ময়মনসিংহে ‘আওয়ামী দুর্বৃত্তদের’ আগুন

পুড়ে অঙ্গার পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী জুলহাস

আব্দুল কাইয়ুম, ময়মনসিংহ
প্রকাশ : ১২ নভেম্বর ২০২৫, ০৯: ১১
জুলহাস মিয়ার পরিবারের আহাজারি, ইনসেটে জুলহাস। ছবি: আমার দেশ

‘আমার পুতেরে (ছেলেরে) কেন পুড়াইয়া মারল, কী দোষ ছিল তার? আমার পুতেরে তোমরা আইন্যা দেও?’ এমন বুকফাটা আর্তচিৎকারে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া বাসচালক জুলহাস মিয়ার মা সাজেদা বেগম। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ছেলেকে হারিয়ে আর্তনাদ করে তিনি বলেন, জুলহাস তাকে মানুষের বাড়িতে আর কাজ করতে নিষেধ করেছে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে তার গ্রামের বাড়ি কৈয়ারচালায় গেলে শোকের মাতম করতে দেখা যায় তাকে। তার বিলাপে ভারী হয়ে ওঠে চারপাশ।

ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় আলম এশিয়া পরিবহনের একটি বাসে দেওয়া আগুনে পুড়ে মারা গেছেন চালক জুলহাস মিয়া (৩৫)। গত সোমবার গভীর রাতে কার্যক্রম নিষিদ্ধ সংগঠন আওয়ামী লীগের দুর্বৃত্তদের ছোড়া আগুনে কেড়ে নিল তার প্রাণ।

বিজ্ঞাপন

জানা যায়, পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ছিলেন জুলহাস। মায়ের কষ্ট লাঘবের জন্য মানুষের বাড়িতে কাজ করতে নিষেধ করেছিলেন। ঋণের টাকায় বাড়িতে তুলেছিলেন একটি ঘর । স্বপ্ন ছিল একটু শান্তিতে সংসার চালানোর। কিন্তু সেই ঘর এখন নিঃস্ব। ছেলে নেই, হাসি নেই, আছে শুধু কান্না।

চোখের পানি মুছতে মুছতে সাজেদা বেগম বলেন, তিন লাখ টেহার (টাকার) ঋণ ছিল ওর। সাতদিন পরপর দশ হাজার টাকা কিস্তি দিতে হইতো। আমি মাইনষের (মানুষের) বাড়িতে কাম (কাজ) করতাম। জুলহাস কইতো (বলতো) মা, তুমি আর মাইনষের বাড়িতে কামে যাইও না, আমিই কষ্ট করে সংসার চালামু।

একটু থেমে আবার কেঁদে ওঠেন তিনি, গাড়িটারে নিজের সন্তানের মতোই ভালোবাসত। এক সপ্তাহ পর সুযোগ পাইলে সকালে বাড়ি আইতো (আসতো), দুপুরে আবার চইল্যা (চলে) যাইতো। ফজরের নামাজের সময় শুনলাম, আমার পুত আগুনে পুইড়া ছাই হইয়া গেছে… আল্লাহ, আমি এখন কারে বাবা কইয়াম (বলব)?

জুলহাসের স্ত্রী জাকিয়া আক্তার। এক বছর আগে বিয়ে করেছিলেন। কিছুদিন ধরে বাবার বাড়িতেই থাকতেন। স্বামীর মৃত্যুর খবর শুনে ছুটে আসেন শ্বশুরবাড়িতে। ভারী কণ্ঠে তিনি বলেন, এক বছর হইলো আমরা সংসার শুরু করছি। এখন আমি কারে নিয়া বাঁচুম?

কৈয়ারচালার বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, আগুন সন্ত্রাসীরা যা করছে, তাতে গ্রামের মানুষ ক্ষোভে ফুঁসছে। জুলহাসের মৃত্যু যে রাজনৈতিক প্রতিহিংসারই ফল, তা সবারই জানা।

ফুলবাড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রোকনুজ্জামান জানান, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা আলম এশিয়া পরিবহনের বাসটি গত সোমবার রাত পৌনে তিনটার দিকে ফুলবাড়িয়ায় পৌঁছে। তেল নেওয়ার জন্য একটি পেট্রোল পাম্পের সামনে থামানো হয়। যাত্রীরা সবাই নেমে গেলেও চালক জুলহাস মিয়া বাসের ভেতরে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। তখনই তিনজন দুর্বৃত্ত এসে হঠাৎ বাসে আগুন ধরিয়ে পালায়। মুহূর্তেই আগুন পুরো বাসে ছড়িয়ে পড়ে, বের হওয়ার সুযোগ পাননি তিনি।

ওসি আরো জানান, ঘটনাটি পরিকল্পিত অগ্নিসংযোগ বলে মনে হচ্ছে। দায়ীদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।

ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার কাজী আখতার উল আলম জানান, ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত চলছে। অগ্নিসংযোগে জড়িতদের গ্রেপ্তারে পুলিশ সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত