নাগরদোলার আসন ভেঙে আহত তিন শিশু, দু'জনের অবস্থা গুরুতর

প্রতিনিধি, শরীয়তপুর
প্রকাশ : ২৯ আগস্ট ২০২৫, ২১: ২৬

সরকারি ছুটির দিনে শরীয়তপুর শহরের মানুষ পরিবার-পরিজন নিয়ে হাসি-খুশিতে মুখরিত ছিল। রঙিন আলো, গান, শিশুদের কোলাহল, সব মিলিয়ে এক উৎসবমুখর পরিবেশ। কিন্তু এক বিকট শব্দে মুহূর্তের মধ্যেই আনন্দ পরিণত হলো আতঙ্কে।

বিজ্ঞাপন

শুক্রবার (২৯ আগস্ট) বিকেলে জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রিত পার্কে ঘটে ওই দুর্ঘটনা।

পার্কের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাইড ‘নাগরদোলা’। ঘূর্ণায়মান সেই বিশাল চাকার একটি আসন হঠাৎ ছিঁড়ে নিচে পড়ে যায়। মুহূর্তেই আনন্দ থেমে যায়, স্তব্ধ হয়ে যায় পুরো পার্ক। সবার সামনে রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়ে তিন শিশু-কিশোর।

আহতদের মধ্যে ১১ বছরের আব্দুল্লাহ, ১২ বছরের সিজান ও ১৫ বছরের মিরাজ হাওলাদার। উপস্থিত লোকজন দৌড়ে গিয়ে তাদের উদ্ধার করে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু অবস্থার অবনতি হলে আব্দুল্লাহ ও সিজানকে ঢাকায় পাঠানো হয়।

হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে মিরাজ জানায় তার ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা। মামাবাড়িতে বেড়াতে এসে মামার সঙ্গে নাগরদোলায় উঠেছিল সে। শুরুতে সবকিছু ঠিকই ছিল। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘটে যায় অঘটন। মিরাজ বলে, হঠাৎ শব্দ হলো, তারপরই আমাদের আসন নিচে পড়ে যায়। আমি অজ্ঞান হয়ে যাই। জ্ঞান ফেরার পর দেখি হাসপাতালে।

প্রত্যক্ষদর্শী রাকিব সিকদার চোখের সামনে সেই দৃশ্য দেখেছেন। তিনি বলেন, চাকা ঘুরছিল ঠিকঠাক। হঠাৎ দেখি আসন খুলে সজোরে মাটিতে পড়ল। চিৎকার শুনে সবাই ছুটে যায়। দৃশ্যটা ছিল রোমহর্ষক।

শিশুদের স্বজনদের চোখে এখনো আতঙ্কের ছাপ। আহতদের এক স্বজন মোসাদ্দেকের কণ্ঠে ক্ষোভ, সরকারি শিশু পার্কে যদি এভাবে রাইড ভেঙে পড়ে যায়, তাহলে নিরাপত্তা কোথায়? আমরা চাই এর সঠিক তদন্ত হোক।

এদিকে সদর হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা লিমিয়া সাদিনা বলেন, ‘পার্কের নাগরদোলা খুলে পড়ে গিয়ে তিন শিশুকে গুরুতর আহত অবস্থায় নিয়ে আসা হয়েছিল। তাদের মধ্যে দু’জনের অবস্থা খারাপ হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদের ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।’

ঘটনার পর জেলা প্রশাসক তাহসিনা বেগম জানিয়েছেন, আমরা আহতদের অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় পাঠিয়েছি। এটি যান্ত্রিক ত্রুটি নাকি অন্য কোনো কারণে ঘটেছে, তা খতিয়ে দেখা হবে।

শরীয়তপুর পার্কে প্রতিদিন ভিড় করে শত শত শিশু-কিশোর। কিন্তু শুক্রবারের দুর্ঘটনা অভিভাবকদের মনে বড়ো প্রশ্ন তুলে দিয়েছে, ‘সরকারি পার্কেই যদি শিশুরা নিরাপদ না থাকে, তবে আর কোথায়?’

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত