কুমিল্লা আদালতে ভুক্তভোগীর মামলা

চাঁদা না পেয়ে যুবককে তুলে নিয়ে পেটালেন যুবদল নেতা

কুমিল্লা প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৬ আগস্ট ২০২৫, ১৮: ৪৭
আপডেট : ২৭ আগস্ট ২০২৫, ০১: ০৪

কুমিল্লার বুড়িচংয়ে চাঁদা না পেয়ে এক যুবককে তুলে নিয়ে মারধরের অভিযোগ উঠেছে এক যুবদল নেতার বিরুদ্ধে। উপজেলার বারেশ্বর এলাকার এ ঘটনায় মঙ্গলবার আদালতে মামলা করেছেন ভুক্তভোগী রিয়াদ ভূঁইয়া মাহিন। এর আগে রোববার তাকে উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি ময়নাল হোসেনের বাড়িতে নিয়ে নির্যাতন করা হয় বলে মামলায় উল্লেখ করেন ওই যুবক।

হয়রানির শিকার হওয়ার ভয়ে স্থানীয় এক বিএনপি নেতাসহ কয়েকজন বলেন, যুবদল নেতা ময়নাল বেশি সুবিধার মানুষ না। তিনি বালু, মাটিসহ বিভিন্ন কারবার করেন। তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ আছে। আগেও বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এখন ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি হওয়ায় আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। স্থানীয় যুবক মাহিনের পরিবারের সদস্যরা বিদেশে থাকায় তার কাছ থেকে টাকা আদায় করা যাবে ভেবে তাকে তুলে নিয়ে নির্যাতন করেছেন এই নেতা।

বিজ্ঞাপন

ভুক্তভোগী মাহিন বলেন, মাস তিনেক আগে যুবদল নেতা ময়নাল মোবাইল ফোনে আমার কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। আমি টাকা দিতে রাজি না হলে আমাকে বিভিন্ন মাধ্যমে হত্যার হুমকি ও ভয় দেখাতে থাকেন। আমাকে বাড়িতে বসবাস করতে দেবে না বলে হুমকি দেন। বাধ্য হয়ে মোবাইল ফোনে ব্লক করে দিলেও তিনি অন্য নম্বর থেকে কল দিয়ে হুমকি দিতে থাকেন।

তারই ধারাবাহিকতায় রোববার বিকালে অন্য একজনের মোবাইল ফোন দিয়ে কল দিয়ে যুবদল নেতা ময়নাল আমাকে ডেকে রাস্তার মাঝে নিয়ে যান। সেখানে উপস্থিত হওয়ার সঙ্গে তিনি ও তার দলবল নিয়ে আমার ওপর অতর্কিত হামলা চালান। তার সঙ্গে ছিল জয়নাল, মেহেদী, সাইফুল ও জুয়েল রানা। তারা সবাই মিলে আমাকে মারতে মারতে ময়নালের বাড়িতে নিয়ে যান। সেখানে তার মেয়ে ও মেয়ের জামাই লাঠি দিয়ে আমার গায়ে আঘাত করেন। আমার গলা চেপে ধরে হত্যার ভয় দেখাতে থাকেন।

তারপর আমার ভাই খবর পেয়ে ৯৯৯ নম্বরে কল করে পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে আমাকে উদ্ধার করেন। আমি যেই ফোনে চাঁদা দাবির কল রেকর্ডসহ তাদের সব অপকর্মের প্রমাণ রেখেছিলাম সেটিও নিয়ে ভেঙে ফেলেছেন। আমার চিৎকারের শব্দ শুনে আশপাশের মানুষজন ছুটে আসলে আমাকে রক্তাক্ত অবস্থায় ফেলে তারা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান। আমার পরিবার ও পুলিশ উদ্ধার করার পর বুড়িচং হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হই।

মাহিন আরো বলেন, আমি দেশের মানুষের কাছে, দেশের বিচার ব্যবস্থার কাছে ও প্রশাসনের কাছে আমার সঙ্গে করা অন্যায়ের বিচার চাই। সমাজ থেকে এসব চাঁদাবাজ দূর করতে এবং আমাদের নির্ভয়ে চলাফেরা করার ব্যবস্থা করতে প্রশাসনের কাছে আবেদন জানাই।

যুবককে তুলে নিয়ে মারধরের কারণ জানতে চাইলে যুবদল নেতা ময়নাল বলেন, আমাদের বাড়িতে তরুণ মেয়ে আছে। মাহিন বাড়ির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় মাঝে মধ্যে উঁকি দেয়। তাকে নিষেধ করার পর না শোনায় শাসন করা হয়েছে। আমি তার কাছে চাঁদা দাবি করিনি। এগুলো মিথ্যা কথা।

৯৯৯ নম্বরে কল পেয়ে উদ্ধার করা বুড়িচং থানার এসআই নাসরুল্লাহ বলেন, ‘আমি গিয়ে মাহিনকে উদ্ধার করেছি। আমি যাওয়ার পরও তাকে মারধর করা হয়েছে। পরে তাকে উদ্ধার করে তার মায়ের জিম্মায় দিয়ে আসছি।’

বুড়িচং থানার ওসি আজিজুল হক আমার দেশকে বলেন, ‘আমি ঘটনাটি শুনেছি। আমার পুলিশ গিয়ে উদ্ধার করেছে। এ বিষয়ে তাদের থানায় অভিযোগ দিতে বলেছিলাম। পরে তারা কুমিল্লা আদালতে মামলা করেছেন বলে শুনেছি।’

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত