নির্বাচনের আগেই মুখোমুখি দুই পক্ষের ব্যবসায়ীরা

সবুর শাহ লোটাস, বগুড়া
প্রকাশ : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৪: ৩৮
আপডেট : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৪: ৩৮

বগুড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (বিসিসিআই) নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে জেলার ব্যবসায়ী সমাজ। নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার আগেই চেম্বার ভবনে তালা এবং প্রশাসক নিয়োগের ঘটনায় একপক্ষ অপর পক্ষকে ষড়যন্ত্রকারী বলছে। একে অপরকে ফ্যাসিস্ট আখ্যা দিয়ে দোষারোপ করছেন। এরই মধ্যে আওয়ামী সুবিধাভোগীরা বিএনপি নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করায় নানা গুঞ্জন তৈরি হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

জানা যায়, চেম্বার নির্বাচন দুই বছর পরপর হওয়ার কথা থাকলেও বিগত দীর্ঘ সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। সর্বশেষ ২০০৮ সালে চেম্বারে নির্বাচন হয়। এরপর থেকে দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে আওয়ামী লীগ নেতা মাসুদুর রহমান মিলন ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তবে সম্প্রতি রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি পদত্যাগ করলে জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি সাইরুল ইসলাম ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব নেন।

পরবর্তী সময়ে চলতি বছরের ২১ জুন গঠিত হয় তিন সদস্যবিশিষ্ট নির্বাচন পরিচালনা কমিটি, যার আহ্বায়ক ছিলেন বগুড়া প্রেস ক্লাব সভাপতি রেজাউল হাসান রানু। কিন্তু এর পরদিনই ছাত্র-জনতা পরিচয়ে শতাধিক ব্যক্তি চেম্বার ভবনে প্রবেশ করে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বের করে দিয়ে তালা লাগিয়ে দেন। ভবন তালাবদ্ধ থাকার ১৮ দিনের মাথায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মেজবাউল করিমকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয়। একই সঙ্গে তাকে ১২০ কার্যদিবসের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের নির্দেশনা দেওয়া হয়। এ সময় ভবন দখল এবং নির্বাচনি কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়ার নেপথ্যে থাকা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন চেম্বারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ রানা।

এরই ধারাবাহিকতায় গত ৩০ আগস্ট, বগুড়ার হোটেল মমইন কনভেনশন সেন্টারে ‘প্রকৃত ব্যবসায়ী কর্তৃক চেম্বার পরিচালনা’শীর্ষক এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন রেজাউল হাসান রানু। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা, কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য আলী আজগর তালুকদার হেনা, এবং জেলার বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

এই সভা ঘিরে শুরু হয়েছে নতুন গুঞ্জন। আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দাবি করছেন, বিএনপি ঘনিষ্ঠ একটি পক্ষ চেম্বারের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করছে। অপরদিকে বিএনপি ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগপন্থিরা চেম্বারকে একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ করেছে এবং এখন গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচন আয়োজনে বাধা সৃষ্টি করছে।

বর্তমানে চেম্বারের ৭০০-এর বেশি সদস্যের মধ্যে দুটি গ্রুপ স্পষ্ট। একাধিক সদস্য অভিযোগ করছেন, নির্বাচনের আগেই কিছু পক্ষ রাজনৈতিকভাবে সুবিধা নিতে চায়। তারা বলছেন, আমরা নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ নির্বাচন চাই, কোনো সিলেকশন নয়।

এ প্রসঙ্গে প্রশাসক মেজবাউল করিম আমার দেশকে বলেন, আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যেই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করব। স্বচ্ছতা বজায় রেখে নির্বাচন আয়োজনই আমাদের প্রধান লক্ষ্য। আগামী নভেম্বরে নির্বাচন হতে পারে বলে জানান তিনি। চেম্বার অব কমার্সের নেতৃত্বে নতুন রূপান্তর নিয়ে ব্যবসায়ী সমাজের মধ্যে উত্তেজনা বাড়লেও অধিকাংশ সদস্য অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পক্ষে মত দিয়েছেন।

উল্লেখ্য, একজন করে সভাপতি, সিনিয়র সভাপতি, সহ-সভাপতিসহ ১৬ পরিচালক নিয়ে মোট ১৯ সদস্যবিশিষ্ট বগুড়া চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির কমিটি গঠিত হয়।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত