষয়ে মনির মেম্বার বলেন, ‘আমি হাতিয়ার বাইরে অনেক দিন। চর দখলের সঙ্গে আমার সম্পৃক্ততা নেই। যারা দখল করছে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন ব্যবস্থা নিক। আমার নাম ব্যবহার করে কেউ এই কাজ করলে তার দায়ভার তো আমি নেব না। তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হোক।’

মফিজ বাতান জানান, ‘গত ১০ বছর ধরে এই চরে মহিষ পালন করে আসছেন। কেউ কখনো চর দখলের চেষ্টা করেনি। সরকার বদলের পর থেকে বিভিন্ন গ্রুপ এসে চর দখল করছে। চরকিং, চরবগুলা ও হাতিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে লোকজন এসে এই চর দখল করছে। এভাবে চলতে থাকলে একসময় চরে থাকা কেওড়া বন উজাড় হয়ে যাবে।’

মহিষের মালিক মোজাম্মেল হোসেন মানিক জানান, ‘দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে এই চরে মহিষ ও গরু পালন করে আসছেন। এরই মধ্যে মাটির কিল্লা-পুকুর তৈরি করে নিয়েছেন। তাতে অস্বাভাবিক জোয়ারে গরু-মহিষ আশ্রয় নেয়। কিন্তু হঠাৎ করে একটি পক্ষ তাদের এই চর থেকে চলে যেতে বলছে এবং বাতানদের বিভিন্ন সময় মারপিট করছে।

চর এলাকায় বনবিভাগের জায়গা দখলের বিষয়ে নলচিরা রেঞ্জের কর্মকর্তা আল আমিন গাজী জানান, ‘একটি গ্রুপ বেশ কিছুদিন আগে থেকে চরের জায়গা দখলের চেষ্টা করে আসছে। এরই মধ্যে চারজনকে আটক করে মামলা দেওয়া হয়েছে। তবে নদীবেষ্টিত এলাকা হওয়ায় সব সময় অভিযান দেওয়া সম্ভব হয় না। এছাড়া সীমিতসংখ্যক জনবল নিয়ে অভিযান সফল হয় না। তবে এই বিষয়ে সহযোগিতার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও কোস্ট গার্ড কমান্ডারকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আলউদ্দিন বলেন, ‘চর দখলের বিষয়টি মহিষের মালিকরা জানিয়েছেন। এছাড়া বনবিভাগ থেকেও সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। দ্রুত অভিযান চালিয়ে এসব চর দখলমুক্ত করা হবে।’

Google News Icon

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন