ঝিনাইদহে পলাতক ও ফ্যাসিবাদের দোসর সার ডিলারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে বিসিআইসির সার ডিলারদের তথ্য যাচাই বাছাই করার কাজ শুরু হয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের সাম্প্রতিক নির্দেশে ঝিনাইদহের ছয়টি উপজেলার কৃষি কর্মকর্তারা ডিলারদের বর্তমান তথ্য হালনাগাদ করছেন। এই তথ্য যাচাই বাছাইয়ের ফলে জেলাজুড়ে পলাতক ও ফ্যাসিবাদের দোসর সার ডিলারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট কৃষি কর্মকর্তারা মনে করছেন।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ঝিনাইদহের ছয়টি উপজেলায় বিসিআইসি সার ডিলার রয়েছে ৬৭টি। এরমধ্যে ৫০টির অধিক আওয়ামী লীগের সাবেক দু‘এমপিসহ দলীয় নেতাকর্মীদের নামে।জুলাই বিপ্লবের পরে মামলায় হওয়ায় আট থেকে ১০ জন ডিলার বর্তমানে পলাতক রয়েছেন।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, কোটচাঁদপুরের আওয়ামী লীগ সভাপতি শাহজাহান আলী ৫ আগস্টের পর থেকে পলাতক। তার নামে সারের ডিলার রয়েছে। কালীগঞ্জের প্রগতি ট্রেডার্সের নামে ডিলারশিপ নিয়ন্ত্রণ করেন মাহবুব রহমান মহব্বত। প্রকৃত মালিক সাবেক এমপি আনারের স্ত্রী ইয়াসমিন ফেরদৌস ঢাকায় বসবাস করেন।
তিনি সারের ব্যবসা দেখাশোনা করেন না। ঝিনাইদহ জেলা সার ডিলার সমিতির সভাপতি হাজী জাহাঙ্গীরের স্বজনদের নামে রয়েছে তিনটি লাইসেন্স।
তিনি নিজে ছাড়াও তার স্ত্রী কাজী শিউলী সুলতানা ও ভগ্নিপতি আশরাফুল ইসলাম টিটোর নামে রয়েছে লাইসেন্স। কালীগঞ্জ উপজেলায় নীতিমালা ভঙ্গ করে স্বামী স্ত্রী মিলে একই পরিবারে চারটি সারের ডিলারশিপ রয়েছে বলে অভিযোগ আছে। আওয়ামী লীগ নেতা সোহরাব ও তার ভাই শহিদুলের নামে ডিলারশিপ রয়েছে। অন্যদিকে তাদের দুই স্ত্রী সাবিতা নাসরিন ও পারভিন ইসলামের নামেও রয়েছে ডিলারশিপ লাইসেন্স। ঝিনাইদহের যুবলীগ নেতা শফিকুল ইসলাম শিমুল শৈলকূপার বগুড়া ইউনিয়নের ডিলারশিপ নিয়ন্ত্রণ করেন। তিনিও মামলার আসামি হয়ে পলাতক। শৈলকূপার সাবেক এমপি নায়েব আলী জোয়ারদার পলাতক থাকায় তিনি ডিলারশিপ নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না। ফলে ভরা মৌসুমে সার নয়ছয় হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার সাধুহাটি ইউনিয়নের ডিলার মাহমুদুর রহমান রাসেল থাকেন আমেরিকায়। তার পিতা হরিণাকুন্ডু আওয়ামী লীগের সভাপতি ও একাধিক মামলার আসামি হিসেবে পলাতক। প্রবাসী মাহমুদুর রহমানের ডিলারসীপ নিয়ন্ত্রণ করছেন অন্য একজন। যা সম্পূর্ণ নীতিমালা বহির্ভূত। হরিণাকুন্ডু উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সার ডিলার আফজাল হোসেন মারা যাওয়ার পর তৃতীয় পক্ষ ডিলারশিপ চালাচ্ছেন। পলাতক ও মৃত ডিলারদের অনুপস্থিতিতে সার কেনা-বেচা হলেও সার নিয়ে ষড়যন্ত্রের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টদের সূত্রে ধারণা করা হয়েছে।
এদিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯১-৯৬ সালে জেলায় মাত্র ১৩টি বিসিআইসির সারের ডিলার ছিল। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০০০ সাল পর্যন্ত ৫৪টি ডিলার নিয়োগ করে। এরমধ্যে আবার দলীয় প্রভাব খাটিয়ে আওয়ামী লীগের এমপিরা কালীগঞ্জে দু’টি ও শৈলকূপা উপজেলায় তিনটি ডিলার নিয়োগ দেয়।
প্রাপ্ত তথ্যে অনুযায়ী, ঝিনাইদহ সদর উপজেলায় ১৮ জন ডিলারের মধ্যে ১২টি, কালীগঞ্জে ১৪টি ডিলারের মধ্যে ১৩টি, কোটচাঁদপুরে ৬টির মধ্যে ৪টি, মহেশপুরে ১৩টির মধ্যে ৮টি, শৈলকূপায় ১৫টির মধ্যে ১০টি ও হরিণাকুন্ডু উপজেলায় ১০টির মধ্যে ছয়টি আওয়ামী লীগ নেতা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের নামে বিসিআইসির সার ডিলারশিপ লাইসেন্স রয়েছে।
অপরদিকে ঝিনাইদহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ষষ্টি চন্দ্র রায় জানিয়েছেন, কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে ডিলারদের সুনির্দিষ্ট তথ্য চেয়েছে। আমরা সেই ছক পূরণ করে মন্ত্রণালয়ে পাঠাবো। তিনি আরো জানান, পলাতক বা মামলার আসামি অথবা যারা নিজে সারের ডিলারশিপ নিয়ন্ত্রণ করেন না তাদের তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো ছকে উল্লেখ করা হবে।

