তিতাসের পুনিয়ারটন গ্রামে লাগেনি উন্নয়নের ছোঁয়া

উপজেলা প্রতিনিধি, তিতাস (কুমিল্লা)
প্রকাশ : ০২ জুলাই ২০২৫, ১৮: ২৫

কুমিল্লার তিতাস উপজেলার ভেতরে পার্শ্ববর্তী উপজেলা মুরাদনগরের পুনিয়ারটন নামে একটি গ্রামের ৭০টি খানায় প্রায় ৭০০ মানুষ বসবাস করেন। এ যেন আরেক ছিটমহল! গ্রামটি মুরাদনগর উপজেলার জাহাপুর ইউনিয়নে পড়লেও এই গ্রামের তিন পাশে রয়েছে তিতাস উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম এবং একপাশে রয়েছে গোমতী নদী। গ্রামটিতে লাগেনি কোনো উন্নয়নের ছোঁয়া, নেই একটিও সরকারি ও বেসরকারি বিদ্যালয় এবং নেই চলাচলের উপযোগী কোনো পাকা রাস্তা, স্বাস্থ্যসেবা, সরকারি সুবিধা ও নিরাপদ যাতায়াত। সবকিছুরই অভাব এই গ্রামে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, চারপাশে উন্নয়নের জোয়ার শুরু হলেও এই গ্রামের ভাগ্য বদলায়নি বছরের পর বছর। এ গ্রামের মানুষ এখনো পায়নি আধুনিকতার ছোঁয়া। সরকারিভাবে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না থাকায় শিক্ষার অভাবে এখানকার বহু শিশু পড়াশোনা থেকে ছিটকে পড়ছে।

বিজ্ঞাপন

সরেজমিনে পুনিয়ারটন গ্রামে ঘুরে দেখা যায়, গ্রামটির দক্ষিণ পাশ দিয়ে গোমতী নদী প্রবাহিত হয়েছে এবং উত্তর দিকে তিতাস উপজেলার কাউরিয়ারচর বিল, পূর্ব দিকে কলাকান্দি ইউনিয়নের দক্ষিণ মানিকনগর গ্রাম ও পশ্চিমে ভিটিকান্দি ইউনিয়নের ঘোষকান্দি গ্রাম। এ যেন তিতাসের বুকে এক খণ্ড মুরাদনগর।

এই গ্রাম থেকে বের হয়ে নিজ উপজেলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াতের একমাত্র প্রধান রাস্তা হলো গোমতী নদীর বেড়িবাঁধ, সে রাস্তাটিতেও দেখা গেছে বেহাল দশা। গ্রাম থেকে পাকা রাস্তায় যেতে দুই কিলোমিটার রাস্তার বেশিরভাগ অংশ ভাঙাচোরা ও কাঁচা এবং কিছু অংশে রয়েছে ইট বিছানো। এই গ্রামের মানুষকে বাজার করতে এবং শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা গ্রহণ করতে দুই কিলোমিটারেরও বেশি পথ পাড়ি দিয়ে যেতে হয় জাহাপুর গ্রামে। আর চিকিৎসা যেন স্বপ্নের মতো।

এই গ্রামে একজন কমপাউন্ডারও নেই। ছোট-বড় অসুখেও সবাইকে যেতে হয় মুরাদনগর সদর হাসপাতাল বা তিতাস উপজেলার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, যার দূরত্ব প্রায় ১২-১৫ কিলোমিটার। নেই তেমন কোনো সরকারি সুযোগ-সুবিধা। এ ছাড়া গ্রামের ভেতরে যে মূল রাস্তাটি রয়েছে, সেটিও কাঁচা এবং গ্রামবাসীর নিজেদের টাকায় নির্মাণ করা। একটু বৃষ্টি হলেই চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। গ্রামের একমাত্র মসজিদটি গ্রামবাসী নিজেদের টাকায় স্থাপন করা।

এই গ্রামের শামসুল হক, খলিল, ডালিম ও কলেজপড়ুয়া রুবেল মিয়া জানান, গ্রামটির বয়স ১০০ বছরের বেশি হলেও সীমানা ও নদীপথের কারণে আমরা তিতাসের মাঝে পড়ে গেছি। এখান থেকে আমাদের ইউনিয়ন ও উপজেলায় যেতে হলে তিতাসের ওপর দিয়েই যেতে হয়। কারণ আমাদের গ্রামের তিন পাশেই রয়েছে তিতাস উপজেলা। আমাদের অবস্থা ছিটমহলের মানুষের মতো। এজন্যই এই গ্রামের মানুষ শিক্ষা, চিকিৎসা, রাস্তাঘাট ও সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত।

তারা আরো জানান, ‘আমাদের গ্রামে একটা সরকারি স্কুল না থাকায় ছোট ছোট ছেলেমেয়েগুলো পড়াশোনা ছেড়ে দিচ্ছে। যাদের সামর্থ্য আছে, তারা দূরের স্কুলে যায়। বাকিরা গরু-ছাগল চরিয়ে দিন কাটায়। আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি, কিন্তু রাস্তা পাইনি, স্কুল পাইনি। এই কষ্ট কত দিন চলবে বুঝি না।’

স্থানীয় ইউপি সদস্য জহিরুল হক জানান, ‘পুনিয়ারটনের সমস্যা সম্পর্কে আমরা অবগত। স্কুল ও রাস্তাঘাট উন্নয়নের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। শিগগিরই এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে আশা করছি।’

এ বিষয়ে মুরাদনগর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো: আবদুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পূর্বে এই গ্রাম থেকে জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে কোন লিখিত আবেদন করছে কি না এটা আমার জানা নেই। তবে এখন স্থানীয়দের চাহিদামতে লিখিত আবেদন দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিষয়:

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত