ইলিশ ধরায় সরকারি নিষেধাজ্ঞার কারণে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন বাগেরহাটের মোংলার হাজারো জেলে। ৩ অক্টোবর শুক্রবার রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে এ নিষেধাজ্ঞা থাকবে ২৫ অক্টোবর রাত ১২টা পর্যন্ত। এ সময় ইলিশসহ সব ধরনের মাছ ধরা, পরিবহন, মজুত, ক্রয়-বিক্রয় ও বিনিময় সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে।
উপজেলা মৎস্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, উপজেলায় সরকারি নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ৬ হাজার ৭৯৫ জন। এর মধ্যে ১ হাজার ১৫০ জন জেলের জন্য ২৫ কেজি করে মোট ২৮.৭৫০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
শনিবার সকাল থেকে সরেজমিনে পশুর নদী, জয়মনি ও চিলা বাজার এলাকায় দেখা গেছে, শতভাগ জেলে ও ট্রলার মালিক নিষেধাজ্ঞা মেনে জাল ও ট্রলার তীরে তুলে রেখেছেন। বৈরী আবহাওয়ার কারণে অনেকে আগেই নদী থেকে ফিরে এসে সরঞ্জাম পরিষ্কারে ব্যস্ত রয়েছেন।
জেলে মো. বেলায়েত মাঝি, মো. কারবাল ও ইলিয়াস মাঝি বলেন, ঋণের টাকায় জাল ও ট্রলার বানিয়েছি। প্রতিটি ট্রলারে ৫ থেকে ১০ জন জেলে কাজ করে, যাদের পরিবার আছে। ভরা মৌসুমেও কাঙ্ক্ষিত ইলিশ পাইনি। সম্প্রতি কিছু মাছ পড়ছিল তখনই নিষেধাজ্ঞা এলো। তবুও সরকারের নির্দেশ মেনে জাল-ট্রলার তীরে রেখেছি। নিষেধাজ্ঞা শেষে আবার নদীতে নামব।
স্থানীয় জেলে মো. আজিজুল ও বাদল বলেন, আমরা চাই মা ইলিশ রক্ষা পাক, তাই অভিযানকে সহযোগিতা করি। কিন্তু এই সময়ে আয় বন্ধ হয়ে যায়। প্রতিবছর সরকারের কাছে দাবি জানাই— যেন এই সময়ে এনজিও কিস্তি বন্ধ থাকে। কিন্তু কেউ শুনে না। কিস্তির লোকজন এসে চাপ দেয়, তখন বাধ্য হয়ে অনেকে নদীতে চলে যায়। এবারও দাবি জানাচ্ছি, যেন কিস্তি বন্ধ থাকে এবং দ্রুত বরাদ্দ চাল বিতরণ করা হয়।
মোংলা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. জাহিদুল ইসলাম আমার দেশকে জানান, নিষেধাজ্ঞা সফল করতে উপজেলা পর্যায়ে কমিটির মিটিং হয়েছে। প্রচারণা চলছে এবং অভিযান পরিচালনার জন্য টিম প্রস্তুত রয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া চাল দ্রুত বিতরণ শুরু হবে। তবে কিস্তি বন্ধের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কোনো নির্দেশনা এখনো পাইনি।
প্রসঙ্গত, চলতি অর্থবছরে মোংলায় ইলিশ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ২৫০ মেট্রিক টন। মা ইলিশ সংরক্ষণে এই নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন হলে আগামী মৌসুমে ইলিশ আহরণে ইতিবাচক ফল আসবে বলে আশা মৎস্য বিভাগের।

