বিএনপি চারভাগ, সক্রিয় জামায়াত ও আ.লীগের অনেকেই এনসিপিতে

মাহফিজুল ইসলাম রিপন, পার্বতীপুর (দিনাজপুর)
প্রকাশ : ১২ জুন ২০২৫, ১২: ৫১

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সরগরম হয়ে উঠেছে পার্বতীপুরের রাজনীতি। সম্ভাব্য প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রস্ততি নিচ্ছেন। এবারের ঈদে সম্ভাব্য প্রার্থীরা এলাকায় নিজেদের প্রার্থীতার কথা জানান দিতে গণসংযোগ ও সভা , সমাবেশ করে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন । রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নেই কোনো তৎপরতা পার্বতীপুরে। দিনাজপুর-৫ সংসদীয় গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনি পার্বতীপুর এলাকা। স্বাধীনতা পরবর্তী এই সংসদীয় আসনে বিএনপি থেকে মো. হাজী মনসুর, জাতীয় পার্টি থেকে মো. শোয়েব আলী এবং আওয়ামী লীগ থেকে সাতবার অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

বিজ্ঞাপন

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এরই মধ্যে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা পার্বতীপুরের বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ, পথসভা, কর্মীসভা করছেন। এ সংসদীয় নির্বাচনি এলাকায় জামায়াতে ইসলামী প্রার্থী ঘোষণা করলেও বিএনপিসহ অন্য কোনো রাজনৈতিক দল এখনো দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেনি। জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছে বেশ সরবে। অপর দিকে বিএনপি বিভক্ত হয়েছে চার ভাগে। মাঠে সক্রিয় এমন চারজন বিএনপি নেতা সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে পাড়া-মহল্লায় গণসংযোগ করছেন।

গেল বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গা ঢাকা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাফিজুল ইসলাম প্রামাণিক, সাবেক পৌর মেয়র উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমজাদ হোসেন, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মোশারফ হোসেন সমাজসহ আরো অনেক নেতা । আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় বর্তমানে ভবঘুরেদের আড্ডাখানায় পরিণত হয়েছে।

আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট নেতারা পার্বতীপুরে না থাকার কারণে অনেক ছোটখাট নেতাকর্মীরা এনসিপিতে যোগদান করছে। এ ছাড়াও জাতীয় পার্টির যুব সংগঠন জাতীয় যুব সংহতির উপজেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আনসারুল ইসলাম সম্প্রতি এনসিপিতে যোগ দিয়েছেন।

বিগত প্রায় সাড়ে ১৬ বছর মাঠের রাজনীতিতে নিশ্চুপ ও নিষ্ক্রিয় থাকা পার্বতীপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এজেডএম রেজওয়ানুল হককে হঠাৎ করে আবার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় হচ্ছেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের আইন উপদেষ্টা ব্যারিস্টার একেএম কামরুজ্জামান এবং কৃষক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. জাকারিয়া বাচ্ছু ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক নুরুল হুদা বাবু নিজ নিজ সমর্থকদের নিয়ে শোডাউন, পথসভা, গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। ফলে পার্বতীপুরের নির্বাচনি এলাকার বিএনপির মনোনয়ন দৌড়ে অনেকটা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে এ জেড এম রেজওয়ানুল হক।

জামায়াতে ইসলামী থেকে গ্রীন সিগন্যাল পেয়ে স্থানীয় রাজনীতির মাঠে সক্রিয় পার্বতীপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন। প্রতিদিন পার্বতীপুরের বিভিন্ন এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন তিনি। অন্য দিকে, পার্বতীপুর উপজেলা মুখ্য সংগঠক এনসিপির প্রার্থী হিসেবে ডাক্তার আবদুল আহাদ গণসংযোগ, পথসভা, উঠান বৈঠক, মিছিল মিটিং করছেন।

এই আসনে বিএনপির রেজওয়ানুল হককে এই নির্বাচনি এলাকায় বিএনপির সম্ভাব্য চারজন সংসদ সদস্য প্রার্থী গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা হলেন, পার্বতীপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি এজেডএম রেজওয়ানুল হক, লন্ডন বিএনপির সহসভাপতি ব্যারিস্টার একেএম কামরুজ্জামান ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক নুরুল হুদা বাবু, কৃষক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. জাকারিয়া বাচ্চু। এ নির্বাচনি এলাকায় মোটরসাইকেল শোডাউন, পথসভাসহ ব্যাপক গণসংযোগ করছেন ব্যারিস্টার কামরুজ্জামান। তিনি দলের নেতাকর্মীর মাঝে অল্প দিনেই ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন। বিএনপির মাঠ পর্যায়ের ত্যাগী হেভিওয়েট নেতাকর্মীরা দলে দলে ব্যারিস্টার কারুজ্জামানের পক্ষ নিচ্ছেন। অন্য দিকে পার্বতীপুর যুবদলের সাবেক সভাপতি মাহফিজুল ইসলাম মাসুমসহ আরো অনেক নেতাকর্মী জাকারিয়া বাচ্চুর পক্ষে। ফলে তিন ভাগে বিভক্ত হয়েছে পার্বতীপুর উপজেলা বিএনপি।

পার্বতীপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এজেডএম রেজওয়ানুল হক বিগত ১৬ বছর রাজনীতির মাঠে নিষ্ক্রিয় থাকার পর হঠাৎ করে গণসংযোগ, কর্মী বৈঠক, ইউনিয়ন পর্যায়ে সভা-সমাবেশ শুরু করেছেন। অতীতে এজেডএম রেজওয়ানুল হককে দলীয় মনোনয়ন পেতে বেগ পেতে হয়নি। কিন্তু এবার ব্যারিস্টার একেএম কামরুজ্জামানের সঙ্গে মনোনয়ন দৌড়ে বেশ বেগ পেতে হবে এজেডএম রেজওয়ানুল হকের। লন্ডন বিএনপির সহসভাপতি ব্যারিস্টার এ কে এম কামরুজ্জামানের পার্বতীপুরের রাজনীতিতে আবির্ভাব বিএনপির রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণের জন্ম দিয়েছে।

ঈদের আগে তিনি পার্বতীপুরে এসে রাজনীতির মাঠে নেমেছেন। তিনি কাছে পেয়েছেন উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম শাহ, যুগ্ম সম্পাদক সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সাহাদত হোসেনসহ শতাধিক নেতাকর্মী । ব্যারিস্টার একে এম কামরুজ্জামান ঈদের আগে লন্ডনে চলে যান ।

অন্যদিকে, বিএনপি নেতা এজেড এম রেজওয়ানুল হক বিগত ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ প্রয়াত মোস্তাফিজুর রহমান ফিজারের কাছে অল্প ভোটের ব্যবধানে হারলেও জনপ্রিয়তা কমেনি বলে মনে করেন স্থানীয় বিএনপির একটি বিরাট অংশ । স্থানীয় বিএনপির অনেকেই আগামী নির্বাচনে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে এ জেডএম রেজওয়ানুলকে পছন্দের তালিকায় রেখেছেন।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত