সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলায় একসময় বর্ষার পানিতে হাওর-বিলে মৎস্যসম্পদ ছিল প্রাচুর্যময়। চ্যাং, ট্যাংরা, পুঁটি, কৈ, শিং, মাগুর, বাইম, খৈলসা, রানী, মলা, ঢেলা, মেনি ইত্যাদি দেশীয় মাছ এখন যেন স্মৃতিচিহ্ন মাত্র। নির্বিচার নিধন, রাসায়নিক দূষণ, বাঁধ নির্মাণ ও প্রজনন মৌসুমে অনিয়ন্ত্রিত মাছ ধরা এই সংকটকে ঘনীভূত করে তুলছে। হাওরে দেশীয় মাছের সংকটের প্রভাব পড়েছে স্থানীয় মাছ বাজারগুলোতে। বাজারে জায়গা দখল করে নিয়েছে খামারপালিত চাষের পাঙ্গাস, তেলাপিয়া। মাছপ্রেমীদের হতাশা—‘মাছ আছে, স্বাদ নাই!’
কাংলার হাওরপাড়ের জেলে শুক্কুর আলী আক্ষেপ করে বলেন, আগে তো বর্ষায় হাত দিলেই কৈ উঠতো। এখন দিনভর জাল ফেলেও দুই-চারটা চ্যাং পাইলেই অনেক!
দেখার হাওরের জেলে মনাফ মিয়ার কণ্ঠে হতাশা, মাছ ধরেই সংসার চলতো, এখন সংসারই চলেনা ঠিকমতো। আগের মতো মাছ আর নাই।
উপজেলা মৎস্য অফিসের তথ্য অনুযায়ী, হাওরের স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ ব্যাহত হচ্ছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের কারণে। এতে মাছের প্রজনন মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। প্রজনন মৌসুম মে মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে জুনের শেষ পর্যন্ত এই সময়ে মাছ ধরা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ থাকার কথা থাকলেও তা কেউ মানছে না।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তুষার কান্তি বর্মন বলেন, চায়না রিং, কারেন্ট ও বেড় জালের মতো নিষিদ্ধ সরঞ্জাম ব্যবহার এবং পানি শুকিয়ে মাছ ধরা দেশীয় মাছের অস্তিত্ব ধ্বংস করছে। স্থানীয়দের আরও সচেতন না হলে এই ধারা থামানো সম্ভব নয়।
দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অরুপ রতন সিংহ জানান, দেশীয় মাছ শুধু খাদ্য নিরাপত্তা নয়, এটি আমাদের সংস্কৃতি ও পরিবেশের অংশ। খুব শিগগিরই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে অবৈধ জাল ও মাছ ধরা রোধে অভিযান শুরু হবে।

