ঋণের প্রতিশ্রুতি কমল ৫৮ শতাংশ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার
প্রকাশ : ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১৯: ২৫

বাংলাদেশের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে বিদেশি উন্নয়ন সহযোগীরা ঋণের প্রতিশ্রুতি, অর্থছাড় কমিয়ে দিয়েছে। বিপরীতে আগের নেওয়া ঋণের পরিশোধের চাপ প্রতি মাসেই বাড়ছে। সাধারণত প্রকল্প বাস্তবায়ন অগ্রগতির ওপর নির্ভর করে বিদেশি ঋণের অর্থছাড়। কিন্তু বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বাস্তবায়নের অবস্থা ইতিহাসে সর্বনিম্ন অবস্থানে। উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন থমকে যাওয়ায় পিছিয়েছে উন্নয়ন সহযোগীরা।

বুধবার বিদেশি ঋণ সহযোগিতার মাসিক হালনাগাদ প্রতিবেদন প্রকাশ করে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। এতে দেখা যায়, মার্চ শেষে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে ৪৮০ কোটি ডলারের কিছু বেশি অর্থছাড় করতে পেরেছে বাংলাদেশ। এ অর্থছাড় আগের বছরের তুলনায় ১৪ দশমিক ৬১ শতাংশ কম। তাছাড়া ঋণের প্রতিশ্রুতিও এসেছে মাত্র ৩০০ কোটি ডলারের, গত বছরের তুলনায় তা ৫৮ শতাংশ কম। অর্থাৎ বিদেশি উন্নয়ন সহযোগীরা দেশের এ মুহূর্তে ঋণ সহায়তা কমিয়ে দিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগীদের মধ্যে রয়েছে বিশ্বব্যাংক, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি), এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ব্যাংক (এআইআইবি), জাপানের জাইকা, ভারত, চীন ও রাশিয়া।

চলতি অর্থবছরের শুরুতে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে এক লাখ কোটি টাকা বিদেশি ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছিল সরকারের। সংশোধিত উন্নয়ন কর্মসূচিতে লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ৮১ হাজার কোটি টাকায় আনা হয়। তবে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের দুর্বলতার কারণে লক্ষ্যমাত্রার ধারেকাছেই নেই বাংলাদেশ।

বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) তথ্যানুযায়ী, মার্চ শেষে বাংলাদেশের এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ৩৬ দশমিক ৬৫ শতাংশ। এর চেয়ে কম এডিপি বাস্তবায়নের তথ্য সংস্থাটির ওয়েবসাইটে নাই। বছর শেষে মূল এডিপির চেয়ে লাখ কোটি টাকার এবং সংশোধিত এডিপির চেয়ে প্রায় ৬০-৭০ হাজার কোটি টাকা করচ কম হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

ইআরডির হালনাগাদ তথ্যে দেখা যায়, মার্চ শেষে অর্থছাড় হয়েছে মাত্র ৪৮০ কোটি ডলার, গত বছরের একই সময়ে অর্থছাড় হয়েছে ৫৬৩ কোটি ১৬ লাখ ডলারের বেশি। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে অর্থছাড় কমেছে ১৪ দশমিক ৬১ শতাংশ। ৪৮০ কোটি ডলার বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রতি ডলার ১২২ টাকা হিসেবে ৫৮ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছর শেষে বিদেশি ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ৮১ হাজার কোটি টাক অর্থাৎ বাকি ৩ মাসে আরও ২২ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা অর্থছাড় করতে হবে।

উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের দুর্বলতার কারণে ঋণ প্রতিশ্রুতির ক্ষেত্রেও অনেকটা পিছিয়েছে উন্নয়ন সহযোগীরা। মার্চ শেষে নয় মাসে বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলো ঋণ প্রতিশ্রুতি দিয়েছে মাত্র ৩০০ কোটি ডলার। গত বছরের একই সময়ে সংস্থাগুলোর কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি এসেছিল ৭২৬ কোটি ২১ লাখ ডলারের বেশি। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে ঋণ প্রতিশ্রুতি কমেছে ৫৮ শতাংশের বেশি।

অর্থছাড় ও ঋণ প্রতিশ্রুতি দুটো কমার পাশাপাশি বাংলাদেশের আগের নেওয়া ঋণ পরিশোধের চাপ বাড়ছে প্রতি মাসেই। চলতি অর্থবছরের নয় মাসে ঋণ পরিশোধ হয়েছে মাত্র ৩২১ কোটি ২০ লাখ ডলারের, বাংলাদেশি মুদ্রায় তা ৩৮ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছিল ২৫৭ কোটি ১৫ লাখ ডলারের, দেশীয় মুদ্রায় তা ২৮ হাজার ২৮১ কোটি টাকা।

আগামী অর্থবছরে বাংলাদেশের আগের নেওয়া ঋণের পরিশোধের চাপ আরও বাড়বে। রিজার্ভ সংকট থাকায় বর্তমানে ঋণ পরিশোধে হিমশিম খেতে হচ্ছে সরকারকে। যদিও গত কয়েক মাস দেশের রপ্তানি আয় ও প্রবাসী আয় ধারাবাহিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় রিজার্ভ কিছুটা বেড়েছে। মার্চ মাসে ঈদের আগে দেশের মোট বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ ২৫ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। এই মাসে রেকর্ড সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স প্রবাহের কারণে রিজার্ভ বেড়েছে। তবে, আমদানি বিল নিষ্পত্তির ফলে রিজার্ভ মাসিক ভিত্তিতে প্রায় ৩ শতাংশ কমেছে এ মাসে।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত