জকিগঞ্জে সুরমার ভয়াবহ ভাঙনে বিপন্ন জনজীবন‎

এখলাছুর রহমান, জকিগঞ্জ (সিলেট)
প্রকাশ : ০৪ নভেম্বর ২০২৫, ০৯: ৫৪
সুরমা নদীর ভাঙনে নদীতে বিলীন হওয়ার পথে বাড়িঘর ও ফসলি জমি। আমার দেশ

সিলেটের জকিগঞ্জ সুরমা নদীর ভয়াবহ ভাঙনে নদীতে বিলীন হওয়ার পথে শত শত বাড়িঘর, ফসলি জমি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ ও বাজার। ভিটেমাটি ও জমি হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে শতশত পরিবার। ভাঙন রোধে নেওয়া হচ্ছে না কোনো উদ্যোগ।

জানা গেছে, ইতোমধ্যে বারইগ্রাম এলাকাকার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বেশকিছু বাড়িঘর নদীতে চলে গেছে। স্থানীয় জনসাধারণ আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, ‘অতি দ্রুত মেরামত কাজ সম্পন্ন না হলে অচিরেই পাঁচটি গ্রাম নদীতে বিলীন হয়ে যাবে। এ নিয়ে বারাকুলি, চককোনাগ্রাম, পরচক ও বারইগ্রাম এলাকার মানুষের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।

বিজ্ঞাপন

সরেজমিন পরিদর্শনে গেলে দেখা যায়, প্রায় ৫০০ মিটার এলাকা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। নদীর তীরবর্তী বহু ঘরবাড়ি এখন ভাঙনের মুখে। বিশাল বিশাল ভাঙনে আশপাশের ফসলি জমিও নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে। গ্রামের অসংখ্য পরিবার বাড়িঘর হারিয়ে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। আবার অনেকে রাস্তার পাশে বা উঁচু জায়গায় তাঁবু টানিয়ে অস্থায়ীভাবে বসবাস করছেন।

‎বারাকুলি গ্রামের বাসিন্দা মোস্তাক আহমেদ বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমাদের ফসলি জমি ও গাছপালা রাক্ষুসে সুরমা গিলে খেয়েছে। এখন থাকার জায়গাটুকু নিয়েও শঙ্কায় আছি। দিনরাত নদীর গর্জনে ঘুমাতে পারি না। একই গ্রামের তাজুল ইসলাম জানান, অনেক মন্ত্রী-এমপি এসে ভাঙন রোধের আশ্বাস দিলেও কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেননি। আমরা এখন দিশেহারা।’ ‎এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তি জমির আলী বলেন, ‘সুরমার ভাঙন মোকাবিলায় কার্যকর উদ্যোগ না নিলে জকিগঞ্জের এ ঐতিহ্যবাহী জনপদ ধীরে ধীরে মানচিত্র থেকেই হারিয়ে যেতে পারে। তিনি বলেন, অবিলম্বে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে এ এলাকার বিপন্ন জনগোষ্ঠীকে চিন্তামুক্ত করার ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

‎স্থানীয়দের দাবি, জরুরি ভিত্তিতে ব্লক ফেলে বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু না করলে পুরো গ্রাম বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এদিকে ফসলি জমি নদীতে তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকরা দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। নদী তীরবর্তী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আর মসজিদও এখন হুমকির মুখে রয়েছে।

‎ভয়াবহ এ ভাঙনের বিষয়ে বারহাল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদ চৌধুরী বলেন, ‘তড়িৎ ব্যবস্থা না নিলে বারাকুলি, চক ও পরচক এলাকার হাজার হাজার মানুষ সর্বস্বান্ত হয়ে পড়বে। ভাঙন এখন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।’ স্থানীয় ইউপি সদস্য মিফতা আহমেদ বলেন, ‘জেগে জেগে রাতদিন পার করছি । ঘরবাড়ি হারানোর ভয়ে চোখে ঘুম নেই।’

‎জানতে চাইলে সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী জসিম উদ্দিন বলেন, ‘আমি এলাকা পরিদর্শন করেছি। এলাকাটির অবস্থা সত্যিই ভয়াবহ। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। দ্রুত পদক্ষেপ নিতে আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত