সাইলেন্সারযুক্ত অস্ত্রে ছাত্রদল নেতাকে হত্যা, অশ্রুসিক্ত বাবার আর্তনাদ

জমির উদ্দিন ও ওসমান জাহাঙ্গীর, চমেক
প্রকাশ : ২৮ অক্টোবর ২০২৫, ১১: ২৯
আপডেট : ২৮ অক্টোবর ২০২৫, ১১: ৩০

চোখে অশ্রু, কণ্ঠে আর্তনাদ। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে দাঁড়িয়ে অসহায় এক বাবা। পাশে ছেলের নিথর দেহ। কাঁপা গলায় মোহাম্মদ আলম বললেন, আমার ছেলেটারে সাইলেন্ট গুলিতে মেরেছে তার। শব্দও হইলো না। গাজী সিরাজের আদেশে তার লোক বোরহানরা গুলি করছে। আমার ছেলেটা শুধু বলছিল, স্বৈরাচারের দোসরদের পোস্টার সরাও, এই অপরাধেই ওরে মেরে ফেললো।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম নগরের বাকলিয়া এক্সেস রোড এলাকায় স্বৈরাচারের দোসরদের পোস্টার সরাতে বলায় গুলিতে নিহত হন ছাত্রদল নেতা সাজ্জাদ হোসেন (২৩)। মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) গভীর রাতে শাহ আমানত হাউজিং সোসাইটি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আরও অন্তত ১০ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

নিহত সাজ্জাদ (২৩) মহানগর যুবদলের বহিষ্কৃত নেতা এমদাদুল হক বাশার গ্রুপের কর্মী ছিলেন। বাকলিয়া এক্সেস রোড এলাকায় তাদের বাড়ি

সাজ্জাদের বড় ভাই মো. হানিফ বলেন, যারা হত্যায় অংশ নিয়েছে তারা সবাই গাজী সিরাজের গ্রুপের লোক। ভাইয়াকে টার্গেট করেই ডেকে নেয়। একটু পরেই খবর পাই ওরে গুলি করা হয়েছে। হাসপাতালে আনার পর ডাক্তার জানায়, ও তো আগেই মারা গেছে।

তিনি আরও বলেন, ওরা এমন অস্ত্র ব্যবহার করছে যেটাতে শব্দই হয় না। সাইলেন্ট বা সাপ্রেসড গান দিয়ে গুলি করেছে। দোকানের লোকজনও বুঝে নাই গুলি হয়েছে।

বাকলিয়া এক্সেস রোড এলাকার আবুল কাশেম নামে এক দোকানি বলেন, রাত তখন ২টা। হঠাৎ দেখি কয়েকটা মোটরসাইকেল। মারামারি। কয়েকজন সাজ্জাদের সঙ্গে কথা বলে। হঠাৎ একটা ‘টিক’ শব্দ, তারপর দেখি ও মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। আমরা ভেবেছিলাম পাথর পড়েছে। পরে দেখি বুকে গুলির চিহ্ন।

এদিকে পুলিশ বলছে, ঘটনাটি রাজনৈতিক বিরোধের জেরে হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ চলছে। জড়িতদের শনাক্তের পর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঘটনার পর এলাকাজুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয়দের আশঙ্কা, দুই যুবদল গ্রুপের মধ্যে আবারও সংঘর্ষ হতে পারে।

সাপ্রেসড অস্ত্র কীভাবে কাজ করে

নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, সাইলেন্ট গান বা সাপ্রেসড ফায়ারআর্ম (Suppressed Firearm) এমন এক ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র, যাতে সাইলেন্সার বা সাপ্রেসর নামের একটি বিশেষ যন্ত্র যুক্ত থাকে। এটি গুলির শব্দ ও ফ্ল্যাশ দমন করে ফলে খুব কাছে থেকেও বোঝা যায় না যে গুলি ছোড়া হয়েছে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর এমদাদুল হক বলেন, সাপ্রেসড অস্ত্র সাধারণত গুপ্তহত্যা বা টার্গেট কিলিংয়ে ব্যবহৃত হয়। এতে শব্দ প্রায় ৮০ শতাংশ পর্যন্ত কমানো যায়। হত্যাকারীরা কাছ থেকে গুলি করলেও আশপাশের কেউ টের পায় না। বাংলাদেশে এটি বৈধ নয়, তবে সীমান্তপথে চোরাচালানের মাধ্যমে কিছু সাইলেন্সার যুক্ত পিস্তল ঢোকে বলে রিপোর্টে উল্লেখ আছে।

তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রামের মতো শহরে সাপ্রেসড অস্ত্রের ব্যবহার নিরাপত্তার জন্য নতুন হুমকি। এই অস্ত্রের উৎস ও প্রবাহ শনাক্ত করা এখনই জরুরি।

হাসপাতালের বারান্দায় বসে মোহাম্মদ আলম ফুপিয়ে কাঁদছিলেন। আর বলছিলেন, আমার ছেলেটা রাজনীতি করতো, কিন্তু কারও ক্ষতি করেনি। যারা সাপ্রেসড গুলিতে ওরে মেরেছে, আল্লাহ যেন বিচার করেন। আমি ওদের ফাঁসি চাই।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত