বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশ পানিসীমা থেকে আবারো তিনটি মাছধরার ট্রলারসহ ১৬ জন বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা জেলেকে অপহরণ করেছে মায়ানমারের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্টী আরাকান আর্মি। মায়ানমারের পানিসীমায় অনুপ্রবেশের অভিযোগ তুলে ওই জেলেদের নিয়ে যায় বিদ্রোহী সংগঠনের সশস্ত্র যোদ্ধারা।
মঙ্গলবার রাতে অপহরণের বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন টেকনাফ পৌরসভার কায়ুকখালী বোট মালিক সমিতির সভাপতি সাজেদ আহমেদ।
এ নিয়ে গেলো ৯ মাসে বাংলাদেশের নাফ নদী ও সেন্টমার্টিন উপকূল সংলগ্ন পানিসীমা থেকে অন্তত ৩৪৬ জেলেকে অপহরণ করেছে সশস্ত্র গোষ্ঠীটি। যদিও বাংলাদেশি সীমান্তরক্ষী বিজিবির সহায়তায় চলতি বছরের মার্চ থেকে আগস্ট পর্যন্ত অন্তত ২০০ জেলে ফেরত আনা হয়েছে। এখনো ১৪৬ জন জেলে নিখোঁজ রয়েছেন।
বোট মালিক সমিতির নেতা সাজেদ আহমেদ জানান, সেন্টমার্টিনের অদূরে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার সময় টেকনাফ পৌরসভার কলেজপাড়া এলাকার জাকিরের মালিকানাধীন একটি ট্রলার থেকে ৬ জন রোহিঙ্গা জেলেকে ধরে নিয়ে যায় আরাকান আর্মি।
তিনি দাবি করেন, আরাকান আর্মির হেফাজতে থাকা আরও দুইটি ট্রলারে আরো ১০ জন জেলে রয়েছেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে। তবে, তাদের পরিচয় শনাক্তের কাজ চলছে।
তার মতে, টানা কয়েক মাস ধরে আরাকান আর্মির হাতে চলমান অপহরণ ও আটকের ঘটনার কারণে বাংলাদেশ সীমান্তজুড়ে জেলেদের উদ্বেগ ও আতঙ্ক বাড়ছে।
অপরদিকে মিয়ানমারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল আরাকান নেটওয়ার্ক জানিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার সকাল ৭টার দিকে রাখাইন রাজ্যের মংডু টাউনশিপের থাওয়াইং চাউং গ্রামের পশ্চিম উপকূল থেকে ২ দশমিক ৭ কিলোমিটার দূরে অভিযান চালিয়ে একটি ট্রলারসহ ৬ জন বাংলাদেশি জেলেকে আটক করে আরাকান কোস্টাল সিকিউরিটি পেট্রল। ট্রলার থেকে মাছ, জাল ও বাংলাদেশি মুদ্রাও জব্দ করা হয় বলে দাবি করা হয় ওই প্রতিবেদনে।
এদিকে একইদিনে রাথেডং টাউনশিপ উপকূল থেকে ৩ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার দূরে আরও দুটি ট্রলার আটক করে ১০ জেলেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। সবমিলিয়ে তিনটি ট্রলার ও ১৬ জন জেলেকে আটক করে নিরাপত্তা বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করেছে আরাকান আর্মি।
আটক জেলেদের বিরুদ্ধে রাখাইন রাজ্যের স্থানীয় আইনে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে ওই প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ট্রলার ও জেলে অপহরণের বিষয়টি আমরা জেনেছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সীমান্তে নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বিষয়টি খোঁজ নেয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ১২ নভেম্বরও একই ধরণের ঘটনা ঘটিয়েছে সশস্ত্র গোষ্টী আরাকান আর্মি। তারা মিয়ানমারের পানিসীমা অতিক্রমের অভিযোগ তুলে বাংলাদেশি দুটি মাছধরার ট্রলারসহ ১৩ জন রোহিঙ্গা জেলেকে অপহরণ করে নিয়ে যায়।
বিভিন্ন সূত্র দাবি করছে, এখন পর্যন্ত দেড়শতাধিক বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা জেলেকে অপহরণ করে আটকে রেখেছে আরাকান আর্মি।

