ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বেশ আগেই প্রার্থী ঘোষণা করেছে জামায়াতে ইসলামী। তারা মাঠও চষে বেড়াচ্ছেন। পাশাপাশি ভোটের পরিবেশ পর্যালোচনা করছে দলটি। এর ভিত্তিতে প্রার্থী পরিবর্তনের ঘোষণাও দিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে খুলনা-১ (দাকোপ-বটিয়াঘাটা) আসনে কৃষ্ণ নন্দী নামে সনাতন ধর্মাবলম্বী এক নেতার হাতে দাঁড়িপাল্লা তুলে দিয়ে জামায়াত চমক দেখাতে চাইছে বলে জানা গেছে।
খুলনা-১ আসনটি হিন্দু অধ্যুষিত। এখানে এর আগে বিভিন্ন দলের হয়ে অন্তত ছয়জন সনাতন ধর্মাবলম্বী নেতা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এমনকি জয়ের জন্য নিরাপদ আসন বিবেচনায় দাকোপ ও বটিয়াঘাটা থেকে ১৯৯৬ সালের জুনের
জাতীয় নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী হয়েছিলেন শেখ হাসিনা, জয়ও পেয়েছিলেন। এসব বিষয় মাথায় রেখে ভিন্নধর্মাবলম্বীদের একচেটিয়া সমর্থন পেতে কৌশলী অবস্থান নিচ্ছে জামায়াত। এরই অংশ হিসেবে আসনটিতে পার্শ্ববর্তী ডুমুরিয়া উপজেলা জামায়াতের হিন্দু শাখার সভাপতি কৃষ্ণ নন্দীর নেতৃত্বে ভোটযুদ্ধে নামতে চাইছে দলটি।
বটিয়াঘাটা উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা শেখ মো. আবু ইউসুফকে খুলনা-১ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে দলটি। তিনি নেতাকর্মীদের নিয়ে জোর প্রচারও চালাচ্ছেন। আগামী মাসে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হওয়ার কথা আছে। এমতাবস্থায় প্রার্থী পরিবর্তনের ইঙ্গিতে ভোটের মাঠের পুরো চিত্র পাল্টে যেতে পারে। জামায়াতের ভোট ব্যাংকের সঙ্গে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সমর্থন মিলিয়ে আসলেই চমকে দেওয়ার মতো ফলাফল আসতে পারে বলে নেতাকর্মীরা দাবি করছেন।
কয়েকদিন ধরে জোর গুঞ্জন চলছে, আগামী সংসদ নির্বাচনে দাকোপ-বটিয়াঘাটা থেকে জামায়াতের প্রার্থী হচ্ছেন কৃষ্ণ নন্দী। তিনি পার্শ্ববর্তী উপজেলা ডুমুরিয়ার বাসিন্দা এবং সুপ্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। একই সঙ্গে তিনি ডুমুরিয়া উপজেলা জামায়াতের হিন্দু শাখার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আছেন।
জুলাই বিপ্লবের পর থেকে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সংঘটিত করে জামায়াতের সভা-সমাবেশে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে নজর কাড়ছেন কৃষ্ণ নন্দী। গত ৩১ অক্টোবর ডুমুরিয়া উপজেলা সদরের স্বাধীনতা চত্বরে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত জামায়াতের হিন্দু সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন তিনি, যেখানে প্রধান অতিথি ছিলেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার।
সম্মেলনে বক্তারা জামায়াতের রাজনীতির প্রশংসা করে বলেন, ৫৪ বছরে তারা অনেক শাসন দেখেছেন। হিন্দুরা শুধু বঞ্চনা আর নিষ্পেশণের শিকার হয়েছেন। তারা আর সংখ্যালঘু পরিচয়ে বাঁচতে চান না। এবার বাংলাদেশি পরিচয়ে ভয়হীন পরিবেশে জীবন কাটাতে চান।
জানা গেছে, দাকোপ ও বটিয়াঘাটা উপজেলা হিন্দু অধ্যুষিত জনপদ। স্বাধীনতার পর এখান থেকে বেশিরভাগ সময় হিন্দু ধর্মাবলম্বী প্রার্থীরাই এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। এ অঞ্চলে সক্রিয় বা জামায়াতঘেঁষা কোনো হিন্দু নেতা নেই। তাই পাশের উপজেলা ডুমুরিয়া থেকে এই সম্প্রদায়ের শীর্ষপর্যায়ের নেতা কৃষ্ণ নন্দীকে বিবেচনা করা হয়েছে।
হিন্দু নেতা কৃষ্ণ নন্দী আমার দেশকে বলেন, ‘সংগঠন (জামায়াত) থেকে আমাকে ঢাকায় ডেকেছিল। আমির সাহেব এবং সেক্রেটারি জেনারেল কথা বলেছেন। নির্বাচন নিয়ে বিস্তারিত আলাপ হয়েছে। দল আমাকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিলে আমি নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। এখানে আমার কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই। দলের সিদ্ধান্তই আমার সিদ্ধান্ত।’
জামায়াতের সঙ্গে সম্পৃক্ততা নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘২০০৩ সালে এক হাজার টাকা চাঁদা পরিশোধ করে জামায়াতের হিন্দু শাখার সদস্য হই। দীর্ঘ সময়ে সদস্যদের দুঃখ-কষ্টে পাশে থেকেছি। দেড় বছর আগে ডুমুরিয়ায় দলের হিন্দু শাখার সভাপতির দায়িত্ব পাই।’
খুলনা-১ আসনে জামায়াতের প্রার্থী মাওলানা আবু ইউসুফ বলেন, ‘প্রার্থীর নাম ঘোষণার পর থেকে আমি নির্বাচনি এলাকায় প্রচার চালাচ্ছি। দাঁড়িপাল্লার নমিনি পরিবর্তনের বিষয়ে কেন্দ্র আমাকে এখনো কিছু জানায়নি। সংগঠন অন্য কাউকে প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত নিলে তিনি নির্বাচন করবেন। তবে অন্য কাউকে চূড়ান্ত করা হয়েছে কি না, তা আমি জানি না।’
প্রার্থী পরিবর্তনের জল্পনার বিষয়ে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক সংসদ সদস্য মিয়া গোলাম পরওয়ার আমার দেশকে বলেন, ‘হিন্দু কমিউনিটির রিপ্রেজেন্ট করতে পারে, উপজাতিদের রিপ্রেজেন্ট করতে পারে-এমন অনেকে যোগাযোগ করছেন। খুলনা, কিশোরগঞ্জসহ আরো কয়েকটি জেলা থেকে এমন যোগাযোগ হচ্ছে। খুলনা থেকে অনেকে কৃষ্ণ নন্দীর নাম বলছেন। দলের আমিরসহ আমরা বিষয়টি নিয়ে ভাবছি কিন্তু সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি।’
এদিকে, গত ৩ নভেম্বর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপি প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। এ সময় খুলনার পাঁচটি আসনে ধানের শীষের নমিনি ঘোষণা করা হলেও খুলনা-১ আসন খালি রাখা হয়। তবে দলটির মনোনয়নের দাবিদার তিন নেতা আমির এজাজ খান, জিয়াউর রহমান পাপুল ও পার্থ দেব মণ্ডল বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে প্রচার চালাচ্ছেন।

