চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার রায়শ্রী দক্ষিণ ইউনিয়নের বেরনাইয়া এলাকায় ২০২১-২২ অর্থবছরে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দে কালভার্ট নির্মাণের প্রকল্প কাগজে-কলমে শেষ হয়েছে বহু আগেই। টেন্ডার প্রক্রিয়াও দেখানো হয়েছে, বরাদ্দের টাকাও তোলা হয়েছে। কিন্তু মাঠে গিয়ে দেখা গেলো কালভার্টটির অস্তিত্বই নেই! স্থানীয়দের অভিযোগ, কাজ না করেই পুরো টাকা আত্মসাৎ করেছেন বর্তমান চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডা. আ. রাজ্জাক ।
সরেজমিন দেখা যায়, ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের বেরনাইয়া হাজী বাড়ির সামনে কালভার্ট নির্মাণ’ প্রকল্পটি ইউনিয়ন পরিষদের সম্পদ রেজিস্টারে (পরিচিতি নং- ০১২০২২৩১৬) অন্তর্ভুক্ত। এডিপি’র (বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্প) অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কথা থাকলেও বাস্তবে তা হয়নি।
বেরনাইয়া কামালের বাড়ির সামনে কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পের বিষয়ে হাজী বাড়ির বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ছিদ্দিকুর রহমানের পুত্র মো. হাবিবুর রহমান কামাল জানান— “তখনকার ইউনিয়ন চেয়ারম্যান হাজি আবু হানিফের মেয়াদকালে আমাদের বাড়ির সম্মুখে একটি কালভার্ট নির্মাণের জন্য বহুবার অনুরোধ করার পর ২০২১-২০২২ অর্থবছরে সেটি অনুমোদন হয়। চেয়ারম্যান আবু হানিফের মেয়াদ শেষ হওয়ার সময়কালে এ প্রকল্পটি দেয়া হয়।
পরবর্তীতে নতুন নির্বাচিত চেয়ারম্যান ডা. আবদুর রাজ্জাক আমাদের বাড়িকে রাজাকারের বাড়ি আখ্যায়িত করে কালভার্টটি নির্মাণ করেননি। আমি স্থানীয় ইউপি সদস্য, সাবেক জেলা পরিষদ সদস্য ও স্থানীয় অনেক নেতাকর্মীদের কাছে গিয়েছি। তাদের মাধ্যমে চেয়ারম্যান আবদুর রাজ্জাককে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি রাজাকারের বাড়ির সামনে কালভার্ট নির্মাণ করবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন।
আমার বাবা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, অথচ একজন মুক্তিযোদ্ধার বাড়িকে তিনি রাজাকারের বাড়ি বলে অপমান করেছেন। আমরা জানতে পারি তিনি এখানে কালভার্ট নির্মাণ না করেই প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ করেছেন। আমরা চেয়ারম্যান কর্তৃক অর্থ আত্মসাতের কঠোর শাস্তির দাবি করছি।
স্থানীয় বাসিন্দা সফিকুল ইসলাম জানান— “আমরা শুনেছি বেরনাইয়া হাজি বাড়ির সামনে একটি কালভার্ট অনুমোদন হয়েছে। পরে কেন, কি কারণে কালভার্টটি করা হয়নি তা বলতে পারবো না। জানতে পেরেছি কাগজপত্রে প্রকল্প আছে কিন্তু কাজ না করেই টাকা উঠিয়ে নেয়া হয়েছে।”
হাজি বাড়ির বাসিন্দা নাছিমা আক্তার জানান— “চেয়ারম্যান আবু হানিফ থাকতে কালভার্টের অনুমোদন হয়েছে কিন্তু পরবর্তী চেয়ারম্যান আ. রাজ্জাক দায়িত্বে আসার পর আর কাজটি করা হয়নি। কি কারণে আজও কাজটি হয়নি আমরা বলতে পারছি না। আমাদের চলাচলের জন্য কালভার্টটি প্রয়োজন ছিল।”
বেরনাইয়া এলাকার সোহাগ, মিজানসহ একাধিক বাসিন্দা জানান— “প্রকল্প দেয়া হলেও চেয়ারম্যান কাজটি করেনি। পরে জানতে পারি কাজ না করেই বিল উত্তোলন করে চেয়ারম্যান অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। সরকারি বরাদ্দের টাকা আত্মসাতের কারণে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেয়া দরকার।”
ইউপি সদস্য আবুল বাসার জানান— “আমি প্রথমবার ইউপি সদস্য হয়েছি, তাই অনেক বিষয়ে আমার জানা নেই। এ বিষয়টি সম্পর্কে চেয়ারম্যান আ. রাজ্জাক ভালো বলতে পারবেন।”
সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আবু হানিফ জানান— “আমার দায়িত্বকালীন সময়ের শেষ দিকে এসে কালভার্টটি অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এটি জনগুরুত্বপূর্ণ ছিল এবং ওই এলাকার মানুষদের দীর্ঘদিন আশ্বাস দেয়ার কারণে আমি প্রকল্প অনুমোদন করে দিয়েছি। পরবর্তী সময়ে নতুন চেয়ারম্যান আসার পর শুনেছি কাজ করেনি। কেন কাজটি হয়নি চেয়ারম্যান সাহেব ভালো জানেন।”
উপজেলা প্রকৌশলী সৌরভ দাস জানান— “আমি এ উপজেলায় অল্প কিছুদিন হয়েছে যোগদান করেছি। তারপরও আপনাদের তথ্য মতে ধারণা করে বলছি, এটি আমাদের আওতাধীন নয়। সম্ভবত এটি ইউনিয়ন পরিষদের আওতাধীন, যা স্থানীয় চেয়ারম্যানের মাধ্যমে টেন্ডার প্রক্রিয়ায় হয়ে থাকে। এ বিষয়ে ওই ইউনিয়ন পরিষদ বা চেয়ারম্যান বিস্তারিত তথ্য দিতে পারবেন।”
রায়শ্রী দক্ষিণ ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আবদুর রাজ্জাকের সাথে আলাপকালে তিনি জানান— “আমি নির্বাচিত হওয়ার পর শুনেছি সেখানে এডিপি’র টেন্ডার প্রক্রিয়ায় একটি কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্প রয়েছে। পরবর্তীতে সেখান থেকে প্রকল্পটি বাতিল করে উপজেলায় অবগত করে ইউনিয়নের অন্য কোনো ওয়ার্ডে হস্তান্তর করেছি বলে ধারণা করছি। যা আমাদের রেজুলেশনে থাকতে পারে। রেজুলেশন কিংবা কোন ওয়ার্ডে কাজটি করা হয়েছে দেখাতে বললে তিনি, সেটি অনেক আগে হয়েছে বলে দেখাতে পারেননি। তিনি জানান, হয়তো কোথাও ভুল হতে পারে, যদি তিনি দায়িত্বে থাকেন সেখানে আরো বেশি বাজেট দিয়ে হলেও কালভার্টটি করে দেবেন।

