কৃষকদল ও যুবদল নেতার বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীর দোকান দখলের অভিযোগ

জেলা প্রতিনিধি, ফরিদপুর
প্রকাশ : ১২ জুন ২০২৫, ১৯: ২৬

কৃষকদল ও যুবদলের দুই নেতা বোয়ালমারীতে আমিন বিশ্বাস নামে এক ব্যবসায়ীর দুটি দোকানঘরে জোরপূর্বক তালা দিয়েছে। অভিযুক্ত উপজেলা কৃষকদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল হক ও দাদপুর ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি সালিমুল হক ওই ব্যবসায়ীকে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন।

আমিন বিশ্বাসের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালামালও লুট করে নেওয়া অভিযুক্তরা বিএনপির অঙ্গ-সংগঠন করলেও তারা আপন ভাই। গত দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে দোকান তালাবদ্ধ করে রাখার প্রতিবাদে গত মঙ্গলবার বিকালে উপজেলার চিতারবাজারে সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধন করেছেন স্থানীয় এলাকাবাসী এবং বাজারের ব্যবসায়ীরা।

বিজ্ঞাপন

জানা গেছে, ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী আমিন বিশ্বাস উপজেলার দাদপুর ইউনিয়নের বাজিতপুর এলাকার বাসিন্দা। তিনি দীর্ঘ ২৩ বছর সৌদি আরবে থেকে গত পাঁচ বছর আগে দেশে আসেন। এরপর স্থানীয় চিতারবাজারে গার্মেন্টস ব্যবসা শুরু করেন। আমিন বিশ্বাস জানান, বিদেশে থাকা অবস্থায় ১৩ বছর আগে তিনি জমিসহ টিনের ঘর কিনেন। পরে তিনি পাকা দোকানঘর তুলে লিখিত চুক্তিপত্র করে ভাড়া দেন অপর এক ব্যবসায়ীকে। নিয়মিত দোকানঘরের ভাড়া নিতেন আমিন বিশ্বাস।

কিন্তু গত পাঁচ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর উপজেলা কৃষকদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল হক ও দাদপুর ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি সালিমুল হক ভাড়াটিয়াদের ভাড়া দিতে নিষেধ করেন এবং তাদের কাছে ভাড়ার টাকা দিতে বলেন। কিন্তু ভাড়াটিয়া ব্যবসায়ী তাদের কথা আমলে না নিয়ে আমিন বিশ্বাসকে দোকানের ভাড়ার টাকা দেন। এতে দুই ভাই ক্ষিপ্ত হয়ে গত ১৭ মে ওই দুটি দোকানে তালা দেয়।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রেজাউল হক ও সালিমুল হক ঢাকায় ব্যবসা করেন। গত ৫ আগস্টের পর এলাকায় ফিরে দলীয় পরিচয়ে প্রভাব বিস্তার শুরু করেন। কেউ প্রতিবাদ করলে বিভিন্ন মামলায় আসামি করার হুমকি দেন তারা।

আমিন বিশ্বাস কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, এলাকার কেউ মামলার ভয়ে তাদের অন্যায়ের প্রতিবাদও করে না। আমি সারা জীবন বিদেশে কষ্ট করে রেমিটেন্স পাঠিয়েছি। আমি কোনো রাজনীতি করি না। আমার জীবনে আমি কোনোদিন কখনো কোনো মিটিং-মিছিলেও যাইনি।

দোকানঘরে তালা দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে চিতারবাজার বণিক সমিতির সভাপতি জামাল উদ্দিন এই প্রতিবেদককে বলেন, সম্প্রতি ওই দুই ভাই ভাড়া দাবি করলে এবং উত্তেজনা দেখা দিলে আমার কাছে তিন মাসের ভাড়া রেখে দিই। পরে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নির্দেশে আমিন বিশ্বাসকে ভাড়া ও চাবি দিয়ে দিই। এরপরই শুনেছি তালা দিয়েছে।

বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. শাকিল মোল্যা বলেন, আমিন বিশ্বাসকে কখনো কোনো দলের সভা-সমাবেশেও দেখিনি। তিনি মূলত নিরীহ প্রকৃতির মানুষ।

অভিযুক্ত রেজাউল হক ও সালিমুল হক দাবি করেন, তারা নিজেদের ঘরে তালা দিয়েছেন। এ সময় সালিমুল হক আমার দেশ প্রতিনিধিকে বলেন, ওই জায়গায় তাদের মালিকানা রয়েছে। অভিযুক্ত দুই ভাইয়ের দাবি, আমিন বিশ্বাস আওয়ামী লীগের লোক। আওয়ামী লীগের ক্ষমতা দেখিয়ে দোকানের জমি দখল করে রেখেছিল। এখন আমরা আমাদের ঘরেই তালা দিয়েছি। তবে, তারা জমির মালিকানার কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। এমনকি দোকান ভাড়া দেওয়ার কোনো চুক্তিপত্র দেখাতে পারেননি।

তাদের দলীয় পরিচয় নিশ্চিত করে উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক মিনহাজুল রহমান লিপন ও কৃষকদলের সভাপতি লুৎফর জানান, তারা বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন এবং অভিযোগ পেলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বোয়ালমারী থানার ওসি মাহামুদুল বলেন, দোকানঘরের বিষয়ে আমিন বিশ্বাস অভিযোগ দিয়েছেন। পরবর্তীকালে স্থানীয়ভাবে মীমাংসা করা হবে বলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত