চট্টগ্রামের বাঁশখালীর সাধনপুরে একই পরিবারের ১১ জনকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনার ২২ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো বিচার কাজ সম্পন্ন হয়নি। ২০০৩ সালের ১৮ নভেম্বর সাধনপুরের শীলপাড়ায় এ নৃশংস ঘটনা ঘটে। চারদিন বয়সি নবজাতকসহ পুড়িয়ে হত্যার ওই ঘটনা সারা দেশে তখন ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। হিন্দু সম্প্রদায়সহ বিভিন্ন সংগঠন এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বিচার দাবি করে। কিন্তু এতদিনেও সেটি সম্পন্ন করতে পারেনি সরকার।
জানা যায়, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর এই মামলার বিচার কাজ শেষ করার অঙ্গীকার করেছিল। কিন্তু দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থেকে তারা তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি। ফলে বের হয়নি ঘটনার আসল রহস্য। বাঁশখালীর চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার পর সনাতনী সম্প্রদায় প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠে। কিন্তু তারাও এখন নিশ্চুপ। ফলে ন্যায়বিচার নিয়ে শঙ্কায় নিহতদের স্বজনরা।
এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার বাদী বিমল কান্তি শীল আক্ষেপ করে বলেন, ঘটনার পর বিভিন্ন সময় সরকার দ্রুত বিচার নিশ্চিতের আশ্বাস দিলেও তা বাস্তবে রূপ নেয়নি। বের হয়নি ঘটনার আসল রহস্য। ফলে ন্যায়বিচার নিয়ে শঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন তারা।
জানা যায়, ঘটনার দিন রাতে শীলপাড়ার তেজেন্দ্র লাল শীলের বাড়িতে হামলা চালিয়ে একই পরিবারের ২২ সদস্যকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় নিহতরা হলেন, তেজেন্দ্র লাল শীল (৭০), তার স্ত্রী বকুল বালা শীল (৬০), ছেলে অনিল কান্তি শীল (৪২), অনিলের স্ত্রী স্মৃতি রাণী শীল (৩০), তাদের দুই মেয়ে রুমি শীল (১১) ও মুনিয়া শীল (৭), চার দিন বয়সি নবজাতক কার্তিক শীল, পরিবারের আরেক সদস্য বাবুটি শীল (২৫), প্রসাদী শীল (১৭), অ্যানি শীল (১৫) এবং তেজেন্দ্র শীলের বেয়াই দেবেন্দ্র শীল (৭৫)।
হত্যাকাণ্ডের পর নিহত তেজেন্দ্র শীলের পুত্র বিমল কান্তি শীল বাদী হয়ে মামলা দায়ের করলেও পরবর্তী সময়ে তা রাষ্ট্রপক্ষের মামলায় পরিণত হয়। মামলার ৩৭ আসামির মধ্যে ২৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে তাদের অধিকাংশই হাইকোর্ট থেকে জামিনে মুক্ত। পলাতকরাও বিভিন্ন উপায়ে জামিন নিয়ে মুক্ত জীবনে আছে বলে দাবি ভুক্তভোগী পরিবারের।
নথি থেকে জানা যায়, এই মামলায় সর্বমোট ৫৭ জন সাক্ষী ছিল। কিন্তু ২২ বছরে মাত্র ২৮ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। বিভিন্ন অজুহাতে বাকিদের সাক্ষ্য এখনো গ্রহণ করা হয়নি।
নিহতদের পরিবারকে ২০২২ সালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কল্যাণ তহবিল থেকে ৪৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। ওই পরিবারের সদস্য বিমল কান্তি শীল, সুনীল কান্তি শীল ও নির্মল কান্তি শীল প্রত্যেককে ১৫ লাখ টাকা করে পান।
চট্টগ্রাম জেলা পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট আশরাফ হোসেন চৌধুরী রাজ্জাক বলেন, গত অক্টোবর মাসেও মামলাটির শুনানির তারিখ ছিল। সাক্ষীদের নিয়মিত হাজির নিশ্চিত করার প্রক্রিয়া চলছে। সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে মামলার রায় হবে বলে জানান তিনি।

