সম্ভাব্য প্রার্থীদের শোডাউন, নানা প্রতিশ্রুতি

ওয়াসিম সোহাগ, তাড়াইল (কিশোরগঞ্জ)
প্রকাশ : ১৬ অক্টোবর ২০২৫, ১৫: ০৬

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে কিশোরগঞ্জ-৩ (করিমগঞ্জ-তাড়াইল) আসনে সব দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীর প্রচার তুঙ্গে। মাঠে সম্ভাব্য প্রার্থীদের শোডাউন, চা-দোকান, হাটবাজারে গণসংযোগে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন তারা। দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। চলছে লিফলেট বিতরণ। ব্যানার ও পোস্টার সাঁটানো হয়েছে আসনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে। এ পর্যন্ত কেবল জামায়াতের প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া অন্য কোনো দল এখনো প্রার্থী ঘোষণা করতে পারেনি। ফলে মনোনয়নের আশায় মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন প্রতিটি দলের একাধিক নেতা।

বিজ্ঞাপন

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও প্রচার, অলোচনা-সমালোচনার অন্ত নেই। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিগত দুর্গাপূজায় রাজনৈতিক দলের তৎপরতা দেখে সাধারণ মানুষকে বলতে শোনা যায়Ñদেশে নির্বাচনি ট্রেন চলতে শুরু করেছে। আগামী নির্বাচনে বিএনপি ঘরানার ভোটার ও সাধারণ মানুষের প্রত্যাশার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ড. এম ওসমান ফারুক।

নেই জাতীয় পার্টির কোনো তৎপরতা

আসনটিতে জাতীয় পার্টির (জাপা) সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন সাবেক মহাসচিব অ্যাডভোকেট মুজিবুল হক চুন্নু। কিন্তু তার নির্বাচনি কোনো তৎপরতা চোখে পড়েনি। স্থানীয় পর্যায়ে অনেকেই মনে করছেন, একটি সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হলে তিনি বিএনপি প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বী হবেন। তবে গণঅধিকার পরিষদ, এনসিপি ও বিএনপির কিছু নেতাকর্মী বলছেন, ফ্যাসিবাদীদের দোসর হওয়ায় মুজিবুল হক চুন্নুকে নির্বাচনি মাঠে নামতে দেবেন না তারা। তাকে প্রতিহত করা হবে। এখানে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের কাছে চুন্নু যেন গলার কাঁটা।

ইসলামি ও ছোট দলগুলোর প্রস্তুতি

জামায়াতে ইসলামী, খেলাফত মজলিস, ইসলামী আন্দোলন ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস প্রার্থীরাও নানাভাবে নির্বাচনি প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ইসলামি দলগুলোর মধ্যে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রার্থী দেওয়ার বিষয়েও আলোচনার খবর পাওয়া গেছে। তবে এ আলোচনা ফলপ্রসূ হওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সমর্থকরা। এছাড়াও গণঅধিকার পরিষদ ও এনসিপির কার্যক্রমও থেমে নেই। দুটি দলই বঞ্চিত হওয়া বিদ্রোহী জনপ্রিয় নেতা খুঁজছে।

মাঠে সক্রিয় বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীরা

সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ড. এম ওসমান ফারুকের অনুপস্থিতিতে ধানের শীষের মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে কয়েকজন নেতা ইতোমধ্যেই মাঠে সক্রিয় হয়েছেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন জাহাঙ্গীর আলম মোল্লা, জালাল মোহাম্মদ গউস, সাইফুল ইসলাম (ভিপি সুমন) ও জিএম মজিবুর রহমান ভুইয়া সবুজ। তারা বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান ও দলীয় কর্মসূচিতে তাদের অবস্থান তুলে ধরছেন। বিগত দিনে দলের জন্য আন্দোলন-সংগ্রামের ফিরিস্তি তুলে ধরছেন। বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজ করে মানুষের আস্থা অর্জনের চেষ্টা করছেন।

জাহাঙ্গীর আলম মোল্লা ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘ধানের শীষ’ নিয়ে নির্বাচন করে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হয়েছিলেন। তিনি তৃণমূলে সুপরিচিত। স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ রাজনীতির জন্য তার ইতিবাচক ভাবমূর্তি গড়ে উঠেছে। তিনি জানান, মনোনয়ন পেলে এবং নির্বাচিত হলে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেওয়া ৩১ দফা বাস্তবায়নে কাজ করে যাবেন।

কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সহসভাপতি জালাল মোহাম্মদ গউস ২০১৮ সালের নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলেন। কিন্তু জোটগত কারণে আসনটি ছেড়ে দিতে হয়। এবার ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পোস্টার, ব্যানার-ফেস্টুন দিয়ে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।

গুরুদয়াল সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি সাইফুল ইসলাম (ভিপি সুমন) ২০১৮ সালের নির্বাচনে আলোচিত প্রার্থী ছিলেন। করিমগঞ্জ উপজেলার সাবেক এই চেয়ারম্যান যুবসমাজে তুমুল জনপ্রিয়। তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক পেলে এবং নির্বাচিত হলে মাদক নির্মূল, দুর্নীতি দমন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে কাজ করবেন।

যুবদলের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা জিএম মজিবুর রহমান ভূঁইয়া সবুজ মাঠ পর্যায়ে সক্রিয়। দলীয় কর্মীদের মধ্যে পরিচিত মুখ। তাড়াইল উপজেলায় বিএনপির একমাত্র মনোনয়নপ্রত্যাশী তিনি। নির্বাচিত হলে তিনি দারিদ্র্য বিমোচন, তথ্য-প্রযুক্তির উন্নয়ন ও সাধারণ মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাবেন।

ইসলামি ও অন্যান্য দলের প্রার্থীও প্রস্তুত

এ আসনে জামায়াত মনোনীত প্রার্থী কর্নেল (অব.) ডা. জেহাদ খান। নির্বাচনি এলাকায় তার লিফলেট-ফেস্টুন দেখা গেলেও গণসংযোগে উল্লেখযোগ্য কোনো সাড়া নেই। দীর্ঘদিন পর পূজা উপলক্ষে নেতাকর্মীদের নিয়ে গণসংযোগ করেছেন। ডা. জেহাদ খান বলেন, নির্বাচিত হলে চিকিৎসা ক্ষেত্র ও আত্মকর্মসংস্থানের ওপর গুরুত্ব দেবেন।

আর ইসলামি আন্দোলনের মনোনীত প্রার্থী হাফেজ মাওলানা আলমগীর হোসেন তালুকদার। তিনি বলেন, ইসলামি অর্থনীতিব্যবস্থা চালু হলে পাঁচ বছর পর জাকাত দেওয়ার জন্য দরিদ্র মানুষ পাওয়া যাবে না। সবাই স্বাবলম্বী হয়ে উঠবে। নির্বাচিত হলে দুর্নীতি ও মাদকমুক্ত সমাজ গঠন করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি। খেলাফত মজলিসের আতাউর রহমান শাহান নির্বাচিত হলে ফ্যাসিবাদবিরোধী অবস্থান, দুর্নীতি দমন ও সামাজিক সম্প্রীতি রক্ষায় কাজ করার অঙ্গীকার করেন।

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের প্রার্থী জুবায়ের আহমাদ। তিনি ‘রিকশা’ প্রতীকে নির্বাচন করার জন্য মনোনীত হয়েছেন। তিনি মরহুম শায়খুল হাদিস আজিজুল হক ও মাওলানা মামুনুল হকের জনপ্রিয়তা কাজে লাগিয়ে ভোটারদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক জেলা সমন্বয়ক ইকরাম হোসেন। তিনি এনসিপির প্রার্থী হতে চান। দলীয় অনুমতি পেলে এ আসনে নির্বাচন করবেন বলে জানান। তিনি জুলাই বিপ্লবকে ধারণ করে দেশের উন্নয়নে কাজ করবেন।

মো. জাকিরুল ইসলাম বাকি গণঅধিকার পরিষদের তাড়াইল উপজেলার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য সচিব। তিনি জানিয়েছেন, দলীয়ভাবে প্রার্থী এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এখন সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন।

জনপ্রত্যাশার কেন্দ্রে ওসমান ফারুক

এলাকাবাসী ও বিশ্লেষকদের মতে, কিশোরগঞ্জ-৩ আসনটিতে দীর্ঘদিন ধরে একক রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ বিরাজমান। ভোটাররা এবার পরিবর্তন চান। সাধারণ মানুষের ধারণা, বিএনপি যদি ড. ওসমান ফারুককে প্রার্থী করে, তাহলে বিজয় সহজ হবে। মানুষ এখন স্লোগান নয়, বাস্তব পরিবর্তন চায়। ড. ফারুক বাস্তববাদী মানুষ। শিক্ষিত, গ্রহণযোগ্য ও অভিজ্ঞ রাজনীতিক। তিনি মনোনয়ন পেলে ভোটাররা তার ওপর আস্থা রাখবেন।

তাড়াইল উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সারোয়ার আলম ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সামীর সাকী বলেন, এ আসনে সহজভাবে বিজয় লাভ করতে চাইলে ড. উসমান ফারুকের কোনো বিকল্প নেই।

গুম-খুনে জাড়িত ১৫ সেনা কর্মকর্তা চাকরিচ্যুত। ট্রাব্যুনালে হাজির। সাবজেলে প্রেরণ

এবার ১ টাকা কেজিতে গরুর মাংস বিতরণের ঘোষণা সেই এমপি প্রার্থীর

অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তাদের বহন করা সেই প্রিজন ভ্যানে কী আছে

অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তাদের নেয়া হয়েছে ক্যান্টনমেন্টের অস্থায়ী কারাগারে

গাজায় স্বাস্থ্য সংকট কয়েক প্রজন্ম থাকবে: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত