কাদিরদী বাজারে ভয়াবহ আগুনে ১২ দোকান ভস্মীভূত

উপজেলা প্রতিনিধি, বোয়ালমারী (ফরিদপুর)
প্রকাশ : ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ১৪: ০৫
আপডেট : ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ১৪: ৫৫
পুড়ে যাওয়া মার্কেট

ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার কাদিরদী বাজারে ভয়াবহ আগুনে ১২টি দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। শনিবার (১৮ অক্টোবর) দিবাগত রাত সাড়ে ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

বিজ্ঞাপন

স্থানীয় সূত্র ও ফায়ার সার্ভিসের তথ্যমতে, রাত সাড়ে ১০টার দিকে কাদিরদী বাজারের মাছ বাজার সংলগ্ন আজিজ মোহাম্মদ মোল্যার মার্কেটের “নাসির টেইলার্স” থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে— বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকেই আগুনের উৎপত্তি হয়। মুহূর্তের মধ্যে আগুন ছড়িয়ে পড়ে পাশের বাচ্চু মোল্যা ও আজিজ মোহাম্মদের মার্কেটসহ চারটি মার্কেটের দোকানে। এতে মনোহরি, ফার্মেসি, টেইলার্স, বীজ ভান্ডার, জুতার দোকান, রেস্টুরেন্ট, মুদি দোকান ও কাঁচামালের-সহ প্রায় ১২টি দোকান সম্পূর্ণ পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

খবর পেয়ে এলাকাবাসী, মধুখালী ও বোয়ালমারী ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা প্রায় দেড় ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। তবে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ— আগুন লাগার প্রায় ৪০ মিনিট পর প্রথমে মধুখালী ফায়ার সার্ভিস এবং কিছুক্ষণ পর বোয়ালমারী ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। এতে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং সবকিছু ভস্মে পরিণত হয়। প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী প্রায় দুই থেকে আড়াই কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে।

পুড়ে যাওয়া দোকান মালিক আজিজ মোহাম্মদ বলেন, “রাতে দোকান বন্ধ করে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। হঠাৎ খবর আসে দোকানে আগুন লেগেছে। দৌড়ে গিয়ে দেখি আমার চারটি দোকানেই আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। কিছুই আর বাঁচাতে পারিনি। সব শেষ হয়ে গেলো।”

টেইলার্স মালিক সেলিম দর্জি জানান, “নাসিরের দোকান থেকে আগুনের ফুলকি বের হতে দেখি। সবাইকে চিৎকার করে ডাকি। তালা ভেঙে ঢুকে দেখি আগুন মুহূর্তেই পুরো মার্কেটে ছড়িয়ে পড়েছে।”

নাসির কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমি প্রতিদিনের মতো কাজ শেষ করে কারেন্টের লাইন বন্ধ করে বাড়ি যাই। কিছুক্ষণ পর শুনি আমার দোকানে আগুন লেগেছে। দোকানের সামনে এসে আমি বেহুঁশ হয়ে পড়ি। আমার এই দোকানের আয়ে সংসার চলতো। এখন আমি একেবারে নিঃস্ব হয়ে গেছি।”

ফার্মেসির মালিক এনায়েত কবির বিপুল বলেন, “আমার দোকানের ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকার ওষুধ পুড়ে গেছে। একটা ট্যাবলেটও বাঁচাতে পারিনি।”

কাঁচামাল ব্যবসায়ী ফরহাদ মোল্যা কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, “আমার দোকানই ছিল একমাত্র ভরসা। দোকান না পুড়ে মনে হচ্ছে আমার ভাগ্যটাই পুড়ে গেছে।”

হোটেল মালিক উজ্জ্বল বলেন, “হোটেলসহ আমার মোটরসাইকেলটাও আগুনে ছাই হয়ে গেছে।”

স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম জানান, “চিৎকার শুনে সবাই ছুটে যাই, কিন্তু আগুনের তাপে কাছে যাওয়া যাচ্ছিল না। পানি ঢেলে আগুন ঠেকানোর চেষ্টা করেছি, তবু আগুন থামানো যায়নি।”

বোয়ালমারী ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা খালেক শেখ বলেন, “খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগেই মধুখালী ফায়ার সার্ভিস আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। স্থানীয়দের সহায়তায় প্রায় দেড়ঘণ্টা চেষ্টার পর আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়।”

মধুখালী ফায়ার সার্ভিসের ইনচার্জ রাশেদুল আলম বলেন, “আগুনে অন্তত ১২টি দোকান সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকেই আগুনের সূত্রপাত।”

এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা সরকারের সহযোগিতা ও পুনর্বাসনের আকুতি জানিয়েছেন।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত