সরেজমিন কক্সবাজারের ভারুয়াখালী
আনছার হোসেন, কক্সবাজার
কক্সবাজার সদর উপজেলার ভারুয়াখালী ইউনিয়নের মশরফ পাড়ায় বিএনপি নেতা রহিম উদ্দিন সিকদার নিহতের ঘটনায় রাজনৈতিক উত্তেজনা ছড়ানো হয়েছিল। সে সময় ‘জামায়াতের হাতে বিএনপি নেতা খুন’ বলে যে তোলপাড় তৈরি করা হয়েছিল তা আসলে জমিসংক্রান্ত বিরোধের হত্যাকাণ্ড। সেখানে বিএনপি কিংবা জামায়াতে ইসলামির দলীয় কোনো সম্পৃক্ততা নেই। বরং স্থানীয় বিএনপির সভাপতি শফিকুর রহমান সিকদার, তার পরিবার এবং নিজেদের লোকজন এই হত্যাকাণ্ডকে পুঁজি করে তাদের দীর্ঘদিনের পারিবারিক বিরোধের ‘প্রতিশোধ’ নিয়েছেন।
এই প্রতিশোধের শিকার হয়েছেন ‘বিডিফ্যাক্টচেকের’ প্রতিষ্ঠাতা, আমেরিকা প্রবাসী ও ফ্রামিংহাম স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. জাহেদ আরমানের পরিবার। অসুস্থ বাবা মাহফুজুর রহমান ও মা জাহানারা রহমানের চোখের সামনেই লুট করা হয়েছে ভারুয়াখালীর মশরফ পাড়ার তার পৈত্রিক বাড়ি। শুধু জাহেদ আরমানের বাড়ি নয়, বেছে বেছে তার নিকটাত্মীয়দের অন্তত ছয়টি বাড়িতে হামলা ও লুটপাট করা হয়েছে। যদিও এই পরিবার গুলোর বিএনপি নেতা রহিম উদ্দিন সিকদার হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে ন্যূনতম কোনো সম্পর্ক নেই।
মশরফ পাড়া ও আশপাশের এলাকা ঘুরে এবং লোকজনের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্যই মিলেছে। এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সাধারণের মাঝে একধরণের আতঙ্ক বিরাজ করছে। কেউ মুখ খুলে কিছু বলার সাহস পাচ্ছেন না। বাড়ি গুলোতে কেবল নারীরাই রয়েছেন। ভয়ে পুরুষশূণ্য হয়ে পড়েছে হত্যাকাণ্ডে জড়িত পরিবার এবং হত্যার সঙ্গে ন্যূনতম সম্পর্ক না থেকেও এলাকাছাড়া ড. জাহেদের নিকটাত্মীয়রা।
গত ১৩ জুলাই বিকালে একটি খাস জমি ও খালের দখল নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধের জের ধরে হামলার শিকার হন ভারুয়াখালী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি শফিকুর রহমান সিকদারের ছোট ভাই, ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক রহিম উদ্দিন সিকদার ও তাদের পরিবারের কয়েকজন।
সংশ্লিষ্টদের মতে, প্রতিবেশী মোকতার আহমদের পরিবারের সঙ্গে মরহুম নবী হোসেনের পরিবারের বাড়ির পাশের খাস জমি ও খাল নিয়ে বিরোধ চলছিল। এই বিরোধে শফিকুর রহমান সিকদারের পরিবারের কোন সম্পৃক্ততা না থাকলেও সালিশী বৈঠকে আরেক বিএনপি নেতা রাশেদ উল্লাহর শ্বশুর নবী হোসেনের পরিবারের ‘পক্ষাবলম্বন’ করায় হামলার শিকার হন তারা। পরে গুরুতর আহত রহিম উদ্দিন সিকদার চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৫ জুলাই রাতে মারা যান।
রহিম উদ্দিন সিকদারের মৃত্যুতে এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ফলে হামলায় জড়িত মোকতার আহমদের পরিবারের লোকজন এবং সেই খাস জমি ও খালের ভোগদখলের দাবিদার মশরফ পাড়ার বাইতুর রহমান জামে মসজিদ কমিটির লোকজন গা ঢাকা দেয়। তবে ওইদিন গভীর রাতেই চলে ঘরে ঘরে তান্ডব। সেই রাতে মোকতার আহমদ পরিবারের কারো ঘরে হামলা না হলেও হামলা ও লুটপাট চলে ড. জাহেদ আরমানসহ তার নিকটাত্মীয়দের ৬টি বাড়িতে। এই ছয় বাড়ির একটি জাহেদ আরমানের পৈত্রিক বাড়ি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, জমির বিরোধ, হামলা ও খুনের সঙ্গে জাহেদ আরমানের পরিবারের কারো কোনো সম্পর্ক না থাকলেও কেবল বেছে বেছে তার নিকটাত্মীয়দের বাড়িতেই হামলা ও লুটপাট করা হয়েছে। মুখোশধারী হামলাকারীরা প্রতিটি বাড়ি থেকেই স্বর্ণালংকার, নগদ টাকা, ফ্রিজ, নতুন কাপড়সহ মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে গেছে। দুইটি বাড়ি থেকে গরুও লুট করা হয়েছে।
লুটপাটের শিকার বাড়ির মালিকরা হলেন জাহেদ আরমানের বাবা মাহফুজুর রহমান, তাদের নিকটাত্মীয় কবির আহমদ, মাহমুদুল হক, বশির আহমদ, কামাল হোসেন এবং ওমান প্রবাসী হেলাল উদ্দিন। তাদের মধ্যে মাহফুজুর রহমানের বাড়িটি বাইতুর রহমান জামে মসজিদের কাছে।
জাহেদ আরমানের মা জাহানারা রহমান বলেন, তিনি ও তার স্বামী মাহফুজুর রহমান- দুজনেই সেই রাতে বাসায় ছিলেন। হামলার সময় অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে তিনি কোনো রকমে প্রাণ নিয়ে বাড়ি ছেড়েছেন।
তিনি আরও বলেন, হামলাকারীরা গভীর রাতে ঘরে ঢুকে ভাঙচুর করে এবং ১৫ ভরি স্বর্ণালংকার, একটি ফ্রিজ, মাইক্রোওয়েভ, এয়ার ফ্রায়ার, ল্যাপটপ এবং নগদ ১০ লাখ টাকা লুট করে নিয়ে যায়।
কবির আহমদের স্ত্রী মর্জিনা আক্তার বলেন, রাত দুইটার দিকে মুখোশধারী ১০-১৫ জন বাড়িতে ঢুকে আলমারি ভেঙে ১৯ হাজার নগদ টাকা, ৭০ হাজার টাকা মূল্যের লবণ মাঠের পলিথিন, ফ্যান, গ্যাসের চুলা স্বর্ণালংকারসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, আমেরিকা প্রবাসী ড. জাহেদ আরমানের বাবা মাহফুজুর রহমানের সঙ্গে বহুদিন আগে থেকেই স্থানীয় বিএনপি নেতা শফিকুর রহমান সিকদারের পরিবারের বিরোধ চলছিল। সেই বিরোধের ‘প্রতিশোধ’ নিতেই উদ্দেশ্যমূলকভাবে মাহফুজুর রহমান ও তার আত্মীয়দের বাড়িতে বেছে বেছে হামলা ও লুটপাট চালানো হয়েছে।
তাদের মতে, খাস জমি ও খালের ভোগদখল নিয়ে বিরোধ চলছিল মোকতার আহমদ পরিবারের সঙ্গে নবী হোসেন পরিবারের। সেখানে ভোগদখল দাবি করে বিরোধে জড়িয়ে পড়ে মশরফ পাড়া বাইতুর রহমান জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির লোকজন। কিন্তু ত্রিমুখী এই বিরোধে জাহেদ আরমানের পরিবার ও তার আত্মীয়দের কোনো সম্পর্ক নেই।
ভারুয়াখালীর ৪নম্বর ওয়ার্ডের মশরফ পাড়ার যে জমিতে খুন হন রহিম উদ্দিন সিকদার সেই জমিটি মূলত ১নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত। অর্থাৎ জমির মালিক সরকার। কিন্তু দীর্ঘকাল এই জমি ও খালের ভোগদখল করে আসছিলেন মোকতার আহমদ পরিবার।
মাঝখানে ভারুয়াখালীরই বাসিন্দা, কক্সবাজার সরকারি কলেজের সাবেক উপাধ্যক্ষ মরহুম জিএম সলিম উল্লাহ ওই জমি নিজের নামে বন্দোবস্তির আবেদন করেন। আবেদন করে বন্দোবস্তি না পেলেও সেই জমি তিনি নবী হোসেন নামের এক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে দেন। নবী হোসেন খতিয়ানভুক্ত জমির সঙ্গে এই জমিও কিনে সেখানে দু’তলা পাকা বসতবাড়ি তৈরি করে বসবাস করে আসছিলেন।
কিন্তু ঝামেলা বাধে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট দেশে পট পরিবর্তনের পর। মোকতার আহমদের পরিবার তাদের ভোগদখলে থাকা জমি ও খালের দখল পেতে মরিয়া হয়ে উঠেন। তারা কিছুদিন পরপরই নবী হোসেনের বসতবাড়ি ও স্থাপনায় হামলা চালাতে থাকেন।
নবী হোসেনের মেয়ে ওয়াহিদা আফসানা জানান, এ নিয়ে বিএনপি নেতা শফিকুর রহমান সিকদারের কাছে অভিযোগ করা হয়। তিনি সালিশী রায় দেন, যারা কাগজপত্র দেখাতে পারবে তারাই ওই জমি ভোগদখল করবেন। কিন্তু সেই সালিশ মানতে নারাজ মোকতার আহমদ পরিবারের সদস্য আবদুল্লাহ আল নোমান।
এসব ঘটনায় গত ১৬ জুলাই আদালতে মামলা করেন নবী হোসেন পরিবার। নবী হোসেনের পুত্রবধূ উম্মা হাফসার দায়ের করা সেই মামলার তদন্ত আসে কক্সবাজার সদর মডেল থানায়।
এ বিষয়ে জানতে বিএনপি নেতা শফিকুর রহমান সিকদারকে পাওয়া না গেলেও তার ছেলে ওয়াহিদ আরেফিন বলেন, আমার চাচা নিহত রহিম উদ্দিন সিকদার এলাকায় কখনো কোনো বিরোধের সঙ্গে জড়িত ছিল না, তারপরও জামায়াত নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান ও তার সহযোগীরা পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করেছে। এলাকার বিভিন্ন বসতবাড়িতে হামলার বিষয়টিও মিথ্যা।
এদিকে মোক্তার আহমদের ছেলে আবদুল্লাহ আল নোমান নিজেই ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে দাবি করেছিলেন তিনি কক্সবাজার শহর জামায়াতের ৮নম্বর ওয়ার্ডের ফাতের ঘোনা ইউনিটের সভাপতি। যদিও কক্সবাজার জেলা ও শহর জামায়াত বিবৃতি দিয়ে দাবি করেছে, আবদুল্লাহ আল নোমান তাদের দলের সঙ্গে যুক্ত নন।
অন্যদিকে শফিকুর রহমান সিকদার ভারুয়াখালী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও তারই ছোট ভাই নিহত রহিম উদ্দিন সিকদার বিএনপির একই কমিটির যুগ্ম সম্পাদক।
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, ১৩ জুলাইয়ের হামলায় মূল নেতৃত্ব দিয়েছেন আবদুল্লাহ আল নোমান। আর এই কারণেই জমির বিরোধে সৃষ্ট ঘটনাটিকে জামায়াত-বিএনপির হামলা-সংঘর্ষ বানিয়ে ফেলা হয়। যদিও দলীয় ভাবে জামায়াত কিংবা বিএনপির কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
বিএনপি নেতা এই ঘটনাকে জামায়াতের হামলায় খুন বলে প্রচার করে। জামায়াত এই ঘটনায় তাদের সম্পৃক্ততা নেই বলে ব্রিফিং ও বিবৃতি দিয়েছে।
কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি ইলিয়াস খান বলেন, হত্যা মামলার প্রাথমিক বিবরণীতে ঘটনার ধরণ হিসেবে ‘জমির বিরোধে খুন’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। মামলার বাদী স্থানীয় ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি শফিকুর রহমান সিকদার ২১ জনের নাম উল্লেখ করে ২৬ জনের বিরুদ্ধে মামলাটি করেছেন। মামলায় মোকতার আহমদের তিন ছেলেকে আসামি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে আলোচিত সেই আবদুল্লাহ আল নোমানকে করা হয়েছে প্রধান আসামি।
অপরদিকে ড. জাহেদ আরমানের ছোট বোন বাদী হয়ে বিএনপি নেতা শফিকুর রহমান সিকদার ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা করেছেন।
কক্সবাজার সদর উপজেলার ভারুয়াখালী ইউনিয়নের মশরফ পাড়ায় বিএনপি নেতা রহিম উদ্দিন সিকদার নিহতের ঘটনায় রাজনৈতিক উত্তেজনা ছড়ানো হয়েছিল। সে সময় ‘জামায়াতের হাতে বিএনপি নেতা খুন’ বলে যে তোলপাড় তৈরি করা হয়েছিল তা আসলে জমিসংক্রান্ত বিরোধের হত্যাকাণ্ড। সেখানে বিএনপি কিংবা জামায়াতে ইসলামির দলীয় কোনো সম্পৃক্ততা নেই। বরং স্থানীয় বিএনপির সভাপতি শফিকুর রহমান সিকদার, তার পরিবার এবং নিজেদের লোকজন এই হত্যাকাণ্ডকে পুঁজি করে তাদের দীর্ঘদিনের পারিবারিক বিরোধের ‘প্রতিশোধ’ নিয়েছেন।
এই প্রতিশোধের শিকার হয়েছেন ‘বিডিফ্যাক্টচেকের’ প্রতিষ্ঠাতা, আমেরিকা প্রবাসী ও ফ্রামিংহাম স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. জাহেদ আরমানের পরিবার। অসুস্থ বাবা মাহফুজুর রহমান ও মা জাহানারা রহমানের চোখের সামনেই লুট করা হয়েছে ভারুয়াখালীর মশরফ পাড়ার তার পৈত্রিক বাড়ি। শুধু জাহেদ আরমানের বাড়ি নয়, বেছে বেছে তার নিকটাত্মীয়দের অন্তত ছয়টি বাড়িতে হামলা ও লুটপাট করা হয়েছে। যদিও এই পরিবার গুলোর বিএনপি নেতা রহিম উদ্দিন সিকদার হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে ন্যূনতম কোনো সম্পর্ক নেই।
মশরফ পাড়া ও আশপাশের এলাকা ঘুরে এবং লোকজনের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্যই মিলেছে। এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সাধারণের মাঝে একধরণের আতঙ্ক বিরাজ করছে। কেউ মুখ খুলে কিছু বলার সাহস পাচ্ছেন না। বাড়ি গুলোতে কেবল নারীরাই রয়েছেন। ভয়ে পুরুষশূণ্য হয়ে পড়েছে হত্যাকাণ্ডে জড়িত পরিবার এবং হত্যার সঙ্গে ন্যূনতম সম্পর্ক না থেকেও এলাকাছাড়া ড. জাহেদের নিকটাত্মীয়রা।
গত ১৩ জুলাই বিকালে একটি খাস জমি ও খালের দখল নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধের জের ধরে হামলার শিকার হন ভারুয়াখালী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি শফিকুর রহমান সিকদারের ছোট ভাই, ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক রহিম উদ্দিন সিকদার ও তাদের পরিবারের কয়েকজন।
সংশ্লিষ্টদের মতে, প্রতিবেশী মোকতার আহমদের পরিবারের সঙ্গে মরহুম নবী হোসেনের পরিবারের বাড়ির পাশের খাস জমি ও খাল নিয়ে বিরোধ চলছিল। এই বিরোধে শফিকুর রহমান সিকদারের পরিবারের কোন সম্পৃক্ততা না থাকলেও সালিশী বৈঠকে আরেক বিএনপি নেতা রাশেদ উল্লাহর শ্বশুর নবী হোসেনের পরিবারের ‘পক্ষাবলম্বন’ করায় হামলার শিকার হন তারা। পরে গুরুতর আহত রহিম উদ্দিন সিকদার চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৫ জুলাই রাতে মারা যান।
রহিম উদ্দিন সিকদারের মৃত্যুতে এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ফলে হামলায় জড়িত মোকতার আহমদের পরিবারের লোকজন এবং সেই খাস জমি ও খালের ভোগদখলের দাবিদার মশরফ পাড়ার বাইতুর রহমান জামে মসজিদ কমিটির লোকজন গা ঢাকা দেয়। তবে ওইদিন গভীর রাতেই চলে ঘরে ঘরে তান্ডব। সেই রাতে মোকতার আহমদ পরিবারের কারো ঘরে হামলা না হলেও হামলা ও লুটপাট চলে ড. জাহেদ আরমানসহ তার নিকটাত্মীয়দের ৬টি বাড়িতে। এই ছয় বাড়ির একটি জাহেদ আরমানের পৈত্রিক বাড়ি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, জমির বিরোধ, হামলা ও খুনের সঙ্গে জাহেদ আরমানের পরিবারের কারো কোনো সম্পর্ক না থাকলেও কেবল বেছে বেছে তার নিকটাত্মীয়দের বাড়িতেই হামলা ও লুটপাট করা হয়েছে। মুখোশধারী হামলাকারীরা প্রতিটি বাড়ি থেকেই স্বর্ণালংকার, নগদ টাকা, ফ্রিজ, নতুন কাপড়সহ মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে গেছে। দুইটি বাড়ি থেকে গরুও লুট করা হয়েছে।
লুটপাটের শিকার বাড়ির মালিকরা হলেন জাহেদ আরমানের বাবা মাহফুজুর রহমান, তাদের নিকটাত্মীয় কবির আহমদ, মাহমুদুল হক, বশির আহমদ, কামাল হোসেন এবং ওমান প্রবাসী হেলাল উদ্দিন। তাদের মধ্যে মাহফুজুর রহমানের বাড়িটি বাইতুর রহমান জামে মসজিদের কাছে।
জাহেদ আরমানের মা জাহানারা রহমান বলেন, তিনি ও তার স্বামী মাহফুজুর রহমান- দুজনেই সেই রাতে বাসায় ছিলেন। হামলার সময় অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে তিনি কোনো রকমে প্রাণ নিয়ে বাড়ি ছেড়েছেন।
তিনি আরও বলেন, হামলাকারীরা গভীর রাতে ঘরে ঢুকে ভাঙচুর করে এবং ১৫ ভরি স্বর্ণালংকার, একটি ফ্রিজ, মাইক্রোওয়েভ, এয়ার ফ্রায়ার, ল্যাপটপ এবং নগদ ১০ লাখ টাকা লুট করে নিয়ে যায়।
কবির আহমদের স্ত্রী মর্জিনা আক্তার বলেন, রাত দুইটার দিকে মুখোশধারী ১০-১৫ জন বাড়িতে ঢুকে আলমারি ভেঙে ১৯ হাজার নগদ টাকা, ৭০ হাজার টাকা মূল্যের লবণ মাঠের পলিথিন, ফ্যান, গ্যাসের চুলা স্বর্ণালংকারসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, আমেরিকা প্রবাসী ড. জাহেদ আরমানের বাবা মাহফুজুর রহমানের সঙ্গে বহুদিন আগে থেকেই স্থানীয় বিএনপি নেতা শফিকুর রহমান সিকদারের পরিবারের বিরোধ চলছিল। সেই বিরোধের ‘প্রতিশোধ’ নিতেই উদ্দেশ্যমূলকভাবে মাহফুজুর রহমান ও তার আত্মীয়দের বাড়িতে বেছে বেছে হামলা ও লুটপাট চালানো হয়েছে।
তাদের মতে, খাস জমি ও খালের ভোগদখল নিয়ে বিরোধ চলছিল মোকতার আহমদ পরিবারের সঙ্গে নবী হোসেন পরিবারের। সেখানে ভোগদখল দাবি করে বিরোধে জড়িয়ে পড়ে মশরফ পাড়া বাইতুর রহমান জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির লোকজন। কিন্তু ত্রিমুখী এই বিরোধে জাহেদ আরমানের পরিবার ও তার আত্মীয়দের কোনো সম্পর্ক নেই।
ভারুয়াখালীর ৪নম্বর ওয়ার্ডের মশরফ পাড়ার যে জমিতে খুন হন রহিম উদ্দিন সিকদার সেই জমিটি মূলত ১নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত। অর্থাৎ জমির মালিক সরকার। কিন্তু দীর্ঘকাল এই জমি ও খালের ভোগদখল করে আসছিলেন মোকতার আহমদ পরিবার।
মাঝখানে ভারুয়াখালীরই বাসিন্দা, কক্সবাজার সরকারি কলেজের সাবেক উপাধ্যক্ষ মরহুম জিএম সলিম উল্লাহ ওই জমি নিজের নামে বন্দোবস্তির আবেদন করেন। আবেদন করে বন্দোবস্তি না পেলেও সেই জমি তিনি নবী হোসেন নামের এক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে দেন। নবী হোসেন খতিয়ানভুক্ত জমির সঙ্গে এই জমিও কিনে সেখানে দু’তলা পাকা বসতবাড়ি তৈরি করে বসবাস করে আসছিলেন।
কিন্তু ঝামেলা বাধে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট দেশে পট পরিবর্তনের পর। মোকতার আহমদের পরিবার তাদের ভোগদখলে থাকা জমি ও খালের দখল পেতে মরিয়া হয়ে উঠেন। তারা কিছুদিন পরপরই নবী হোসেনের বসতবাড়ি ও স্থাপনায় হামলা চালাতে থাকেন।
নবী হোসেনের মেয়ে ওয়াহিদা আফসানা জানান, এ নিয়ে বিএনপি নেতা শফিকুর রহমান সিকদারের কাছে অভিযোগ করা হয়। তিনি সালিশী রায় দেন, যারা কাগজপত্র দেখাতে পারবে তারাই ওই জমি ভোগদখল করবেন। কিন্তু সেই সালিশ মানতে নারাজ মোকতার আহমদ পরিবারের সদস্য আবদুল্লাহ আল নোমান।
এসব ঘটনায় গত ১৬ জুলাই আদালতে মামলা করেন নবী হোসেন পরিবার। নবী হোসেনের পুত্রবধূ উম্মা হাফসার দায়ের করা সেই মামলার তদন্ত আসে কক্সবাজার সদর মডেল থানায়।
এ বিষয়ে জানতে বিএনপি নেতা শফিকুর রহমান সিকদারকে পাওয়া না গেলেও তার ছেলে ওয়াহিদ আরেফিন বলেন, আমার চাচা নিহত রহিম উদ্দিন সিকদার এলাকায় কখনো কোনো বিরোধের সঙ্গে জড়িত ছিল না, তারপরও জামায়াত নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান ও তার সহযোগীরা পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করেছে। এলাকার বিভিন্ন বসতবাড়িতে হামলার বিষয়টিও মিথ্যা।
এদিকে মোক্তার আহমদের ছেলে আবদুল্লাহ আল নোমান নিজেই ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে দাবি করেছিলেন তিনি কক্সবাজার শহর জামায়াতের ৮নম্বর ওয়ার্ডের ফাতের ঘোনা ইউনিটের সভাপতি। যদিও কক্সবাজার জেলা ও শহর জামায়াত বিবৃতি দিয়ে দাবি করেছে, আবদুল্লাহ আল নোমান তাদের দলের সঙ্গে যুক্ত নন।
অন্যদিকে শফিকুর রহমান সিকদার ভারুয়াখালী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও তারই ছোট ভাই নিহত রহিম উদ্দিন সিকদার বিএনপির একই কমিটির যুগ্ম সম্পাদক।
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, ১৩ জুলাইয়ের হামলায় মূল নেতৃত্ব দিয়েছেন আবদুল্লাহ আল নোমান। আর এই কারণেই জমির বিরোধে সৃষ্ট ঘটনাটিকে জামায়াত-বিএনপির হামলা-সংঘর্ষ বানিয়ে ফেলা হয়। যদিও দলীয় ভাবে জামায়াত কিংবা বিএনপির কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
বিএনপি নেতা এই ঘটনাকে জামায়াতের হামলায় খুন বলে প্রচার করে। জামায়াত এই ঘটনায় তাদের সম্পৃক্ততা নেই বলে ব্রিফিং ও বিবৃতি দিয়েছে।
কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি ইলিয়াস খান বলেন, হত্যা মামলার প্রাথমিক বিবরণীতে ঘটনার ধরণ হিসেবে ‘জমির বিরোধে খুন’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। মামলার বাদী স্থানীয় ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি শফিকুর রহমান সিকদার ২১ জনের নাম উল্লেখ করে ২৬ জনের বিরুদ্ধে মামলাটি করেছেন। মামলায় মোকতার আহমদের তিন ছেলেকে আসামি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে আলোচিত সেই আবদুল্লাহ আল নোমানকে করা হয়েছে প্রধান আসামি।
অপরদিকে ড. জাহেদ আরমানের ছোট বোন বাদী হয়ে বিএনপি নেতা শফিকুর রহমান সিকদার ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা করেছেন।
মঙ্গলবার (২১অক্টোবর) জিয়া সাইবার ফোর্সের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি কে,এম হারুন অর রশিদ ও সাধারন সম্পাদক মিয়া মোহাম্মদ রাজিবুল ইসলাম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে সভাপতি- সাধারন সম্পাদকসহ ৫৩ সদস্য বিশিষ্ট নির্বাহি কমিটি ঘোষনা দেন। ওই কিমিটির নির্বাহি সদস্য হিসেবে নূর আলমের নাম রয়েছে।
১ ঘণ্টা আগেনিখোঁজ মুফতি মুহিবুল্লাহর ছেলে আব্দুল্লাহ জানান, তিনি জুমার নামাজে হিন্দু সম্প্রদায়ের সংগঠন ইসকন নিয়ে বয়ান করে ছিলেন। এরপর থেকে তাকে হুমকি দিয়ে বেশ কয়েকটি উড়ো চিঠি দেয়া হয়। এরপর থেকে তিনি বিষয়টি নিয়ে মসজিদ কমিটির সাথে কথা বলেন। একপর্যায়ে বুধবার সকাল থেকে তিনি নিখোঁজ হন।
২ ঘণ্টা আগেগাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার ভরতখালীতে নদী শাসন ও ভাঙনরোধ প্রকল্পের কাজে বাধার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে গ্রামবাসী। বুধবার বিকেলে যমুনা নদীর তীর সংলগ্ন এলাকায় স্থানীয় নদীপাড়ের মানুষ এ মানববন্ধন করে।
২ ঘণ্টা আগেস্থানীয়রা জানান, আলমাস উপজেলার ৩ নম্বর চারিকাটা ইউনিয়নের নয়াখেল পূর্ব গ্রামের শরীফ উদ্দিনের ছেলে। জকিগঞ্জ ব্যাটালিয়নের (১৯ বিজিবি) সুইরঘাট বিওপির চার বিজিবি সদস্য দুটি মোটরসাইকেলযোগে চোরাইপণ্যবাহী একটি পিকআপকে ধাওয়া করেন। এ সময় বিজিবির ছোড়া গুলিতে আলমাস গুলিবিদ্ধ হন।
৩ ঘণ্টা আগে