বেনাপোল বন্দরে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে ধস

উপজেলা প্রতিনিধি, বেনাপোল (যশোর)
প্রকাশ : ২১ আগস্ট ২০২৫, ১৪: ২৫

দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোল দিয়ে ভারত-বাংলাদেশ আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে ধস নেমেছে । ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আমদানি কমেছে ৬ লাখ ৩১ হাজার ৩৩০ মেট্রিক টন এবং রপ্তানি কমেছে ৭৫ হাজার ২৩২ মেট্রিক টন। এ অবস্থায় বিরূপ প্রভাব পড়েছে বন্দরসংশ্লিষ্ট ব্যবসা, শ্রমিক এবং পরিবহন খাতে।

বিজ্ঞাপন

আগে স্বাভাবিক সময়ে ভারত থেকে প্রতিদিন প্রায় ৫৫০–৬০০ ট্রাক পণ্য আমদানি হতো এবং ২৫০–৩০০ ট্রাক পণ্য রপ্তানি হতো। এখন তা কমে আমদানি ২৫০–৩০০ ট্রাক ও দিনে রপ্তানি ১০০ ট্রাকের নিচে। ফলে স্থবিরতা সৃষ্টি হয়েছে উভয় দেশের বন্দরকেন্দ্রিক গুদাম, পরিবহন, হ্যান্ডলিং শ্রমিক ও ব্যবসায় । তবে এ অবস্থার জন্য বন্দর সংশ্লিষ্টরা রাজনৈতিক অস্থিরতা, পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা ও ট্রাক চলাচলের সীমাবদ্ধতাকে দায়ী করছেন।

বাণিজ্য হারানো ও শ্রমিকদের সমস্যা বেনাপোলের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা জানিয়েছেন, ভারতের পাল্টাপাল্টি নিষেধাজ্ঞা, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং কেন্দ্রীয় নীতিগত সিদ্ধান্তের কারণে বন্দর এলাকার শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা বড় ক্ষতির মুখে পড়েছেন।

ইতোমধ্যে অনেক সিঅ্যান্ডএফ অফিস বন্ধ হয়ে গেছে এবং কর্মচারী ও শ্রমিকরা বাধ্য হয়ে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন। ওপারের পেট্রাপোল বন্দরে একই অবস্থা; ভারতীয় শ্রমিকরা বন্দর এলাকায় মিছিল-মিটিং করছেন এবং স্থলপথে বন্ধ থাকা আমদানি পুনরায় চালুর দাবি জানিয়েছেন।

পরিসংখ্যান

২০২৩-২৪ অর্থবছরে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারত থেকে আমদানির পরিমাণ ছিল ২১ লাখ ৩০ হাজার ২২৮ মেট্রিক টন। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তা কমে হয়েছে ১৪ লাখ ৯৮ হাজার ৮৯৮ মেট্রিক টন। রপ্তানি ক্ষেত্রেও একই ধস; ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৪ লাখ ৫৬ হাজার ৬৭২ মেট্রিক টন পণ্য রপ্তানি হয়েছিল, যা কমে ৩ লাখ ৮১ হাজার ৪৪০ মেট্রিক টন হয়েছে।

গত জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত আমদানি হয়েছে ৫৫ হাজার ৩৯০ ট্রাক পণ্য এবং রপ্তানি হয়েছে ২১ হাজার ৭৩৮ ট্রাক পণ্য। চলতি আগস্ট মাসে ২ থেকে ২০ আগস্টের মধ্যে ৩৯৮৪ ট্রাক পণ্য আমদানি হয়েছে এবং রপ্তানি হয়েছে মাত্র ৭২২ ট্রাক পণ্য।

প্রভাবিত পণ্য ও শিল্প খাত

বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে শিল্প কলকারখানার কাঁচামাল, তৈরি পোশাকের কাঁচামাল, শিশু খাদ্য, টায়ার, মেশিনারিজ, ওষুধের কাঁচামাল, কেমিকেল, ফল, পিঁয়াজ, চাল, ডাল, সুতা,

তুলাসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য। আর রপ্তানি পণ্যের মধ্যে পাট, পাটের তৈরি পণ্য, গার্মেন্টস সামগ্রী, তৈরি পোশাক, কেমিকেল, টিসু, মেলামাইন, মাছ উল্লেখযোগ্য। তবে নিষেধাজ্ঞার কারণে উভয় দিকের বাণিজ্য প্রায় অর্ধেকের নিচে নেমে গেছে।

ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের উদ্বেগ

বেনাপোল বন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি আলহাজ মহসিন মিলন বলেন, “৫ আগস্টের পর রাজনৈতিক পালাবদলের কারণে বাণিজ্য কমে গেছে। সরকারের রাজস্ব আয়ও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দ্রুত নীতিগত সমাধান ছাড়া এ সংকট কাটানো কঠিন।”

ভারতে পেট্রাপোল বন্দরের শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা অরুণাভ পোদ্দার জানান, “আমদানি ও রপ্তানি বন্ধ থাকায় লোড-আনলোডের কাজ বন্ধ, শ্রমিকদের রোজগারে বড় প্রভাব পড়েছে। অনেকেই এখন দৈনিক ১০০ টাকার নিচে আয় করছেন।”

বেনাপোল বন্দরের পরিচালক মো. শামিম হোসেন জানান, বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে বেশ কিছু পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে দু’দেশের সরকার নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এসব পণ্য আমদানি না করায় স্বাভাবিক সময়ের

তুলনায় বাণিজ্য অনেক কমে গেছে। স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন ভারত থেকে প্রায় ৫৫০ ট্রাক পণ্য আমদানি হতো এবং ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাক পণ্য রপ্তানি হতো। বর্তমানে নেমে এসেছে আমদানি ২৫০ ট্রাক ও রপ্তানি ১০০ ট্রাকের নিচে।

বেনাপোল বন্দরের বাণিজ্য স্বাভাবিক করতে হলে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও বাণিজ্যবান্ধব নীতি প্রয়োজন। সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ী, শ্রমিক ও পরিবহন সংস্থাগুলো আশঙ্কা করছেন, নিষেধাজ্ঞা চলতেই থাকলে বন্দর এলাকায় স্থবিরতা আরও গভীর হবে এবং উভয় দেশের ব্যবসায়িক ক্ষতি বাড়বে।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিষয়:

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত