আমার দেশ জনপ্রিয় বাংলা নিউজ পেপার

যমজ দুই বোনের মেডিকেলে চান্স, আনন্দে ভাসছে রামপুর গ্রাম

উপজেলা প্রতিনিধি, বোচাগঞ্জ (দিনাজপুর)
যমজ দুই বোনের মেডিকেলে চান্স, আনন্দে ভাসছে রামপুর গ্রাম

দিনাজপুর জেলার বোচাগঞ্জ উপজেলার ২নং ইশানিয়া ইউনিয়নের রামপুর গ্রামে এখন আনন্দ আর গর্বের আবহ। একই পরিবারের যমজ দুই বোন একসঙ্গে মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পাওয়ায় পরিবারসহ পুরো গ্রামে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে।

বিজ্ঞাপন

২০২৫–২৬ শিক্ষাবর্ষের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে মাখনুন আক্তার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ এবং তার যমজ বোন মুসফিকা নাজনিন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। মাখনুন আক্তার রোল নম্বর ২০০২০৮০ নিয়ে ৮২ দশমিক ৫ নম্বর এবং মুসফিকা নাজনিন রোল নম্বর ২০০১৮৩৫ নিয়ে ৮০ দশমিক ৫ নম্বর অর্জন করেন। তারা দুজনই একই কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশ নেন।

৩ মার্চ ২০০৭ সালে জন্ম নেওয়া যমজ দুই বোন মাখনুন আক্তার ও মুসফিকা নাজনিন পড়াশোনায় সমান আগ্রহী ছিলেন শৈশবকাল থেকেই। তারা প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন রামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে। পরে সেতাবগঞ্জ সরকারি পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং দিনাজপুর সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় জিপিএ–৫ অর্জন করেন।

যমজ দুই বোন মশিউর রহমান ও নাজমুন নাহারের সন্তান। মশিউর রহমান মুরারিপুর সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে অফিস সহকারী হিসেবে কর্মরত। তিন কন্যাসন্তানের জনক হলেও তিনি কখনো মেয়েসন্তান হওয়াকে সীমাবদ্ধতা হিসেবে দেখেননি।

সাফল্যের অনুভূতি প্রকাশ করে মাখনুন আক্তার বলেন, প্রথমেই আল্লাহ তাআলার শুকরিয়া আদায় করছি। মা–বাবার সহযোগিতা ছাড়া এই সাফল্য সম্ভব হতো না। বড় বোন সবসময় আমাদের পাশে ছিল। ছোটবেলা থেকেই আমার ইচ্ছা ছিল ডাক্তার হওয়ার, আর বাবারও ইচ্ছা ছিল আমি যেন ডাক্তার হয়ে দেশের মানুষের সেবা করতে পারি। ভবিষ্যতে আমি আমাদের গ্রামের মানুষের সেবা করতে চাই।

মুসফিকা নাজনিন বলেন, আমরা দুই বোনই একসঙ্গে মেডিকেলে চান্স পেয়েছি—এতে আমরা খুব আনন্দিত। ভবিষ্যতে একজন ভালো ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করতে চাই।

তাদের বড় বোন মাইমুনা আক্তার মিম বলেন, আমার ছোট দুই বোন মেডিকেলে চান্স পেয়েছে—এটা আমাদের পরিবারের জন্য অনেক বড় আনন্দের বিষয়। ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। আল্লাহর কাছে দোয়া করি, তারা যেন দেশ ও সমাজের জন্য কিছু করতে পারে।

স্থানীয় সমাজসেবক আব্দুল বাতেন বলেন, এই সাফল্যে আমরা গ্রামবাসী গর্বিত। তারা যেন আরো বড় সফলতা অর্জন করতে পারে—এই কামনা করি।

মা নাজমুন নাহার বলেন, আমার দুই মেয়ে মেডিকেলে চান্স পেয়েছে—এতে আমি অত্যন্ত আনন্দিত।

পিতা মশিউর রহমান বলেন, আমার তিনটি মেয়ে—কোনো ছেলে নেই। কিন্তু আমি কখনো আক্ষেপ করিনি। আমি বিশ্বাস করি, সন্তান ছেলে হোক বা মেয়ে—শিক্ষাই আসল পরিচয়। আমারও ইচ্ছা ছিল মেয়েরা ডাক্তার হবে। আল্লাহ তা'আলা সেই ইচ্ছা কবুল করেছেন। তারা যেন ভালো ডাক্তার হয়ে দেশ ও মানুষের সেবা করতে পারে—এই দোয়া চাই।

রামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রোখসানা বেগম বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকেই তারা খুব নিয়মিত ও মনোযোগী ছিল। তারা কখনো ক্লাস ফাঁকি দিত না। পাঁচ বছরের প্রাথমিক শিক্ষাজীবনে তাদের অনুপস্থিতির রেকর্ড নেই। তখনই আমি বলতাম—তারা একদিন বড় কিছু হবে।

এক সাধারণ পরিবার থেকে উঠে এসে যমজ দুই বোনের এই কৃতিত্ব শুধু ব্যক্তিগত সাফল্য নয়, বরং গ্রামীণ সমাজে মেয়েদের শিক্ষায় অগ্রযাত্রার এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে।

Google News Icon

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন