ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার শাহজাদাপুর ইউনিয়নে নির্মাণাধীন একটি সেতুতে উদ্বোধনের আগেই বড় ধরনের ফাটল দেখা দিয়েছে। এতে যেকোনো সময় সেতুটি ভেঙে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। এ নিয়ে এলাকায় চরম উদ্বেগ ও হতাশা ছড়িয়ে পড়েছে। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার ও প্রকৌশল বিভাগের বিরুদ্ধে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার ও দায়সারাভাবে তদারকির অভিযোগ উঠেছে।
স্বাধীনতার পর থেকে শাহজাদাপুর ইউনিয়নসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামের প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিল একটি সেতু ও উন্নত সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। সেতুটি নির্মিত হলে ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষি, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ সার্বিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা সম্ভব হতো।
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বরাদ্দ পাওয়া ৩ কোটি ২৩ লাখ টাকা ব্যয়ে সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। কিন্তু আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের আগেই সেতুর বিভিন্ন অংশে বড় বড় ফাটল দেখা দেওয়ায় সেই স্বপ্ন এখন দুঃস্বপ্নে পরিণত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সেতু নির্মাণে প্রয়োজনের তুলনায় কম সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়েছে এবং ঢালাইয়ের পর নিয়ম অনুযায়ী কিউরিং না করেই কাজ শেষ করা হয়েছে। এর ফলেই ঢালাই দুর্বল হয়ে ফাটল ধরেছে।
সরেজমিনে পরিদর্শনে দেখা যায়, এখনো পুরোপুরি চালু না হওয়া সত্ত্বেও সেতুর কাঠামোয় ফাটল স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান, যা বড় ধরনের দুর্ঘটনার ঝুঁকি তৈরি করছে। এলাকার বাসিন্দা মো. আব্বাস আলী বলেন, ‘আমরা প্রায় ৫০ বছর ধরে একটি সেতুর জন্য অপেক্ষা করেছি। কিন্তু এখন দেখি, সেতু উদ্বোধনের আগেই ভেঙে পড়ার মতো অবস্থা হয়েছে। আমাদের স্বপ্ন যেন কাগজেই থেকে গেল।’
গ্রামবাসী হাসান আলী বলেন, ‘সরকার টাকা দিয়েছে, কিন্তু কাজ হয়েছে দুর্বল। নিম্নমানের মালামাল ব্যবহার করা হয়েছে। এ বিষয়ে নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া দরকার।’
শাহজাদাপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. মিন্টু মিয়া অভিযোগ করে আমার দেশকে বলেন, ‘শুরু থেকেই ঠিকাদার নিম্নমানের ইট, বালি, সিমেন্ট ও রড ব্যবহার করছিল। সঠিক তদারকি না থাকার কারণেই আজ এই পরিস্থিতি।’ এলাকাবাসীর জোর দাবি—‘হাজার হাজার মানুষের স্বপ্নের এই সেতু বাস্তবায়নে জড়িত ঠিকাদার ও দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলীদের বিরুদ্ধে যথাযথ তদন্ত ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।’
এ বিষয়ে নির্মাণকাজে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লোকমান এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. লোকমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে কাজ বন্ধ আছে। কারণ মাটি পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা প্রাক্কলন অনুযায়ী কাজ করেছি। আমাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। ফাটলের কারণ খতিয়ে দেখা হবে।’
এদিকে সরেজমিনে এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সেতু নির্মাণে সিমেন্ট, রড ও পাথর ব্যবহারে অনিয়ম হয়েছে এবং কিউরিং ছাড়াই ঢালাই সম্পন্ন করা হয়েছে। তদারকি ও কাজের নিরীক্ষা ছিল নামমাত্র। অতিরিক্ত লাভের আশায় ঠিকাদার নিজের ইচ্ছামতো কাজ করেছেন বলে অভিযোগ তাদের।
উপজেলা প্রকৌশলীর দায়িত্বে থাকা আব্দুর রহিম আমার দেশকে বলেন, ‘এই ফাটলে সেতুটির বড় কোনো সমস্যা হবে না বলে আমরা মনে করছি। তারপরও বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

