আত্মরক্ষার্থে গুলি চালানোর নির্দেশ সিএমপি কমিশনারের

চট্টগ্রাম ব্যুরো
প্রকাশ : ১৪ আগস্ট ২০২৫, ১৭: ৫৫

চট্টগ্রামে অভিযানে গিয়ে একের পর এক সন্ত্রাসীদের হামলার শিকার হচ্ছেন পুলিশ সদস্যরা। ধারালো অস্ত্রের কোপে গুরুতর আহত হয়েছেন অনেকে। এমন পরিস্থিতিতে আত্মরক্ষার্থে যে কোনো মুহূর্তে গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার হাসিব আজিজ।

মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) রাতে সিএমপির ওয়্যারলেস নেটওয়ার্কে দেওয়া জরুরি বার্তায় কমিশনার বলেন, পুলিশের সামনে কেউ অস্ত্র বের করা মাত্রই গুলি করতে হবে; সেটি আগ্নেয়াস্ত্র হোক বা ধারালো অস্ত্র। “হয় মাথায়, নয়তো বুকে, নয়তো পিঠে। সরকারি গুলির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।”

বিজ্ঞাপন

বিষয়টি বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) আমার দেশকে নিশ্চিত করেন সিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার মাহমুদা বেগম। তিনি বলেন, “এটি আমাদের ইন্টারনাল একটি নির্দেশনা। এই বিষয়ে আর কিছু বলতে চাই না।”

কমিশনার ওয়্যারলেস বার্তায় বলেন, দণ্ডবিধির ৯৬ থেকে ১০৬ ধারা অনুযায়ী, পুলিশ আত্মরক্ষার পূর্ণ অধিকার রাখে। “আক্রমণের আগেই, অস্ত্র বের করার মুহূর্তেই গুলি করতে হবে। বন্দরে আমার এসআই গুরুতর আহত হয়েছেন। আরেক ইঞ্চি এদিক-সেদিক হলে প্রাণঘাতী হতে পারতো।”

সোমবার (১১ আগস্ট) রাতে নগরের বন্দর থানাধীন ঈশান মিস্ত্রি হাট এলাকায় আওয়ামী লীগের মিছিলে ধাওয়া দিতে গিয়ে সন্ত্রাসীদের হামলার শিকার হন এসআই আবু সাঈদ রানা। ধারালো অস্ত্রের কোপে তাঁর মাথা ও শরীরের কয়েকটি স্থানে গুরুতর জখম হয়। বর্তমানে তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

এসআই রানার এক সহযোগী আমার দেশকে বলেন, “হঠাৎ করে চার-পাঁচজন রানার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। একজন হাতে দা নিয়ে পেছন দিক থেকে কোপ দেয়। হেলমেট থাকলেও কোপ এত জোরে লাগে যে মাথা ফেটে যায়। তখনই ভাবলাম, যদি অস্ত্র ব্যবহার করতাম হয়তো এমন হতো না।”

কমিশনারের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের আগে যে প্রাধিকার অনুযায়ী থানাগুলোতে অস্ত্র ও তাজা বুলেট দেওয়া হতো, তা পুনর্বহাল করা হয়েছে। এখন থেকে থানার মোবাইল পার্টি, পেট্রোল পার্টি, ডিবি টিম ও চেকপোস্টে দায়িত্বে থাকা সব পুলিশ সদস্যকে আগ্নেয়াস্ত্র বহন করতে হবে।

এক উপপরিদর্শক (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, “অনেক সময় আমরা অস্ত্র হাতে থাকলেও ব্যবহার করি না, কারণ গুলিতে মৃত্যু হলে আইনি জটিলতা হয়। কিন্তু কমিশনারের নির্দেশের পর এখন আত্মরক্ষায় সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধা থাকবে না।”

সিএমপির অভ্যন্তরীণ তথ্য অনুযায়ী, ৫ আগস্টের পর থেকে অন্তত অর্ধশতাধিক পুলিশ সদস্য নগরের বিভিন্ন এলাকায় হামলার শিকার হয়েছেন। গত কয়েক মাসে বন্দর, চকবাজার, কোতোয়ালী ও খুলশী এলাকায় একাধিক হামলার ঘটনা ঘটেছে।

পেট্রোল ডিউটিতে থাকা এক সার্জেন্ট বলেন, “এখন পরিস্থিতি এমন যে, টহল দিতে বের হলে মনে হয় যেকোনো মুহূর্তে আক্রমণ হতে পারে। আমরা চাই এই নির্দেশ দ্রুত কার্যকর হোক।”

পুলিশের ধারণা, সশস্ত্র হামলার ঘটনায় তাৎক্ষণিক গুলি চালানোর নির্দেশ মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়ন হলে সন্ত্রাসীরা অস্ত্র বের করতে ভয় পাবে। সিএমপির এক সহকারী কমিশনার বলেন, “যখন জানবে পুলিশ সামনে অস্ত্র বের করলেই গুলি হবে, তখন তারা সতর্ক হবে। এতে হামলার প্রবণতা কমবে।”

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত