১০৬ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৮ বছর ধরে নেই প্রধান শিক্ষক

মিজানুর রহমান রাঙ্গা, সাঘাটা (গাইবান্ধা)
প্রকাশ : ১৯ আগস্ট ২০২৫, ১৮: ৫৩

গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার ১৭১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১০৬টিতেই প্রধান শিক্ষক নেই। দীর্ঘদিন ধরে এই পদগুলো খালি থাকায় সহকারী শিক্ষকরা ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন। এতে একদিকে যেমন প্রশাসনিক কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে, অন্যদিকে বিদ্যালয়গুলোতে পাঠদান মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, অবসর, বদলি, মৃত্যু ও মামলা সংক্রান্ত কারণে ২০১৮ সাল থেকে বিদ্যালয়গুলোতে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। এর মধ্যে ৩৯টি বিদ্যালয়ে শূন্য পদে এবং ৬৯টি বিদ্যালয়ে চলতি দায়িত্বে সহকারী শিক্ষকরা ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন। দীর্ঘদিন ধরে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকরা প্রশাসনিক ও সরকারি নানা কাজে ব্যস্ত থাকায় পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

শিক্ষক ও অভিভাবকদের উদ্বেগ

ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকরা জানান, পাঠদানের পাশাপাশি প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করা কঠিন। কচুয়া ইউনিয়নের পাঠানপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রেহেনা ইয়াসমিন বলেন, তিনি ২০১৮ সাল থেকে এই দায়িত্ব পালন করছেন। একই ভাবে কচুয়াহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাইদুল ইসলাম, ঘুড়িদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আকতারা খাতুন, অনন্তপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জুলফিকার আলীসহ আরও অনেকে প্রায় ৮ বছর ধরে এই দায়িত্ব পালন করছেন।

পবনতাইর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. আ: ওয়াহাব সরদার বলেন, “চলতি দায়িত্ব কোনো পদ নয়। অথচ দীর্ঘদিন থেকে অনেক সিনিয়র শিক্ষক পদোন্নতি না পেয়ে অবসরে চলে যাচ্ছেন, যা খুবই কষ্টের।”

অভিভাবকদের অভিযোগ, প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য থাকায় এবং সহকারী শিক্ষকরা এই দায়িত্ব পালন করায় একদিকে যেমন প্রশাসনিক দুর্বলতা সৃষ্টি হচ্ছে, তেমনি সহকারী শিক্ষকের পদও খালি থাকায় পাঠদান কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এতে শিক্ষা কার্যক্রমের মান কমে যাচ্ছে।

শিক্ষা কার্যক্রমে নেতিবাচক প্রভাব

শিক্ষকদের মতে, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকদের প্রায়শই দাপ্তরিক ও সরকারি বিভিন্ন কাজে জেলা ও উপজেলায় যাতায়াত করতে হয়, যা শিক্ষার্থীদের পাঠদানে চাপ সৃষ্টি করে। এছাড়া, অন্য শিক্ষকরা সমমর্যাদার হওয়ায় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের নির্দেশনা মানতে দ্বিধা করেন, যা সামগ্রিক শিক্ষা কার্যক্রমে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি সাঘাটা উপজেলা শাখার সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান স্বপন বলেন, প্রধান শিক্ষক না থাকায় প্রশাসনিক কার্যক্রমে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া, শিক্ষকরা পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এবং অনেকেই পদোন্নতি ছাড়াই অবসর নিচ্ছেন।

প্রশাসনের বক্তব্য

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আব্দুল্লাহেস শাফি জানান, প্রধান শিক্ষকের পদগুলো শূন্য হওয়ার কারণ হলো অবসর, বদলি, মৃত্যু এবং মামলা। এসব শূন্য পদের তালিকা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত