বাঁধে বিএনপি নেতার দাপটে সরকারি গাছ কর্তন ও অবৈধ বালু-পাথর ব্যবসা

আশিস রহমান, (দোয়ারাবাজার) সুনামগঞ্জ
প্রকাশ : ১৬ অক্টোবর ২০২৫, ১৩: ৫৭
আপডেট : ১৬ অক্টোবর ২০২৫, ১৬: ০২

ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেও ছিলেন তিনি সুবিধাভোগী। ফ্যাসিস্টদের দোসরদের সাথেই ছিলো তার সার্বক্ষণিক ওঠাবসা। কিন্তু গত বছর ৫ আগস্টের সরকার পরিবর্তনের পর থেকে তিনি এখন প্রভাবশালী বিএনপি নেতা। তার দাপটে রেহাই পাচ্ছে না অর্ধশত বছরের পুরোনো ফসলরক্ষা বাঁধ থেকে শুরু করে সরকারি গাছ।

বিজ্ঞাপন

অবৈধ ভাবে বালু পাথর ব্যবসার গডফাদার হিসেবেও তার পরিচিতি রয়েছে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার সদর ইউনিয়নের পূর্ব মাছিমপুর গ্রামের আলীর ছেলে মামুন মিয়ার। ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য সচিব তিনি।

তার বিরুদ্ধে উপজেলার পাণ্ডারখাল বাঁধ অবৈধভাবে দখল করে বালু পাথর ব্যবসা করার অভিযোগ উঠেছে। শুধু অবৈধ বালু পাথর ব্যবসা-ই নয়, বৈআইনি ভাবে পান্ডারখাল বাঁধের সরকারি গাছ কর্তনের অভিযোগও রয়েছে মামুন মিয়ার বিরুদ্ধে। কিন্তু তিনি স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী বিএনপি নেতা হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কেউ প্রকাশ্যে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না। এমনকি প্রশাসনও তার বিষয়ে নিরব।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, সম্প্রতি বিএনপি নেতা মামুন মিয়া ও তার লোকজন পান্ডারখাল বাঁধের সরকারি গাছ কাটলে স্থানীয়রা প্রতিবাদ জানালে তিনি গাছ কাটা বন্ধ করেন। পরে বনবিভাগের লোকজন এসে গাছ জব্দ করে নিয়ে যায়। কিন্তু এই ঘটনার প্রায় এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত অভিযুক্ত মামুন মিয়া ও তার লোকজনদের বিরুদ্ধে কোনো ধরণের আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

এদিকে দীর্ঘদিন ধরে পান্ডারখাল বাঁধে অবৈধভাবে বালু পাথর ডাম্পিং করে মামুন মিয়ার নেতৃত্বে স্থানীয় দখলদারেরা দেদারসে ব্যবসা করে আসছেন। এসব দখলদাররা হলেন দোহালিয়া ইউনিয়ের মজুরবাজার এলাকার জিয়াউল মেম্বার, সদর ইউনিয়নের বাজিতপুর গ্রামের আলমগীর, মান্নারগাঁও ইউনিয়নের ইদনপুর গ্রামের আক্রাবুল, মিছির আলী ও চন্ডীপুর নতুন পাড়া গ্রামের রফিক মিয়া।

স্থানীয়রা বলছেন, অবৈধ দখলদারদের আগ্রাসনে অর্ধশতবর্ষী পান্ডারখাল বাঁধের অস্তিত্ব এখন হুমকির মুখে পড়েছে। বালু পাথর ডাম্পিংয়ের কারণে বাঁধের মূল্যবান সরকারি গাছপালা মরতে বসেছে। বাঁধের প্রাকৃতিক পরিবেশ ও প্রতিবেশ এখন অস্তিত্ব সংকটে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি নেতা মামুন মিয়া তার বিরুদ্ধে আনিত সকল অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, পান্ডারখাল বাঁধে আমার কোনো বালু-পাথরের ব্যবসা নাই। তবে সরকারি রাস্তার কাজের জন্য বালু এনে এখানে মজুত রাখা হয়েছে। কিছু আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আমার বিরুদ্ধে এসব অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমি আওয়ামী লীগের সময় কোনো সুবিধাভোগী ছিলাম না। একজন লোকাল ব্যবসায়ী হিসেবে আওয়ামী লীগ-বিএনপি সবাই আমার চোখে সমান। সবার সাথেই আমার সুসম্পর্ক আছে।

গাছ কাটার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইউএনও এবং ফরেস্টারকে অবগত করেই স্থানীয়দের নিয়ে সবাই সম্মিলিত ভাবে একটা মরা গাছ কেটে লেবারদের থাকার শেড তৈরি করেছি।

তবে দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অরুপ রতন সিংহ জানান, পান্ডারখাল বাঁধের গাছ কাটার বিষয়ে আমাদের কাছ থেকে কোনো ধরনের অনুমতি নেওয়া হয়নি। বনবিভাগকে নির্দেশ দিয়েছি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়ার জন্য। পান্ডারখাঁল বাঁধে নতুন করে কোনো স্থাপনা নির্মাণ করা যাবেনা। ইট, বালু, পাথর ডাম্পিং করতে নিষেধ করে এসেছি। বাঁধের ওপর এখন যাদের বালু-পাথর ও স্থাপনা রয়েছে তারা এসব সরানোর জন্য ৭ দিনের সময় চেয়েছে। তাদেরকে সময় দেওয়া হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে এসব অন্যত্র না সরানো হলে পরবর্তীতে মোবাইল কোর্ট করে জব্দ করা হবে।

দোয়ারাবাজার উপজেলা বন বিভাগের বিট কর্মকর্তা আইয়ুব খান জানান, আমরা সরেজমিনে গিয়ে গাছ জব্দ করেছি। অভিযুক্ত মামুনসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গভীর রাতে বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে ওএমএসের চাল বিক্রির অভিযোগ

শপথ নিলেন পিএসসির নতুন সদস্য আফতাব হোসেন

মোটরবাইক নিষেধাজ্ঞায় বিলিয়ন ডলারের বাজার হারানোর শঙ্কায় ভিয়েতনাম

বিএনপি নেতার চাপে জুলাই হত্যা মামলার দুই আসামিকে ছেড়ে দিলেন ওসি

সাবেক আইজিপি মামুন অন্যের ঘাড়ে বন্দুক রেখে বাঁচার চেষ্টা করছেন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত