৮৬৯ কোটির প্রকল্পেও রক্ষা মিলছে না

কেউ সরাচ্ছেন ঘরবাড়ি কেউ হারাচ্ছেন শেষ সম্বল

জেলা প্রতিনিধি, শরীয়তপুর
প্রকাশ : ২৬ জুলাই ২০২৫, ১২: ৪৬
আপডেট : ২৬ জুলাই ২০২৫, ১৩: ৪১

শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলায় স্রোত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভয়াল রূপ নিচ্ছে পদ্মা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৮৬৯ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। যার আওতায় প্রায় ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ ডানতীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণের কাজ চলছে। কিন্তু এ প্রকল্পের এখন পর্যন্ত হয়েছে মাত্র ৩৬ শতাংশ। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সময়মতো কাজ না করায় নদী গর্ভে তলিয়ে যাচ্ছে এলাকা।

বিজ্ঞাপন

এই অবস্থায় আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন জাজিরার নাওডোবা, উকুল উদ্দিন মুন্সি কান্দি ও আশপাশের এলাকাবাসী। কেউ কেউ ঘরবাড়ি আগেভাগে সরিয়ে নিচ্ছেন, কেউ আবার চোখের সামনে হারাচ্ছে শেষ সম্বল।

স্থানীয় সূত্র ও পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, ২০১০-১১ অর্থবছরে পদ্মাসেতু প্রকল্পের আওতায় মাঝিরঘাট থেকে পূর্ব নাওডোবা পর্যন্ত নির্মিত হয়েছিল প্রায় ২ কিলোমিটার কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড রক্ষাবাঁধ, যার ব্যয় ধরা হয়েছিল ১১০ কোটি টাকা। কিন্তু গত বছর থেকেই নাওডোবা এলাকার ওই রক্ষাবাঁধে ভাঙন শুরু হয়। তখন বাঁধের প্রায় ১০০ মিটার অংশ পদ্মায় বিলীন হলে দ্রুত সংস্কার শুরু করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ২ কোটি ৮৭ লাখ টাকায় বালুভর্তি জিওব্যাগ ও সিসি ব্লক ফেলা হয়।

কিন্তু তাতেও মেলেনি স্থায়ী সমাধান। বরং ঈদের পর সাতবার ভাঙনের মুখে পড়ে বাঁধের নতুন অংশ। সর্বশেষ গতকাল রাতে নাওডোবা ইউনিয়নের অন্তত ২৫০ মিটার এবং পদ্মা সেতুর ডানতীর রক্ষা বাঁধ প্রকল্পের আওতায় উকুল উদ্দিন মুন্সি কান্দি এলাকার আরও ১৫০ মিটার ভেঙে পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে। এতে বসতভিটা হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন অসংখ্য মানুষ।

ভুক্তভোগী রোকেয়া বেগম চোখের জল মুছে বলেন, আমার ঘরবাড়ি সব নদীতে ভাইঙা নিয়া গেলো। কিছুই সরাইতে পারি নাই। লোকজন ডাক দেয়ার আগেই সব নদীতে তলাইয়া গেলো। কই যামু এখন?

আসিক নামে স্থানীয় বাসিন্দা ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, চাইছিলাম একটা বেরিবাঁধ, যাতে বাপের কালের জমিজমা লইয়া বাঁচতে পারি। কিন্তু বেরিবাঁধের প্রকল্প শুরু হলেও আমাগো এদিকে একটুও কাজ করে নাই ঠিকাদারের লোকজন। আইজ আমাগো ঘরবাড়ি, জায়গাজমি সব নদীতে তলাইয়া গেলো। আমরা এখন আর কার কাছে কি চামু।

আয়নাল মাদবর নামের আরেক ভুক্তভোগী বলেন, কিছুই বাইর করতে পারি নাই। কিছুই ধরতে পারলাম না। যা আছিলো সব নদীতে লইয়া গেলো। কয়েকদিন আগে ভাঙন দেখা দিলে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানাইছি। তারা আইসা দেইক্ষা গেছে, কিন্তু জিওব্যাগ ফালায় নাই। তারা যদি সেদিন কাজ করতো, তাহলে আমাগো ঘর বাড়ি যাইতো না।

এ ব্যাপারে জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মাদ তারেক হাসান বলেন, পদ্মাসেতু প্রকল্পের কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড বাঁধের ভাঙন ঠেকাতে জিওব্যাগ ডাম্পিং অব্যাহত রয়েছে। আর ডানতীর নদী রক্ষা বাঁধ প্রকল্পের ভাঙন এলাকায় জিওব্যাগ ডাম্পিং করতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বলা হয়েছে। আগামীকালকের মধ্যে কাজ শুরু করার আশ্বাস দিয়েছেন তারা।

তবে স্থানীয়দের প্রশ্ন—যখন ভাঙন চোখের সামনে, তখন আশ্বাসে কি রক্ষা পাবে শেষ আশ্রয়টুকু?

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত