জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলায় ধানুয়া কামালপুর হানাদারমুক্ত দিবস আজ। ১৯৭১ সালের ৪ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধের মুখে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কামালপুর দুর্গের পতন হয়।
এ উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দিবসটি যথাযথ মর্যাদায় পালনের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সকাল ৬টায় পতাকা উত্তলন, স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও ১১টায় আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
মুক্তিযোদ্ধাদের সূত্রে জানা যায়, ভারতের মেঘালয় রাজ্যের তুরা জেলার মহেন্দ্রগঞ্জ ও জামালপুর জেলার পাহাড় ঘেঁষা বকশীগঞ্জ উপজেলার ধানুয়া কামালপুরে হানাদার বাহিনী যুদ্ধের শুরু থেকেই শক্তিশালী ঘাঁটি গড়ে তুলেছিল। এখান থেকেই হানাদার বাহিনীর সদস্যরা মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর হামলা চালায়। উত্তর রণাঙ্গনের ১১ নম্বর সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধাদের প্রধান লক্ষ্য ছিল যেকোনো মূল্যে এই ঘাঁটি দখল করা। এই যুদ্ধে কামালপুর রণাঙ্গনে হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের ৮ দফা সম্মুখযুদ্ধ হয়।
৩১ জুলাইয়ের আগে ধানুয়া কামালপুর রণাঙ্গনে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেন জেড ফোর্স। তৎকালীন ৩১ জুলাই সম্মুখযুদ্ধে পাক বাহিনীর গুলিতে ক্যাপ্টেন সালাউদ্দিন মমতাজ বীর উত্তম শাহাদাৎ বরণ করেন। ক্যাপ্টেন সালাউদ্দিন মমতাজ শহীদ হওয়ার পর মুক্তিযোদ্ধারা সেক্টর কমান্ডার মেজর আবু তাহেরের পরিকল্পনা অনুযায়ী ২৪ নভেম্বর হানাদার বাহিনীর ধানুয়া কামালপুর ঘাঁটি অবরোধ করেন। অবরোধের প্রথম দিনই কামালপুর মির্ধাপাড়া মোড়ে সম্মুখযুদ্ধে মর্টার শেলের আঘাতে সেক্টর কমান্ডার মেজর আবু তাহের একটি পা হারান। পরে ভারপ্রাপ্ত সেক্টর কমান্ডারের দায়িত্ব নেন উইং কমান্ডার হামিদুল্লাহ খান বীরপ্রতীক।
১০ দিন যুদ্ধের পর ৪ ডিসেম্বর সকাল ৮টায় সেক্টর কমান্ডারের নির্দেশে মুক্তিযোদ্ধা বশির আহমেদ (বীরপ্রতীক) পাক বাহিনীর ক্যাম্পে সারেন্ডারপত্র নিয়ে যাওয়ার পর সন্ধ্যা ৭টায় ৩১ ব্যালুচ রেজিমেন্টের গ্যারিসন কমান্ডার আহসান মালিকসহ ১৬২জন হানাদার বাহিনীর সদস্য মিত্র বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে।
সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা নওশেদ আলী বলেন, ১৯৭১ সালের ৪ ডিসেম্বর ধানুয়া কামালপুর ১১ নম্বর সেক্টর পাক হানাদার বাহিনী থেকে মুক্ত হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের কলাকৌশল ও সাহসীকতায় পাক হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে শহিদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্বরণে নির্মিত করা হয়েছে শহিদ স্মৃতিসৌধ। প্রতি বছর আমরা যথাযথ মর্যাদায় হানাদার মুক্ত দিবসটি পালন করে আসতেছি। তবে এ শহিদ স্মৃতিসৌধে নিয়মিত পতাকা উত্তলন করা হতো কিন্তু গত দুই বছর যাবত পতাকা উত্তলণ হয় না সেই সাথে শহিদ মুক্তিযোদ্ধাদের নামের ফলক নষ্ট হয়ে শহিদদের নাম মুছে গেছে, তাই প্রশাসনের কাছে নিয়মিত পতাকা উত্তলণ ও মুক্তিযোদ্ধাদের নামের ফলক সংস্কারের দাবি জানাচ্ছি।

