ডিবিএর আলোচনা সভায় বক্তারা

বহুজাতিক কোম্পানিকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত করতে হবে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার
প্রকাশ : ২৬ জুন ২০২৫, ১০: ৩৫
আপডেট : ২৬ জুন ২০২৫, ১০: ৩৬

যেসব বহুজাতিক কোম্পানি এ দেশে ব্যবসা করছে সেসব কোম্পানির মুনাফা পাওয়ার অধিকার এ দেশের জনগণের রয়েছে। শুধু অর্থের প্রয়োজনেই বহুজাতিক কোম্পানি বাজারে শেয়ার ছাড়বে, এটি ঠিক নয়। কোম্পানিগুলোরও এ দেশের জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা রয়েছে। দেশের শেয়ারবাজারের উন্নয়নে বহুজাতিক কোম্পানিকে তালিকাভুক্ত করতে হবে।

গতকাল বুধবার ডিএসই ব্রোকারেজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ) আয়োজিত ‘পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী। রাজধানীর নিকুঞ্জে অবস্থিত ডিএসই ভবনে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ, ডিএসই চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম, সিডিবিএল চেয়ারম্যান তপন চৌধুরী, ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বারের প্রেসিডেন্ট জাভেদ আকতার। ডিবিএ প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলামের সঞ্চালনায় মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন ডিবিএর সাবেক সভাপতি আহমেদ রশীদ লালী, শাকিল রিজভী, ডিএসই পরিচালক মিনহাজ মান্নান, বিএমবিএর সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ হাফিজ প্রমুখ বক্তব্য দেন।

বিজ্ঞাপন

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. আনিসুজ্জামান বলেন, বিগত দিনে কোনো সরকার শেয়ারবাজারকে অর্থনীতির মূলধারায় নিয়ে আসার কথা বিবেচনা করেনি। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার করছে পুঁজিবাজারেও সংস্কার কাজ করছে। এতে দীর্ঘ মেয়াদে বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। সংস্কার একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া এবং এতে ইতিবাচক ঘটনা যেমন ঘটতে পারে তেমনি নেতিবাচক প্রভাবও পড়তে পারে। তবে আমরা ভালো কিছু হবে বলে আশাবাদী। শেয়ারবাজারে নেগেটিভ ইক্যুয়িটির সমস্যা সমাধান করার আশ্বাস দেন তিনি।

বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ বলেন, গত ১৫ বছরে দেশের অর্থনীতি ধ্বংসের জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। এটা একটা মিরাকেল। শেয়ারবাজার নিয়েও আমরা কাজ করছি। মার্জিন রুলস, আইপিও রুলস ও মিউচুয়াল ফান্ড রুলস চূড়ান্ত হওয়ার পথে। এগুলো আইনিরূপ পেলে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ সংস্কার সম্পন্ন হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। যেসব কোম্পানি মুনাফা নিয়ে যায় তাদের দায়বদ্ধতা রয়েছে জানিয়ে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, তাদের উচিত জনগণের সঙ্গে তাদের মালিকানা শেয়ার করা।

দেশের শেয়ারবাজারের উন্নতির জন্য ভালো কোম্পানির তালিকাভুক্তির কোনো বিকল্প নেই উল্লেখ করে ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, বহুজাতিক কোম্পানি কোটি কোটি টাকা মুনাফা করছে। কিন্তু জনগণকে তাদের সে মুনাফার অংশীদার করছে না। শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে জনগণকে বহুজাতিক কোম্পানির মালিকানা দিতে হবে। আপনারা ব্যবসা করবেন কিন্তু মালিকানা দেবেন না, এটা হতে পারে না।

বিভিন্ন দেশে বহুজাতিক কোম্পানির শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, সেসব দেশে যদি তারা শেয়ার ছাড়তে পারে তাহলে আমাদের দেশে কেন তারা ছাড়বে না? কোম্পানিগুলো বলছে, তাদের টাকার দরকার নেই এজন্য বাজারে শেয়ার ছাড়ছে না। তাদের এ ধরনের কথা ঠিক নয়। জনগণের ওইসব কোম্পানির প্রতি ইন্টারেস্ট রয়েছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এসব বহুজাতিক কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়েছে আর আমাদের দেশে হয় না। আপনি (ড. আনিসুজ্জামান) তাদের ডাকুন। তারা (বিদেশি কোম্পানি) কী বলতে চায় শুনুন। প্রয়োজনে তাদের টেক্স কমিয়ে আরো সুবিধা দিন। তারপরও তাদের শেয়ার ছাড়তে হবে। জাংক শেয়ার বা রদ্দি মাল দিয়ে শেয়ারবাজারকে সাসটেইন করা যাবে না।

সরকারি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ছাড়ার বিষয়ে নির্দেশনা থাকলেও কেউ সেই নির্দেশনা মানছে না জানিয়ে অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, চিঠি চালাচালি করে কিছু হবে না। আপনি (প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামানকে উদ্দেশ্য করে) তাদের ডাকুন। তারা যদি কথা শুনতে না চায় তাহলে তাদের সরিয়ে দিন।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত